টাকা না দিলে জীবনেও পাবিনা পাসপোর্ট
সুমিত সরকার সুমন
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে দালাল এবং পুলিশ ভেরিভিকিশনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারনে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। অফিস কর্মকর্তাদের সাথে দালালদের সরাসরি সংযোগ থাকার কারনে প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়ছেন পাসপোর্ট গ্রাহকরা। পাসপোর্টের সাথে সবকিছু সংযুক্ত থাকলেও নানা অজুহাত দিয়ে অর্থ বিনিময়ে চলছে কার্যক্রম। প্রতিদিনই পাসপোর্ট অফিসে চলছে অনিয়ম এবং অভিযোগের বাস্তব ও অভিনব চিত্র।
পাসপোর্ট গ্রাহক আমিনুল ইসলাম বাবুল জানান, পুলিশ পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করতে গেলে ৫০০-২০০০টাকা তাদের খরচ দিতে হয়। খরচ দিতে না চাইলে তারা হুমকী দিয়ে নানা বাক্য বলে। আমার বাসায় পুলিশ আসলে আমি দিতে না চাইলে পুলিশ বলে, টাকা না দিলে জীবনেও পাবিনা পাসপোর্ট, রিপোর্ট খারাপ দিয়ে দিব। নিরুপায় হয়ে আমি অতিরিক্ত টাকা দিয়েই পাসপোর্ট করেছি।
সিরাজদিখানের শেখেননগর থেকে দালাল ধরে আসা পারভেজ হোসেন জানান, গ্রাম থেকে ৫ হাজার টাকা কনট্রাক করে পাসপোর্ট করতে এসেছি। পাসপোর্ট অফিসের আনসার কর্মকর্তা খায়রুলের সাথে টাকা নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সাধারণ পাসপোর্টে ৩,৪৫০টাকা নির্ধারিত জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে ভিন্ন চিত্র। ৫ হাজার টাকা দিয়ে দালালদের হয়ে আসলে দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়া যায় এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সহজ হয়।
পাসপোর্ট গ্রাহক রাসেল জানান, পাসপোর্টের করতে সংযুক্ত ডকুমেন্টগুলো নিয়ে অফিসে আসলে তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়। হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন নিয়ে আসলে ফিরিয়ে দেয় কিন্তু দালাল হয়ে আসলে তা বৈধ হিসাবে গ্রহণ করে। আমি দালাল ধরে ৭ হাজার টাকা চুক্তি করে এসেছি খুব সহজেই হয়ে গেছে এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে না গিয়েও ভাল রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে।
পাসপোর্ট নিতে আসা গ্রাহক আশা জানান, আমার শশুড় ৫ হাজার টাকা চুক্তি করেছে। ৫০০টাকা দিয়ে দিয়েছি, পুলিশ বাসায় আসেনি কাজ হয়ে গেছে। আমি বেশি কিছু জানিনা আমার শশুড় দালালের সাথে চুক্তি করেছে, এখন পাসপোর্ট পেয়েছি।
সিরাজদিখান থেকে আসা শাবিত্রী জানান, আমরা তিনজন পাসপোর্ট করতে এসেছি। দালাল ধরে ১৯,৫০০ টাকা কনট্রাক করে এসছি খুব দ্রুত এবং সহজেই হয়ে গেছে। এখন আমরা পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।
পাসপোর্ট করতে আসা সৌরভ মন্ডল জানান, চেয়ারম্যানের সিল ও সাক্ষরসহ ফর্মটি সত্যায়িত করে এনেছি। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা বলছে, সে কিভাবে সত্যায়িত করে, এটি হবে না বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। পাসপোর্ট অফিস এলাকার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান দর্পন সত্যায়িত করতেও ২০০টাকা নিয়েছে।
এই ব্যপারে পাসপোর্ট অফিস এলাকার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান দর্পন জানান, আমি সত্যায়িত করে দিয়েছি কিন্তু তা টাকার বিনিময়ে না। দালাল ধরে এসে তারা প্রতারিত হয়ে টাকা দিচ্ছে, এমনটি হলে আমি ব্যবস্থা নিব।
পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক হালিমা খাতুন জানান, প্রতিদিন এই পাসপোর্ট অফিসে ৭০-৮০টি পাসপোর্ট জমা পড়ে এবং ডেলিভারিও প্রতিদিন ৭০-৮০টি হয়। বর্তমানে কম পাসপোর্ট সিজনে ১০০-১৫০টি জমা পড়ে। আমি যোগদান করার পর প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। আমার অফিসের কোন কর্মকর্তা যদি দালালের সাথে জড়িত থাকে কিংবা অর্থের কোন লেনদেন থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সুপারের সাহায্যে আমি পুলিশ নিয়ে পাসপোর্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দালাল নির্মূল অভিযান পরিচালনা করি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি আমার অবগত নয়। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করতে পুলিশের টাকা নেওয়ার ব্যবপারটি আমি খতিয়ে দেখছি। কোন পুলিশ সদস্য যদি অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার মোবাইল সবসময় এর জন্য খোলা আছে, পরিচয় গোপণ করে আমি আমার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। এর আগেও আমি এক মহিলার মোবাইল পেয়ে এই ব্যপারে তার সহায়তা করেছি ও জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।
অন্যদিকে দালাল এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের টাকা ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দালালদের সাথে পুলিশের সংযোগ সরাসরি থাকায় দেখা দিয়েছে গ্রাহক হয়রানি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: