কারামুক্ত কূটনীতিককে যুক্তরাষ্ট্র না ছাড়ার নির্দেশ
বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক:
গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে অন্য কোন দেশে না যাবার নির্দেশ দিয়েছেন রাজনৈতিক নিয়োগ প্রাপ্ত বাংলাদেশি কূটনীতিক শাহেদুল ইসলামকে। জামিনে মুক্তি দেওয়ার দিনই তার কূটনৈতিক পাসপোর্টও জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস।
প্রায় ৩৬ ঘণ্টা কারাগারে থাকার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় গতকাল ভোরে) জামিনে মুক্তি পান তিনি। গৃহকর্মীকে নির্যাতন, ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা ও মানবপাচারের অভিযোগে সোমবার সকালে জ্যামাইকার বাসা থেকে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল হিসাবে নিয়োগ পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহেদুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যায় নিউ ইয়র্ক পুলিশ। আটকের পরপরই কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে তাকে হাজির করা হয়। সেখানে উভয় পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে শুনানি শেষে বিচারক ড্যানিয়েল লুইস তার জামিনের জন্য ৫০ হাজার ডলারের বন্ড বা নগদ ২৫ হাজার ডলার জমা দেয়ার শর্ত দেন। একই সঙ্গে বিচারকের সামনে তাৎক্ষণিক তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল জানান, আদালতের প্রথম শর্ত অর্থাৎ ৫০ হাজার ডলারের বেইল-বন্ডে ডেপুটি কনসাল জেনারেলের জামিনে মুক্তি হয়েছে। তবে তার পাসপোর্ট ফেরত পাওয়া যায়নি। এছাড়া আগামী ২৮শে জুন তাকে আদালতে ফের হাজির থাকতে হবে। পাসপোর্ট ফেরত না পেলে ডেপুটি কনসাল জেনারেল মুক্তভাবে চলাফেরা এবং তার কূটনৈতিক দায়িত্ব কিভাবে পালন করবেন জানতে চাইলে মিশন প্রধান বলেন, এখন তিনি মাত্র জামিন পেলেন। পাসপোর্ট ফেরতসহ আইনি লড়াইয়ের বাকি প্রক্রিয়া আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করা হবে।
এদিকে কূটনীতিক শাহেদুল ইসলামের আটকের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ১৩ মাস আগে নিখোঁজ হওয়া গৃহকর্মী, যার বিষয়ে নোটভারবাল পাঠিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে দু’দফা অবহিত করা হয়েছে সেই ব্যক্তির অভিযোগে ডেপুটি কনসাল জেনারেলকে বাসা থেকে সরাসরি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করে বাংলাদেশ। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো এবং মধ্যরাতে বিবৃতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যানের সঙ্গে আলাপে বাংলাদেশ তার উদ্বেগ এবং তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়- ঢাকা আশা করে উদ্বেগের বিষয়টি যথাযথভাবে আমলে নেবে ওয়াশিংটন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখছে এবং প্রয়োজনীয় যে কোনো সাহায্য ও সহযোগিতা করবে বলে জানানো হয়। এদিকে যে কোনো পরিস্থিতিতে ঢাকাস্থ কোনো মার্কিন দূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানোর ঘটনা এটাই প্রথম। এই ঘটনায় ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়ে কি-না তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। তবে দায়িত্বশীলরা বলছেন, এটি যেভাবে প্রচার পেয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারি কোনো ডকুমেন্টে সেভাবে নেই। বিশেষ করে রাষ্ট্রদূতকে ‘তলব’ বা ‘ডেকে আনার’ বিষয়টি সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে।
ওদিকে কূটনীতিক শাহেদুল ইসলামের জামিনের বিষয়ে নিউইয়র্কস্থ কনস্যুলেট জানিয়েছে, বেইল বন্ডের শর্ত মতে নগদ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডলার মার্কিন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। বেইল বন্ডে শাহেদুল ইসলামের আইনগত জিম্মাদার হিসেবে দুজন সচ্ছল নিকটাত্মীয়ের উল্লেখ রয়েছে। মূলত তাদের জিম্মায় তার জামিন হয়েছে এবং তারাই এ অর্থ পরিশোধ করেছেন। এরপর ব্রুঙ্কসের ভার্মন সি বেইন কারেকশনাল সেন্টার থেকে বাংলাদেশি মুক্তি পান তিনি।
এ সময় নিউইয়র্কে নিযুক্ত কনসাল জেনারেলসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শাহেদুলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ আমিন নামে একজনকে গৃহকর্মী হিসেবে নিউ ইয়র্কে এনে তার কুইন্সের বাসায় রেখে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত বিনা মজুরিতে জোরপূর্বক কাজ করানোর ঘটনায় শ্রম পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। গত বছর মে মাসে আমিন পালিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিচার চায়।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতা শাহেদুল ইসলাম রাজনৈতিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োগপ্রাপ্ত কূটনীতিক। ২০১১ সালে নিউ ইয়র্ক মিশনে কাউন্সিলর পদে যোগ দেন তিনি। পরবর্তীতে ডেপুটি কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব পান। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। সেখানকার সাবেক সংসদ সদস্য খাদেমুল ইসলাম তার পিতা। অভিযোগকারী রুহুল আমিনও ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা। গত ১৩ মাস আগে শাহেদুলের নিউ ইয়র্কের বাসা থেকে পালিয়ে যান গৃহকর্মী রুহুল আমিন। এরপর সে ডাউনটাউন ব্রুকলিনের বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি সাবওয়ে (স্যান্ডউইচ) দোকানে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: