বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে জমে উঠেছে চাঁই-দোয়ারীর হাট

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০১৭, ০৫:৪৮ পিএম

মো: মাহফুজুর রহমান,
রাজবাড়ী থেকে:

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বাজারস্থ রেলষ্টেশন এলাকায় চাঁই-দোয়ারীর হাট জমে উঠেছে। দৈশীয় মাছের মরণ ফাঁদ বাঁশের তৈরি এ চাঁই বা দোয়ারী আদিকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সপ্তাহের শনি ও বুধবার ২ দিন গোয়ালন্দ বাজার রেল ষ্টেশন এলাকায় চাঁইয়ের বসে। বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে গোয়ালন্দ রেল ষ্টেশন এলাকায় চাঁই (দোয়ারী)’র হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে।

গত শনিবার (২২ জুলাই) গোয়ালন্দের চাই হাট ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার চাঁই (দোয়ারী) কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ক্রেতা ভিড় জমাচ্ছেন। প্রতি বছরের মত বর্ষা শুরুর সাথে সাথে খাল-বিল, নদী-নালায় বর্ষার পানি প্রবাহে বৃদ্ধি ও কমতে শুরু করেছে। মৌসুমের শুরু থেকেই রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলাধীন পদ্মা নদীর তীরবর্তি এলাকার খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে গেছে।

এতে করে নানা প্রজাতির দেশী মাছের আনাগোনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে কৈ, শিং, মাগুর, বাইলা, চিংড়ি সহ দেশীয় মিঠা পানির মাছের বিচরণ বাড়তে থাকে। দেখা গেছে, বর্ষা শুরু থেকে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। চাঁই বিক্রেতারা-ক্রেতার অপেক্ষায় নানা রকমের চাঁই সাজিয়ে বসে থাকেন। জানা গেছে, যা আশ্বিন-কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। স্থানীয় প্রবীনরা বলেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার রেলষ্টেশন বাজারের চাঁইয়ের হাট প্রায় ২ শত বছরের পুরনো। গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় প্রতি হাটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁই বেচা-কেনার ধুম চোখে পড়ার মতো। প্রতি ১০০ চাঁই’র দাম ৫-৬ হাজার টাকা। এখান থেকে পাইকারি দরে চাঁই কিনে নিয়ে ব্যবসায়ীরা গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন ছোট হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এ উপজেলার চাঁই মজবুত ও টেকসই বিধায় রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ জেলা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চেলে এই দোয়ারী বিক্রয় হয়।

স্থানীয়রা ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ শিকারী ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখানে চাঁই কিনতে আসেন। গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মৈজদ্দিন মন্ডল পাড়া, মাখন বাবুর চর ও পার্শ্ববর্তী ডিগ্রীচর চাঁনপুর এলাকা দোয়ারী পট্টি নাম ধারণ করে আছে । তাই মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাঁই তৈরির কারিগরদের চোখে যেন ঘুম নেই। দিন-রাত পরিশ্রম করে তারা তৈরি করে যাচ্ছে এ শিল্প সামগ্রী। বাঁশ কেনা, বাঁশ কাটা আর রাত-দিন কাজ করে চাঁই তৈরি করে বিভিন্ন জেলায় রফতানি করাই এ শিল্প কর্মীদের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলার বেশীর ভাগ মানুষই বছরের এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দোয়ারী তৈরীতে। এ কাজে পুরুষদের পাশাপাশি সমান তালে কাজ করেন বাড়ির মহিলারাও। গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে চাঁই শিল্পের প্রসার। গোয়ালন্দ উপজেলাা প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার চাঁই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

এ পরিবারগুলো নারী-পুরুষ সবাই মিলে চাঁই তৈরী করে থাকে। ডিগ্রীচর চাঁনপুর এলাকার চাঁই তৈরির কারিগর মোঃ হারেজ ও তার ছেলে রোমান জানান, বড় একটি বাঁশ দিয়ে ১০টি বেশি চাঁই তৈরি করা যায়। চাঁই তৈরিতে পাকা বাশ দিয়ে তৈরি কাঠি, বেত ও প্লাস্টিকের সুতা দরকার হয়। তিনি আরো বলেন, একজন লোক প্রতিদিন ৮টি ছোট মাপের চাঁই তৈরী করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের দোয়রীর মাঝে চাঁইয়া, তালাই ও বাধের দোয়ারীর চাহিদা বেশী।

অল্প পূঁজি ও হাতের কারিগরির মাধ্যমে এই পেশায় আয়ও ভালই। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ক্রেতারা জানান, অনেক আগে থেকেই গোয়ালন্দ হাটে ভালো মানের চাঁই(দোয়ারী) ক্রয়-বিক্রয় হতে থাকে। তাই একটু দূর থেকে হলেও এখানে চাঁই কিনতে আসি। আষাঢ় মাসের শেষের দিক চাঁই(দোয়ারী)’র চাহিদা বাড়তে থাকে। তাই এ সময় চাঁই বেচা-কেনার ধুম পড়ে হাট-বাজারে। সাধারনত বর্ষা আসার আগে আগে এই ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠে।

বিডি২৪লাইভ/এএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: