দু-এক টান দিলে কিছুই হবে না, এটাতো ফ্যাশন

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ০২:০৪ পিএম

ধূমপান এক প্রকার আসক্তি, যেটাকে বর্তমান যুগের ফ্যাশনও বলা হয়। যারা সিগারেট খায় না অনেকেই চায় জোর করে তাকে সিগারেট ধরিয়ে দিতে। প্রয়োজনে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হলেও তাকে সিগারেট কিনে দেয়। অনেকেই বলে থাকে, ‘দু-এক টান খেলে কিছুই হবে না, এটাতো ফ্যাশন’।

ধূমপানের সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ তা জানা সত্যেও ধূমপান করছে। ধূমপানের ফলে শরীরের প্রায় সব অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে হার্ট বা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি অনেক বেশী হয়। ধূমপানের ফলে হৃদযন্ত্রের প্রধান যে অসুখ হয় তা হচ্ছে করোনারী হৃদরোগ। হঠাৎ মৃত্যুর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ করোনারী হৃদরোগ।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধূমপানের প্রতি আসক্ত। ছোট-বড় মুরুব্বি, মধ্য বয়স্ক এমনকি মেয়েরাও এখন ধুমপান করছে। কেউ ফ্যাশন মনে করে সিগারেট খায়, কেউ বা কি কারণে খাচ্ছে তা নিজেই জানেন না।

শামিম মিরপুরের এক স্কুলের ১০ম শ্রেণীতে পরে তার মতে ধূমপানে না করলে নিজেকে স্মার্ট মনে হয়না। সিগারেট খাওয়া কে বর্তমান যুগের ফ্যাশন মনে করছেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির সিনথিয়া (ছদ্ধনাম)। আর যে সিগারেট খায় সে আবশ্যই আধুনিক বলে মনে করছেন তিনি।

১৫ বছর ধরে ধূমপান করছে মো: করিম মিয়া তিনি মিরপুর ১০ এ থাকেন কেন সিগারেট খান জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সখের বসে ১৫/১৬ বছর আগে বিড়ি টানা শুরু করি এর পর আর ছাড়া হয়নি।

বাঙ্গলা কলেজের এক শিক্ষক বিডি২৪লাইভকে জানান, বর্তমান সময় ধুমপান প্রখট আকার ধারণ করেছে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ। এখন থেকে এর প্রতিবাদ না করতে পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

তিনি বলেন, এর থেকে যুব সমাজকে ফেরাতে হবে। তা না হলে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাবে এরা। আর এর জন্য সরকারকে আবশ্যই উদ্যোগ নেওয়া দরকার শুধু সরকার না আমাদের সকলকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত সিগারেট এক প্রকার আসক্তির বস্তু। কিন্তু আমাদের সমাজে এটি বৈধ। প্রকাশ্য করছে ধূমপান।

গবেষণায় দেখা গেছে সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিরাজমান।

নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের (পরোক্ষ ধূমপান) প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৬,০০,০০০ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ১,৬৫,০০০-ই হলো শিশু। শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নিউমোনিয়া ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে।

এছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগও দেখা দেয়। গবেষণায় এও বেরিয়ে এসেছে যে, পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় নারীর উপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮১,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করেন।

এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৪০% শিশু, ৩৩% অধূমপায়ী পুরুষ এবং ৩৫% অধূমপায়ী নারী রয়েছেন। তাতে এও ফুটে ওঠে যে, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষ।

ধূমপান এর প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিক উদ্যোগ যেমন দরকার তেমনি আইনী উদ্যোগ দরকার বাংলাদেশে এ বিষয়ে আইন থাকলেও তেমন কার্যকর নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশে প্রচলিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ৪ ধারা অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপানের ফলে জরিমানা হিসেবে প্রথমবার অনধিক ৩ শত টাকা এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী প্রতিবারের জন্য দ্বিগুন টাকা দিতে হয়।

এছাড়া ১০ধারা অনুযায়ী সিগারেট, বিড়ি ইত্যাদি তামাকজাতীয় দ্রব্যের মোড়কে 'ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর' কিংবা 'ধূমপান হৃদরোগের কারণ' লেখা ও ক্ষতি জনিত ছবি বাধ্যতামূল।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: