আ’লীগ-বিএনপির মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য নেই

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০১৭, ০৩:২৬ পিএম

সম্প্রতি বাম ও উদারপন্থী কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষণার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।এসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের চা চক্রে পুলিশ বাঁধাও প্রদান করেছে।এই নতুন দল গঠনের বিষয়ে সম্প্রতি বিডি২৪লাইভের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নাজমুস সাকিব নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।সেই সাক্ষৎকারের চুম্বক অংশ বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:-

বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ: আগামী সংসদ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মত রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে আপনারা যে ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দল ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও রুপরেখা কি?
 

মাহমুদুর রহমান মান্না: রুপরেখা তো দিবই কিন্তু এখনো সেটা তৈরি হয়নি।এটার মধ্যে যেমন উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল থাকবে আবার বামপন্থি রাজনৈতিক দলও থাকবে। বামপন্থিরা যা বলবে শুধুমাত্র যে তাই হবে বা উদারপন্থিরা যেমন বিকল্পধারা, জেএসডিসি, নাগরিক ঐক্য সবাই যে একই রকম বলবে বিষয়টি সে রকম নয়। তবে একটা জিনিস কমন হবে সেটি হল আমরা একটি কল্যাণ রাষ্ট্র চাই।

দেশের শিক্ষা,স্বাস্থ্য কি বিনা পয়সায় দেয়া যায় কিনা? আমরা মনে করি যায়। এটা অন্যরা কি দেবে এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি।কল্যাণ রাষ্ট্র মানে,রাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে কল্যাণ। এখন দেশের দুটো বৃহত্তম দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) তাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে পরেছে যে তারা অন্য কোনো বিষয়ে ভাবতেই পারছে না। যেমন ধরেন চিকনগুনিয়া এটা নিয়ে কোনো গবেষণা মুলক কাজ হচ্ছে তা দেখছিই না। বরং এতো সব অদ্ভুত অদ্ভুত জবাব দিচ্ছে মেয়ররা, যে বাড়িতে বাড়িতে মশাড়ি দিতে পারব না। এধরনের কথা কে বলতে বলেছে। অসুখটা কোথা থেকে হল,কিভাবে হল যতদুর পারে গবেষণা করে এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন।এটা মহামারির আকারও ধারণ করতে পারে।এসব সমস্যার সমাধান না করে তারা শুধু একে অপরের নামে অভিযোগ করছে।

মান্না বলেন,কল্যাণ রাষ্ট্রের বিস্তারিত পর্যালোচনা, ব্যাখ্যা ও তার রুপরেখা এটা আমরা ধীরে ধীরে দিয়ে দিব। আমি মনে করি যে, আমাদের আলাপ আলোচনা করে একটা জায়গায় আসতে সময় লাগবে কারণ সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। ইতিবাচক দিক টা হচ্ছে বামপন্থিরাও মনে করছে আমাদের সঙ্গে মিলে এখন গণতন্ত্রের আন্দোলন করাটাই জরুরি।প্রথম বিষয় হচ্ছে আমরা মনে করি একটা অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন করতে হবে। এটার ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। চলতে চলতে আমরা বাকি অন্যান্য বিষয় যেগুলো জাতীয় বিশেষ বিশেষ প্রশ্ন ও অন্যান্য প্রশ্ন সেগুলোতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ: নতুন এই জোটে কতটি দল থাকতে পারে?
মাহমুদুর রহমান মান্না: বাস্তবে যে চিত্রটা আছে আমাদের জোটে ৯ থেকে ১২ টা দল থাকতে পারে।যারা উদারপন্থি তারা অর্ধেক আর যারা বাম তারা অর্ধেক ভাগাভাগি করেই নিব।একটা কর্মসূচি ভিত্তিক ঐক্যের কথা সবাই ভাবছে আবার ইমিডিয়েটলি গণতন্ত্রের কথা ভাবছে সবাই। এই লক্ষ্যে ইমিডিয়েট লক্ষ্য নিয়ে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।

বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ: আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোট থেকে আপনাদের জোটের পার্থক্য কি? 

মাহমুদুর রহমান মান্না: আওয়ামী লীগসহ যেটা জোট,সেটা হলো এখন যে তারা ক্ষমতায় আছে তাদের তথাকথিত আইনগত বৈধতা থাকলেও নীতিগত কোনো বৈধতা নেই।এটা একটা হাইজ্যাক করার মত বিষয়। আর অতীতে বিএনপির নেতৃত্বে যে জোট ছিল তারাও এরকম কাজ করেছিল।এমন আছে যারা ক্ষমতায় আছে এবং যারা ক্ষমতার বাইরে আছে তাদের মধ্যে পাথর্ক্য করা যাচ্ছে না। তাদেরকেও ক্ষমতার ভিতরে রেখেই হিসাব করেন।তাদের মধ্যে কোনো পাথর্ক্য নেই।যে রকম করে দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে, এই অভিযোগ আগেও উঠেছে।ওই দিক থেকে তাদের মধ্যে চরিত্রগত পাথর্ক্য দেখি না। একই রকম।আমরা মনে করি যে এখান থেকে যারা মুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবে তাদেরকে নিয়েই আমাদের জোট হবে। আমাদের সাথে তাদের পার্থক্যটা খুব স্পষ্ট।এটা আমরা কখন করবই না।

বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ: নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ দিয়ে দেশের সংকট সমাধান হবে কি?
মাহমুদুর রহমান মান্না: নির্বাচন কমিশন যদি ৩ মাসেই সব কাজ করতে পারেন, তাহলে ৫ বছরের জন্য দায়িত্বে আসেন কেন? এই কথা দিয়েই বোঝা যায় যে তাদের উপর নির্ভর করা যায় না। সরকার এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। আর বিরোধী দল মিটিং পর্যন্ত করতে পারছে না। আমরা এখন পর্যন্ত তাদের সাথে পাওয়ার কনটেস্ট করছি না। এখনও পর্যন্ত আমাদের সেই শক্তি হয়নি। আমাদের একটা চায়ের দাওয়াতে পর্যন্ত বাঁধা দিচ্ছে তারা।

বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ: আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কতগুলো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হবে? আর আপনাদের নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাবে কি? 
মাহমুদুর রহমান মান্না: আমরা তো নিবন্ধিত হওয়ার জন্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই রকম যোগ্যতা অর্জন করেই আমরা কাগজপত্র জমা দেব। সরকারের মধ্যে যদি কোনো বিমতাসুলভ আচারণ না থাকে। যদি পক্ষপাতমূলক নির্বাচন করার জন্য তাদেরকে বাইরে রাখে তাহলে আমি জানি না। না হলে আমরা নিবন্ধন পাব আশা করছি।

বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ: শেষ পর্যন্ত বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের সাথে আপনাদের কোনো ঐক্য হতে পারে কিনা?

মাহমুদুর রহমান মান্না: ঐক্য তো আছেই। ওরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ঐক্যতো হয়েই আছে।তবে আমরা একসাথে নয় আলাদা ভাবেই কাজ করব। কারণ তারা ২০-৩০ ঘোষণা করেছে তার মধ্যে ভালো ভালো কিছু কথা আছে কিন্তু নতুন কিছু নেই। তাদেরকে বিশ্বাস করতে পারবো যে,এই সরকার বদলালে পুরো সিস্টেমটাও বদলে যাবে তাদের উচ্চারণে শারীরিক ভাষায় তা আমরা দেখছি না। সুতরাং তাদের সাথে জোট বাঁধার কথা মাথায় আনবো না।

বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনারা কোনো অহিংস কর্মসূচি গ্রহণ করবেন কি?
মাহমুদুর রহমান মান্না: অহিংসতার প্রশ্ন আমাদের করে লাভ নেই।এটা যারা করে তাদের করবেন।আমরা কোনো অহিংসতায় বিশ্বাস করি না। তবে আমরা গণআন্দোলনে বিশ্বাস করি।
 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: