বকশিস নাকি সমঝোতা?

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৭, ০৯:৪০ পিএম

আব্দুল্লাহ আল মামুন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বকশিস শব্দটি এখন আমাদের সমাজের প্রচলিত ও অতিপরিচিত একটি শব্দ। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। পরিবার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই শব্দের প্রচলন ব্যাপক। তবে সুনির্দিষ্টভাবে এই শব্দের সংজ্ঞা দেয়া খুব কঠিন। আমাদের প্রচলিত সমাজে এই বিষয়টিকে কেউ ইতিবাচকভাবে দেখেন আবার কেউ দেখেন নেতিবাচক ভাবে। তবে বিষয়টি বকশিস নাকি সমঝোতা এ নিয়ে নানা বিতর্ক আছে।

বিশেষ করে আমাদের দেশে সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই শব্দটির ব্যবহার অধীক হারে লক্ষ্য করা যায়। এসব উৎসবকে ঘিরে দেশের সড়ক, রেল, নৌ-পথের যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিস বা অতিরিক্ত ভাড়ার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আদায় করা হয়। প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথের যাত্রীরা অস্বাভাবিক হারে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানির শিকার হয়।

স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় এ নৈরাজ্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের উপর নির্দেশনা থাকার পরও তা কার্যকর হচ্ছে না। ঐ নির্দেশনায় গাড়ীতে ও বাস কাউন্টারে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে রাখার আদেশও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের উপর। সরকারের সংশ্লিষ্টদের উপর প্রতি ৩ মাস পরপর আদালতকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হলো তাঁর একটি প্রতিবেদনও দেয়ার আদেশ রয়েছে। এতকিছুর পরও দিনে-দুপুরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে দুরপাল্লার বাস ও লঞ্চ গুলো।

বিভিন্ন অখ্যাত অপরিচিত কোম্পানীর বাসগুলো পাল্লা দিয়ে বাড়িয়ে যাচ্ছে ভাড়া। আর এর সাথে নামী দামী কোম্পানীর পরিবহণের সুনাম সুখ্যাতিও নষ্ট হচ্ছে।

এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঈদের ৫ দিন আগে থেকে ঈদের ১০ দিন পর পর্যন্ত ১৫ দিনে সড়ক, নৌ-পথে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। রেলপথে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ট্রেনের আগাম টিকিট হাতিয়ে নিয়ে চিহ্নিত কালোবাজারীরা একই সময়ে শত কোটি টাকার বেশি লুটে নেয়।

আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি বিষয় হলো পাত্রী দেখে বকশিস দেয়া। বিয়ের পূর্বে ছেলে বা ছেলে পক্ষের লোক মেয়েকে দেখে টাকা, আংটি ইত্যাদি বকশিস দিয়ে থাকেন। বকশিসের টাকার পরিমাণের ক্ষেত্রেও একটি প্রচলন রয়েছে। সাধারণত নিম্নবিত্ত হলে ৫০০, মধ্যবিত্ত হলে ১০০০ উচ্চবিত্ত হলে ১৫০০ বা তারচে বেশি হয়ে থাকে। এর সঙ্গে অনেকে আবার ভাঙতি ১ টাকা সম্পৃক্ত করে ৫০১, ১০০১ বা ১৫০১ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় আরও একটি বিষয় হলো মেয়ে পছন্দ হলে যে পরিমাণ টাকা দেয়া হয়, পছন্দ না হলে এর অর্ধেক বা নাম মাত্র কিছু দিয়ে কেটে পড়া হয়। বুদ্ধিমান মেয়ে বা তার পরিবার এ থেকেই বুঝে নিতে পারেন ছেলে পক্ষ তাকে পছন্দ করল কিনা! তবে এ বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে পছন্দ হোক বা না হোক কম বেশি বকশিস সবাই দিয়ে থাকে! ব্যাপারটি ছেলেদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। মেয়ে পক্ষের লোকজন ছেলে দেখে নিজেদের মতো করে বকশিস দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে তারা লক্ষ্য রাখেন ছেলে পক্ষ মেয়েকে যে পরিমাণ দিয়েছে, তারচে’ যেন ১ টাকা হলেও বেশি দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ইসলামের বক্তব্য হলো বিয়ের পূর্বে মেয়ে দেখে বকশিস বা হাদিয়া স্বরূপ টাকা বা অন্য কিছু দেয়া জরুরি কিছু নয়। তাই পূর্ণ সন্তুষ্টচিত্তে আবশ্যক মনে না করে এবং তিরস্কারের ভয় না থাকলে মেয়ে দেখে তাকে বকশিস বা হাদিয়া দিতে কোনো সমস্যা নাই। সূত্র : বায়হাকি : ৮/১৮২, তিরমিজি : ৪/৪৪১, কিতাবুল ফাতাওয়া : ৪/৪২২]

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মনির হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী একজন বৃদ্ধকে রিকশা যোগে ৩০ টাকা ভাড়ায় শাহবাগ চত্তরে নিয়ে আসে। শাহবাগে আসার পর মনির হোসেন ওই রিকসা ওয়ালাকে আরো ১০ টাকা বেশি দিলেন।
১০ টাকা কেন বেশি দিলেন জানতে চাইলে মনির হোসেন বলেন, 'লোকটিকে দেখে আমার অনেক মায়া হলো। এত বৃদ্ধ বয়সেও তিনি রিকশা চালাচ্ছেন। তাই আমি তাকে ভাড়ার অতিরিক্ত ১০ টাকা বেশি দিয়েছি'।

দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আলেয়া নামের একজন মহিলা। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় তিনি এক আয়াকে ১০০ টাকা দিলেন। আয়া কে কেন ১০০ টাকা দিলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছুটির সময় সবাই নাকি আয়াকে বকশিস দেয় তাই আমিও দিলাম । এখন আমাদের সমাজে বকশিস দেয়াটা একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের পাশে মৌলি নামের একটি খাবার হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির খাবার বিল হয়েছে ৫১০ টাকা। নির্ধারতি বিল পরিষদ করার পরও তিনি ওয়েটারকে আরো ১০ টাকা বেশি দিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ হোসেন বলেন, হোটেলে খাইলে ওয়েটারকে বকশিস দিতে হয়। এ বিষয়টা এখন একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর হোটেল বয়রাও ১০ টাকা দিলে খুশি থাকে। যার কারণেই দেয়া।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: