বনানী ধর্ষণ: মূল নেপথ্য কারণ ফাঁস?

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৭, ০৭:৫৯ পিএম

বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণ মামলার মূল নেপথ্য কারণ ফাঁস হয়েছে। অনুসন্ধান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, সাফাতের পরিবার এবং তার সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে কারণটি জানা গেছে।

সাফাতের চেয়ে কমপক্ষে ৭ বছরের বড় পিয়াসার বিয়ে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেননি আপন জুয়েলার্সের মালিক ও সাফাতের পিতা দিলদার আহমেদ। তার বিরোধিতার কারণেই সাফাত-পিয়াসার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলেও দাবি করেছেন পিয়াসা। কিন্তু এরপরও তিনি বনানী ধর্ষণ মামলার পিছনে কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ সাফাতের পরিবারের।

পিয়াসা সাফাতের বিরুদ্ধে ইয়াবা, পরনারী এবং তার বাবার অসদারচরণের অভিযোগ এনেছেন। আপন জুয়েলার্সের পরিচালক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে পিয়াসার মন্তব্য জানার জন্য তাকে ফোন করা হলেও ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

সাফাতের পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, পিয়াসার সঙ্গে সাফাতের বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিলন পিয়াসা। সর্বশেষ মিরপুরে আপন জুয়েলার্সের শোরুম চালুর সময় পিয়াসাকে পরিচালক করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু দিলদার তার ছেলে ও তার সাবেক স্ত্রীর আবদার মেনে নেননি। এরপরই পিয়াসা এই পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

&dquote;&dquote;

পরবর্তীতে একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন পিয়াসা। বনানীতে দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর তিনি সুযোগটিকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য মামলা করার আগে ধর্ষিতা দুই ছাত্রীর সঙ্গে কমপক্ষে ২ বার দেখা করে পরামর্শ দেন কিভাবে, কাকে কাকে মামলার আসামি করা হবে এসব বিষয়ে। বিষয়টি নিশ্চি করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ২৮ মার্চ বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে তারা ধর্ষণের শিকার হন। সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ নামে দু’জন তাদের সারা রাত হোটেলের দুটি কক্ষে অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছে ধর্ষকরা। এখন ওই ভিডিও প্রকাশসহ তাদের খুন ও গুম করার হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্ষকরা। এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দুই তরুণীর অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, মামলা নিয়ে দু’দিন ধরে নাটক চলেছে। ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী থানায় এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর অভিযোগ নিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। তার পরও চেষ্টা চালিয়ে যান ধর্ষিত দুই তরুণী। ৪৮ ঘণ্টার চেষ্টার পর সফল হন তারা। তার পরও ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি তাদের- স্বাস্থ্য পরীক্ষার নাম করে মামলার বাদীকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে আসামিদের রক্ষার জন্য পুলিশকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

তবে পুলিশের দাবি, বাদীকে আটকানো হয়নি। রোববার (আজ) তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তাই তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। এজন্য দু’দিন সময় লেগে যায়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরই শনিবার রাতে মামলা নেয়া হয়। তিনি বলেন, ঘটনার দিন তারা দ্য রেইনট্রি হোটেলে অবস্থান করছিলেন এর সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাদীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা গেলেও এর পর থেকে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

ধর্ষিত দুই তরুণীর অভিযোগ, ২৮ মার্চ সাফাতের জন্মদিন ছিল। সাদনান তাদের বারবার ফোন করে বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। অনুষ্ঠান শেষে গভীর রাতে সাদনান তাদের ফেলে চলে আসে। পরে সাফাত ও নাঈম তাদের হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। সেই ঘটনার ভিডিও করে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল।

দুই তরুণী বলেন, অভিযুক্ত তিন তরুণের পরিবার খুবই প্রভাবশালী। অভিযোগ দেয়ার পর নানাভাবে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তারা এখন চরম উৎকণ্ঠায় আছেন। সাফাত ও নাঈম বিভিন্ন লোক দিয়ে তাদের অনুসরণ করছে বলেও তারা দাবি করেন।

এক তরুণী বলেন, তারা বুঝতেই পারেননি সাদনান তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবে। সাদনান তাদের বন্ধু। সাফাত এবং নাঈমের সঙ্গে সাদনানের মাধ্যমেই তাদের পরিচয় হয়। ঘটনার দিন বারবার ফোন করে তাদের রেইনট্রিতে নেয়া হয়। রাত ২টা পর্যন্ত সাদনান তাদের সঙ্গে ছিল। পরে সে (সাদনান) তাদের সেখানে রেখে চলে আসে। আগে থেকেই ওই হোটেলে দুটি কক্ষ বুক করে রেখেছিল সাফাত ও নাঈম। দুই তরুণীকে সেখানে রাতভর আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয়। এমনকি শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরদিন সকালে দু’জনকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই তরুণী বলেন, সাদনানের মাধ্যমে সাফাতের সঙ্গে আগে পরিচয় থাকলেও নাঈমকে তারা চিনতেন না। ওইদিনই নাঈমকে প্রথম দেখেছেন। ঘটনাটি জানলেও আত্মসম্মানসহ ধর্ষকদের ভয়ে শুরুতে কিছুই করতে চায়নি পরিবার। প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ধর্ষক সাফাত ও নাঈম তাদের ভিডিও প্রকাশসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়ায় তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরে বাধ্য হন।

ওই তরুণী বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছেন সাফাত ও নাঈম ইয়াবা আসক্ত। তারা গুলশান, বনানী এবং বারিধারায় বিভিন্ন হোটেলে নিরীহ তরুণীদের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। বিশেষ করে অনেকেই বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে যায়। সেখানে কৌশলে নেশা করিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তার ভিডিও ধারণ করে। কোনো একপর্যায়ে সেই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার নামে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে। অন্যদের মতো তাদের ঘটনাটিও ছিল পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন দুই তরুণী।

তারা বলেন, রাতের ঘটনা অন্যদের না জানানোর জন্য অস্ত্রের মুখে হুমকি দিয়েছে ধর্ষকরা। এ সময় তারা বলে, এর আগেও অনেকের সঙ্গে এ ধরনের কাজ করেছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। যারা মুখ খুলেছে তাদের গুম করে দেয়া হয়েছে। তারা (দুই তরুণী) যদি মুখ খোলে বা র‌্যাব-পুলিশকে জানায়, তবে তাদেরও এমনই পরিণতি হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: