লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০১৭, ০৭:২৮ পিএম

আরবিতে লাইলাতুল কদরের বাংলা অর্থ শবে কদর। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।

কুরানের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর উপাসনা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুসলিমদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে বলে তারা বিশ্বাস করে।

৬১০ সালে শবে কদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত ইসলামের নবী, মুহাম্মদের (স:) নিকট সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়। কোন কোন মুসলমানের ধারণা তার নিকট প্রথম সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। অনেকের মতে এ রাতে ফেরেশতা জীবরাইল এর নিকট সম্পূর্ন কুরআন অবতীর্ন হয় যা পরবর্তিতে ২৩ বছর ধরে ইসলামের নবী মুহাম্মদের নিকট তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়।

মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই রাত সর্ম্পকে হাদিস শরীফে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এমনকি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআনে সূরা ক্বদর নামে স্বতন্ত্র একটি পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। এই সুরায় শবে কদরের রাত্রিকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলাম ধর্ম মতে, মুহাম্মদ (স:) এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারনে বহু বছর আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। কোরান ও হাদীসের বর্ণনায় জানা যায়, ইসলামের চার জন নবী যথা আইয়ুব, জাকরিয়া , হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই আশি বছর স্রষ্টার উপাসনা করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোন প্রকার পাপ কাজ করেননি। কিন্তু মুহাম্মদ (স:) থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে স্রষ্টার আরাধনা করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এই আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দুর করার জন্য সুরা ক্বদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ণনায় জানা যায়।

আজ রমজান মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত্রি ২৭ রমজান এর তারাবীর নামায আদায় করা হবে। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ রমজানের যে কোন এক বিজোর রাত্রিতে শবে-কদর নিহিত আছে। তাই আজকে এশার নামাযের পরে আমরা শবে-কদরের নামায আদায় করব। আমরা মসজিদ, বাড়িতে যেখানেই হোক এই নামায আদায় করতে পারি।

শবে-কদরের সন্ধ্যায় গোসল করে তারপর দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল ওজু পাঠ করিবে। সন্ধ্যাবেলা চল্লিশবার “সুবাহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” এই দোয়া পাঠ করিলে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে।

নামাযের নিয়ম :- দুই দুই রাকআত নিয়ত করে; প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইকলাস তিনবার, পাঁচবার, সাতবার, নয়বার, পনেরবার, একুশবার, পঁচিশবার, সাতাইশবার, পঞ্চাশবার ও একশত একবার করিয়া পড়িবে।

শবে-কদরের নামাযের নিয়ত:- (নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাঅতায় সালাতিল লাইলাতিল কাদরি মুতওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাত্ত্ববাতি শরীফাতি আল্লাহু আকবার)

প্রতি চার রাকআতের বাদে “সুবাহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” এই দোয়া একশতবার পাঠ করিয়া মোনাজাত করিলে উত্তশ ফল পওয়া যাইবে।

কয়েক রাকাত নামায় পরপর দূরুদ শরীফ পাঠ করা উত্তম। আল্লাহর নিকট ইবাদতের নির্দিষ্ট কোন পরিমান নাই, তাই সূরা গুনে নামায পড়তে গেলে ভূল ত্রুটি হইতে পারে সেজন্য সূরা না গুনে যত অধিক সংখ্যক বার পাঠ করা যায় ততই মঙ্গল।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: