ইসলাম, জঙ্গিবাদ আর প্রগতিশীলতা

প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০১৭, ০২:৩২ পিএম

ইসলাম, জঙ্গিবাদ আর প্রগতিশীলতা সত্যিকারের মুসলমানের কাছে অবশ্যই আলাদা বিষয়। কারণ আমাদের সমাজে আমরা অনেকেই এ তিন বিষয়ে না বুঝে ব্যাখ্যা দেই। এবার আসি আসল কথায়....

ইসলাম- মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মনোনীত জীবন বিধান। যেটা প্রমাণিত। বিশ্বের অনেক অন্য ধর্মাবলম্বীরা এটা অকপটে স্বীকার করেন। কারণ বিশ্বের মানুষের কাছে সবচেয়ে শান্তির ধর্ম ইসলাম। যা মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ পরিপূরণ করেছেন।

বর্তমান বিশ্বে একটা বিষয় মহামারির আকার ধারণ করেছে। তা হলো জঙ্গিবাদ। গুটিকয়েক মানুষ পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কলঙ্কিত করতে এ কাজটি করছে অত্যন্ত সুচারুভাবে। এ কথা সত্য ইসলামে সন্ত্রাস, উগ্র ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা ইসলাম বা মুসলমানদের সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক খোঁজেন তারা না জেনেই বলেন। পবিত্র কোরআন, হাদিস, ইজমা কিয়াসের কোথাও উগ্রবাদের উল্লেখ নেই। বা ধর্মীয় উগ্রবাদকে কখনও ইসলাম প্রশ্রয় দেয়নি।

বর্তমান পৃথিবীতে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পর অনেক মুসলমানও বলেন। মোল্লা, ধর্মান্ধরা জঙ্গি। কিন্তু আপনি আমি একথা চিন্তা করিনা যেটা বলছি কাট মোল্লা বা ধর্মান্ধতা সেটাও কিন্তু উগ্রবাদ। অনেকে আবার বলেন, সংস্কৃতিচর্চা না থাকায় এমনটা হচ্ছে। কিন্ত প্রশ্ন হলো এ পর্যন্ত যতজন জঙ্গি সন্ত্রাসী ধরা পড়ছে তাদের কতজন, আলেম, কোরআানে হাফেজ বা বড় বড় মাওলানা? একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যাদের মগজ ধোলাই করে এ পথে আনা হয়েছে তাদের সিংহভাগ হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র। এটা পড়া লেখার দোষ না। দোষ ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কে তাদের না জানাটা। যদি তারা সঠিক ইসলাম, কোরআন জানতো তাহলে এমনটা কখনও হতো না।

যখন কেউ ইসলাম, কোরআন, আখেরাত সম্পর্কে জানবেনা তখন তাকে আজাবের ভয় দেখিয়ে বিপথে আনা খুব সহজ। কিন্তু সঠিক জ্ঞান যার আছে সে কখনও ভুল পথে পা দিবেনা। বিষয়টা একধরণের ছোট বাচ্চাকে ভুত বা বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানোর মতই। তাহলে কেন না বুঝে ধর্ম বা আলেম ওলামা ওসলামকে দোষারোপ করা?

যারা বলেন, উগ্র ধর্মান্ধর কথা তারা কি প্রমাণ করতে পারবেন পবিত্র কোরআনের কোথাও জঙ্গিবাদের কথা বলা আছে? সবার আগে বুঝা ও জানা উচিত আপনি আমি নিজে কতটা কোরআন বুঝি ও জানি? না হলে কেন এসব ভুল কথা বলা? আশা করি উত্তরটা আপনারাই দিবেন।

জঙ্গিবাদ-
এটি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মহামারী। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় কোনো মানুষ এটা সমর্থন করেনা। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কথা বলে তারা মানবতার শত্রু এদের কোনো ধর্ম, দেশ, পরিবার, জাত নেই। এরা সন্ত্রাসী।

বাংলাদেশে প্রথমদিকে একটা কথা প্রচলন ছিলো মাদরাসার ছাত্ররা জঙ্গি। কিন্তু যখন দেখা গেল ভিন্নটা তখন সবাই চুপ। যারা জঙ্গি সম্পৃক্ততায় আটক বা মারা গেল তাদের অবস্থান ও শিক্ষা নিয়ে এখন চুপ। আগে যারা মাদরাসা ছাত্রদের দোষারোপ করেছেন তারা এখন তাদের কথা বন্ধ। আগে বলতেন মাদরাসা বন্ধ করতে। এখন আর ভিন্নতা দেখে ওসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন না। মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষা বা শিক্ষক কাউকে জঙ্গি বানায় না। যারা হয় তাদের না জানার কারণে। এ জন্য সরকার বা রাষ্ট্র দায়ী নয়।

নতুন করে কিছু লোক সরকারের বিরুদ্ধে লেগেছে। যারা আগে ধর্মের পেছনে লেগেছিলো। মনে রাখতে হবে যারা বা যিনি সরকার পরিচালনা করেন তিনি এবং তারা অনেক বিজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক চৌকশ। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা বলতে না বলেতে সফল হবে এমন ভাবার কারণ নেই। সময় দিতে হয় সব কিছুর জন্য।

আর যতই সংস্কৃতিচর্চা করেন না কেন। ইসলামের সঠিক জ্ঞাণ না থাকলে জঙ্গিবাদের মহামারী ঠেকানো কষ্টকর। এ জন্যই সরকার প্রধান আলেম ওলামাদের সঠিক ধর্ম প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন বার বার। কারণ তিনি বিচক্ষণ। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ইসলামের সঠিক জ্ঞাণের কোনো বিকল্প নেই। সাথে অবশ্য সংস্কৃতি থাকতে হবে নিজস্ব।

প্রগতিশীলতা -
একটা বিষয় খুব বেশি দেখা যায় আধুনিকতা আর প্রগতিশলতার নাকি সবচেয়ে বড় অন্তরায় ইসলাম। আপনি কি জানেন ইসলাম কতটা উদার আর সুন্দর ধর্ম? মনে রাখবেন পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। যেটা প্রমাণিত। আর যারা বলেন ইসলাম সেকেলে তারা নিজেদের পক্ষে কোনো শক্ত যুক্তি দেখাতে পারবেন?

বলতে পারেন প্রগতিশীলতার কথা বলে ধর্মের বিরোধীতা করা হচ্ছে ফ্যাশন ছাড়া আর কিছু না। ধর্মের সাথে গুটিকয়েক লোকের না বুঝে আধুনিকতার সাঙাত দেখতে পান। আবার অনেকে বলেন, ইসলাম নারীদের ঘরে বন্দি করে রাখতে চায়? তাহলে বলব আপনি কিছুই জানেন না। না বুঝে চিৎকার করেন।

জাহেলিয়া যুগে মেয়ে হলে তাদের জীবন্ত কবর দেয়া হত। ইসলাম সেটা রহিত করে মেয়েদের সম্মান দিয়েছে। মানুষ বেচাকেনা হত দাস হিসেবে ইসলাম সেটা বাতিল করে সবাইকে সমান মর্যাদা দিয়েছে। যদি না দিত তাহলে একবার ভাবুন আপনার আমার অবস্থা কি হতো? আমরা আপনারা যা বলছি তা বলার জন্য কি দুনিয়াতে আসতে পারতাম? মোটেও না।

তাই কোনো কিছু বলা বা প্রতিবাদ করার আগে সে সম্পর্কে সঠিক জ্ঞাণ থাকা একান্ত দরকার। প্রগতিশীল বা আধুনিক হতে ধর্মের বিরোধীতা করা লাগেনা। সঠিক শিক্ষাই যথেষ্ট।

হোসাইন তারেক
সাংবাদিক।

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: