যে কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত

প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০১৭, ০২:৫৪ পিএম

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এ উন্নীত করণের জন্য ছাত্র সমাজ দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে অক্লান্ত, অব্যক্ত ও ঘাম ঝরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের আন্দোলন বা দাবীকে কোন ভাবেই এতটুকু আমলে নিচ্ছে না।

যে কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করতে হবে তার কিছু যুক্তি:

অবসরের বয়সসীমা দুই ধাপে ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়েছে। ৬১ প্রক্রিয়াধীন। এবং সেটা আরও বর্ধিত করা হবে বলে জানা যায়। তাহলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কেন বৃদ্ধি করা হবে না? সে হিসেবে ৩৫ করণ যুক্তিযুক্ত।

আবহাওয়ার পরিবর্তন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে গড় আয়ু আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সেই সাথে মানুষের দক্ষতা, কর্মক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। তাই ৩৫ যুক্তিসঙ্গত।

গত কিছুদিন আগে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুবনীতি ঘোষণা করেছেন। তিনি ১৮ থেকে ৩৫ পর্যন্ত বয়সকে যুবক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সুতরাং একমাত্র ৩৫ ঊর্ধ্বদের সে হিসেবে বুড়া বলা চলে। তাই ৩৫ যুক্তিসঙ্গত।

বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টর যেমন ব্যাংক, বীমা ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সরকারের বেঁধে দেওয়া বয়সসীমা ৩০ কে সামনে তুলে ধরে ৩০ পরবর্তীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে। তাই বেকারত্ব দূরীকরণে ৩৫ করণ অত্যাবশ্যকীয়।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উন্নত বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে আধুনিকায়ন করতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বহির্বিশ্বের অনেক কিছুই আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া ঐ সব দেশের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ থেকে শুরু করে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের দেশেও ৩৫ করণ যৌক্তিক।

পিএসসি’র ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে আবেদনের শুরুর বয়স ২১। বর্তমানে বাংলাদেশের পাবলিক, প্রাইভেট বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্রই ২১ বছরে ডিগ্রী/অনার্স শেষ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ২২/২৩ বা ২৪ বছরে শেষ হয়। এই আইন যখন ছিল তখন ডিগ্রী/অনার্স করেই বিসিএস দেয়া যেত। আর এখন মাস্টার্স করে দিতে হয়। তখন ডিগ্রী ২ বছরে আর অনার্স ৩ বছরে শেষ করা যেত। কিন্তু বর্তমানে ডিগ্রীর পরিধি ৩ বছর আর অনার্স এর পরিধি ৪ বছর। তাহলে এই পুরাতন আইনের গ্রহণযোগ্যতা এখন আর নেই। এর সংশোধন করলে স্বাভাবিক ভাবে ৩৫ হয়ে যায়। তাই ৩৫ খুবই যুক্তিসঙ্গত।

দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২০০০ ইং থেকে ২০০৮ ইং পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট ছিল মারাত্মক আকারে। তারপরেও আজ অবধি সেশন জট থেমে নেই। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রী/অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে ফলাফল পেতে পেতে বয়স ২৮ থেকে ২৯ পর্যন্ত হয়ে যায়। “সেশন জট’’ নামের ভয়ংকর ধ্বংসকারী ভাইরাস ছাত্রছাত্রীদের অনাগত স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে। এই হারানো সময়কে শত চেষ্টায়ও ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই ৩৫ করণ একান্ত জরুরি।

আমরা সকলেই বাংলাদেশের সুনাগরিক। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৬ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত জনগণের তথা ছাত্রসমাজের মৌলিক অধিকারের বলে ৩৫ করণ যুক্তিসঙ্গত। এটা একটা সাংবিধানিক দাবী। অন্যথায় সংবিধান বিধি লঙ্গন করা হবে। যেহেতু ডিগ্রী/অনার্স, মাস্টার্স শেষ করতেই ছাত্রছাত্রীদের জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় হারিয়ে যায় বা গেছে। তারপরেও হাতে থাকা ১ থেকে দেড় বছরে ভাল বা চাহিদানুযায়ী কোন নিয়োগ না থাকায় বা চাকরি পাওয়ার প্রতিযোগিতা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় ৩৫ করণ অসম্ভব রকম জরুরি।

সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে পদখালি থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ায় অকারণে অনেকেরই জীবন থেকে মূল্যবান সময় শেষ হয়ে যায়। তাই ৩৫ করা দরকার। বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু না করে বছরের পর বছর চলে যাওয়া, নানা রকম আইনি জটিলতা, মামলা, আদালতে রিট, শুনানি, তাছাড়া বেশিরভাগ সময় ঐ সব নিয়োগ স্থগিত এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে সময় নষ্ট হওয়ায় ৩৫ করণ ১০০% যৌক্তিক, জরুরী এবং অত্যাবশ্যকীয়।

কোটা প্রথা দিনদিন যে হারে মেধা যাচাইয়ের অন্তরায়ে পরিণত হচ্ছে বা বিরুদ্ধে কাজ করছে তাতে করে দেশ অদূর ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাতীত। এর ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবীদের জায়গায় অনায়াসে অদক্ষ ও অযোগ্যরা স্থান দখল করে নেয়। যা স্পষ্টই মেধার প্রতি অবিচার ও মেধার বিড়ম্বনা। তাই সাধারণদের প্রতিযোগিতা করার জন্য আরও পর্যাপ্ত সময় দরকার।

সরকারের আরও একটা এক তরফা নীতি বড়ই অনিয়মতান্ত্রিক। সেটা হচ্ছে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ। যার ফলে উচ্চ পদের কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে অবসরে যাওয়ার পরিবর্তে স্ব-স্থানে শিখর ঘেরে বসে থাকেন। যেখানে ৩০ এর ভিতরে অন্যদের আর সুযোগ হয়ে উঠে না। কথায় কথায় আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করি আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবী করি। কিন্তু বাস্তবে তাঁর উল্টো পথ অবলম্বন করি। গণতন্ত্রের সঠিক ধারায় দেশ পরিচালিত হলে ছাত্রসমাজের এতসব আন্দোলন বিবেচনায় ৩৫ করণ যুক্তি সঙ্গত।

যেহেতু অনেকেরই মাস্টার্স শেষ করতে বয়স ২৮ এর উপরে চলে যায় বা গেছে তার উপর কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষা তথা পিএইচডি সহ নানান উচ্চ ডিগ্রীর জন্য বিদেশ চলে যায়। ঐ সব ডিগ্রী শেষ করতে করতে বয়স ৩০ পেরিয়ে যায়। তখন দেশে এসে সরকারি কোন কিছুতে আবেদন করতে না পেরে বেঁচে থাকার তাগিদে বহির্বিশ্বে পদার্পণ করে। বহির্বিশ্বও এই সুযোগে নানা প্রলোভন দেখিয়ে এই সব মেধা কেড়ে নিচ্ছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ব্রেন-ড্রেন হচ্ছে। তাই ঐ সব উচ্চ শিক্ষিত বা মেধাবীদের মেধা বহির্বিশ্বে পাচার হওয়া থেকে দেশকে তথা জাতিকে মেধাশুন্যতার হাত থেকে রক্ষা করতে ৩৫ করণ জরুরী।

এই পর্যন্ত ৩৫ এর পক্ষে/বিপক্ষে সারা দেশব্যাপী মতামত যাচাই এর জন্য বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং অনলাইনে একাধিকবার জরিপ হয়েছে। বারবার শতকরা ৯৬ ভাগেরও উপরে হ্যাঁ ভোট পড়েছে। এতে জনগণের পজিটিভ মতামতের ব্যাপক প্রতিফলন ঘটেছে। এই মতামতের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে জনগণ এবং ছাত্রছাত্রী ৩৫ কে অন্তর থেকে সমর্থন করে। তাহলে ৩৫ দাবি অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত।

ইদানিং বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ফাঁস হওয়া একটি মারাত্মক সমস্যা। যা প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। এতে করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার পরিচয় স্পষ্ট। একদিকে যেমন নিয়োগ পরীক্ষা নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে না হয়ে রাজধানী ঢাকা শহরে হচ্ছে তেমনি করে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দুর্ভোগ কাটিয়ে এসে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় কষ্ট করে আবার ফিরে যায় পাশাপাশি মাথাপিছু কম করে হলেও ১৫০০ থকে ২০০০ টাকা নষ্ট হয়। আবার পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। তবুও সবাই অনিশ্চয়তায় থাকে পরবর্তী সময়ে আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় কি না। এতে অনেক অনেক সময় নষ্ট হয়। তাই ৩৫ জরুরি।

৩৫ একটি সময়োপযোগী ও গতানুগতিক দাবী। বর্তমান মাননীয় রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদ স্পীকার থাকাকালীন সময়ে এই ৩৫ এর জন্য প্রথম সংসদে দাবী উত্তাপন করেন। তখন বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে ৩২ বছর করবেন। ততদিনে অনেক বছর চলে গেছে। তাছাড়া সময়ে সময়ে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিসহ অন্যান্যরা এ ব্যপারে বারবার আমাদের এই দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং সংসদে সেটা তুলে ধরেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই দাবীকে কি শুনে, কি বুঝে বারবার নাকচ করেছেন আমরা জানি না। এই সব বিবেচনায় ৩৫ যৌক্তিক দাবি। লেখক: নাজমুল হোসেন

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: