রানা প্লাজার ভূতের সাথে বসবাস!

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৭, ০৯:৩৫ এএম

রানা প্লাজা নামটা মনে হলেই যেন মনে কাঁপন ধরে যায়। হাজার হাজার মানুষের আহাজারিতে আজও সে এলাকা যেন কাঁদে। সেদিন ধ্বংসস্তূপ থেকে যারা বেঁচে ফিরেছে অনেকে তাদের সৌভাগ্যবান মনে করেন বটে। কিন্তু আসলেই কি তারা নিজেদের সুখী হিসেবে ফিরে পেয়েছেন?

সেদিন পাঁচ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকসহ রানা প্লাজা ধ্বস হয়। প্রথম দুই দিন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই আর্মি, ফায়ার সার্ভিস ও সাধারণ মানুষের উদ্ধার প্রচেষ্টা চলে। তৃতীয় দিন থেকে মানুষের দয়ায়, ত্রানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আসা শুরু হয়। ততদিনে অধিকাংশ গুরুতর আহত শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। মৃত শ্রমিকদের লাশের গন্ধে বাতাস ভারী। উদ্ধার কাজে আর্মির দাড়িয়ে থাকা, বাশি বাজানো, ফায়ার সার্ভিসের দুই/তিনটি দিক থেকে কাজ করা। বিশেষজ্ঞ মতামত, সমন্বয়, পরিকল্পনা, ব্যাবস্থাপনার বালাই না থাকা। কেবল চারপাশ থেকে সাধারণ মানুষ, শ্রমিকদের আপ্রাণ চেষ্টায় হাতড়ে হাতড়ে কারো হাত কেটে, কারো বা পা কেটে কাউকে আস্ত রেখে, কিছু জীবন্ত শ্রমিকক, কিছু খন্ডিত, বিকৃত, গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

২৬ বছর বয়সী আসমা বেগম সেদিনের সেই ভয়াবহ দুর্গ থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। ভবন ধ্বসে পড়ার পর ৪র্থ দিন আসমাকে জীবন্ত বের করে আনা হয়। কিন্তু তার এখন আর বেঁচে থাকার আসা নেই। কোন ইচ্ছা, কোন ক্ষুধা, কোন মোহ তাকে আর পিছু ডাকে না। সে এখন আর পরিবার আর বন্ধুদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে না। সারাক্ষণ শুধু চিন্তা করে বেড়ায়, সেদিন কেন সে মারা গেল না? এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু ভাল ছিল।

আসমা বেগম বলেন, আমি নিজে নিজে চিন্তা করি আমার মা-বাবা কেন আমায় জন্ম দিয়েছিল? আমি যেন নির্মম এই দুনিয়ার অনাহারে, অর্ধাহারে, দুঃখী হয়ে বাস করতে পারি, তাই! রানা প্লাজা ধ্বংসের পর থেকে আমার নিজেকে মৃত মনে হয়। এভাবে মরে মরে বেঁচে কি লাভ?

&dquote;&dquote;

এক ছেলে ও এক মেয়ের মা আসমা বেগম নিজের শিশুকে একা একা লালন পালন করছেন। ৮তলা ভবন ধ্বসের পর ৪ বছর পাড় হয়ে গেলেও এখনও নিজেকে খুব করুন মনে হয় তার। এখনও রাতে ঘুমাতে পারে না তিনি। আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ বসে থাকলেও তার মাথায় শুধু সেই ভয়ানক আহাজারির চিন্তা চলতে থাকে।

আসমা এখন আর গার্মেন্টসে কাজ করতে আগ্রহী নয়। তিনি এখন সাভারে বিভিন্ন ঘরে কাজ করে থাকেন। তিনজনের সংসার একা কাঁধে তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল না থাকার পরও তিনি কোন চিকিৎসাবিদের কাছে যাননি। অবশ্য এসব চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য নাই তার। তার শারীরিক প্রশান্তির জন্য তাকে প্রতিদিন ঘুমের ঔষধ দেয়া হয়েছিল, সে ঘুমের ঔষধ খেয়েই দিনানিপাত শুরু করেছিলেন।

রানা প্লাজা যেমন মায়ের বুক খালি করে নিয়ে গেছে, তেমনি ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রীসহ আপনজন হারানোর বেদনা সঙ্গী করে নিয়ে এসেছিল। সেখান থেকে যারা না ফেরার দেশে চলে গেছে, তারা তো গেছেন ই, কিন্তু যারা বেঁচে ফিরেছে, তারাও মৃতের ন্যান বাস করছেন। কেউ সুখে নেই তারা। অবহেলায়, অবলীলায় তারা মৃত্যুর পথ হাতড়ে বেড়ায়।

তবে এতো বড় এক ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণ ও কম হয়নি। রানা প্লাজা ধসের জন্য সে সময় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতিকেই দায়ি করছিল সুশীল সমাজ ও আহত শ্রমিকরা। তাদের দাবি ছিল, ভবনটি ধ্বসের ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল ৪ ও ৫ তলার কয়েকটি পিলারে। যা দেখে শ্রমিকরা কর্মস্থল থেকে নেমে আসে মহাসড়কে। এমন সংবাদের পর সেখানে ছুটে যান স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। তখন যদি ভবনটি খালি করা হতো তা হলে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারতো।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: