বোর্ডের উপর অভিমান: অভিযোগের ঝুলি খুললেন রফিক

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০১৭, ০৭:০৮ পিএম

মোহাম্মদ রফিক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র।দুর্দান্ত স্পিনে বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানকে ঘায়েল করেছেন তিনি।দেশের ক্রিকেটে নিঃসন্দেহে রফিকের বড় অবদান রয়েছে।একটা সময় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। ক্রিকেট ছেড়েছেন সেই ২০০৮ সালে কিন্তু এখনও বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১০০ উইকেট) উইকেট সংগ্রাহক বাঁহাতি এই সাবেক স্পিনার। অবসর নেওয়ার পরই যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় রফিকের। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের কোনও কার্যক্রমে তার উপস্থিতি দেখা যায় না। বিসিবিও কোনও কাজে লাগায়নি তাকে। ঘরোয়া নির্দিষ্ট কোনও টুর্নামেন্টে ডাক পেলেই কেবল রফিকের দেখা মিলে।

কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলছে মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালের দ্বিতীয় আসর। সেখানে দেখা মিলল রফিকের। সতীর্থদের সাথে আবার বল হাতে চেনা রুপে ফিরছেন তিনি।দেশের এ স্পিন তারকার বর্তমান অবস্থা আর ক্রিকেট নিয়ে ভাবনা জানতে বিডি২৪লাইভের ক্রীড়া প্রতিবেদক সোহরাব মাহাদী মুখোমুখি হয়েছে তার। উঠে এসেছে ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি তার অভিমান আর অভিযোগ।বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য রফিকের সাক্ষাতকারের চুম্বুক অংশটুকু তুলে ধরা হলো:-

&dquote;&dquote;

বিডি২৪লাইভ: কেমন আছেন ?

মোহাম্মদ রফিক: অনেক ভাল।

বিডি২৪লাইভ: ওয়ালটন মাস্টার্স কাপ ক্রিকেট কার্নিভাল কেমন উপভোগ করছেন ?

মোহাম্মদ রফিক: ভাল। অনেক আনন্দ করছি। সবার সাথে দেখা হচ্ছে এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে। দারুণ কম্পিটিশন হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় আয়োজকদের এই টুর্নামেন্টে নিয়ে আরও একটু চিন্তা ভাবনা করা উচিত। কিভাবে এটা আরো জনপ্রিয়তা লাভ করবে? আর বছরের এই সময়টা খেলা আয়োজন না করে অন্য কোন সময় করলে ভাল হয়। এই সময়টাতে বৃষ্টি হয় প্রচুর। খেলা নিয়ে সংশয় থাকে। শুধু একটা ভেন্যু ঠিক করে খেলা ছেড়ে দিলেই তো হবে না। প্রচার করতে হবে। আগে থেকে প্ল্যান করা লাগবে। আরও ১০ দিন আগে থেকে পত্রিকা, টিভিতে বিজ্ঞাপণ দিলে আরও  জমজমাট হতো। সবাই জানতে পারতো।

বিডি২৪লাইভ: এখন আপনার সময় কাটছে কিভাবে ?

মোহাম্মদ রফিক: আমি এখন ব্যবসা করছি। স্টীলের ব্যবসা। আমি আবুল খায়ের স্টিল মিলসের ডিস্ট্রিভিউটর। কেরানীগঞ্জে আমার ব্যবসাটা মোটামুটি ভাল চলছে আল্লাহর রহমতে। এখানে স্টীলের ব্যবসা বেশ জমজমাট।

বিডি২৪লাইভ: আপনার সমসাময়িক অনেকেই ক্রিকেট বোর্ডে ভাল অবস্থানে রয়েছে। আপনি পিছিয়ে আছেন? আপনার এনিয়ে কোন দুঃখ বা আপেক্ষ আছে কি?

মোহাম্মদ রফিক: দুঃখ তো অবশ্যই আছে। আক্ষেপও আছে। আমি ক্যারিয়ার শেষ করার আগেই ক্রিকেট বোর্ডকে বলে রেখেছিলাম, আমি এদেশের ক্রিকেটের সাথে নিজেকে জড়াতে চাই কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। যারা আমার সাথে খেলেছে তাদের জানিয়েছি, অনেক বার জানিয়েছি। বোর্ডকে জানিয়েছি।সবাই আশ্বাস দেয়। বাস্তবে কেউ কিছু করে না। আমি রফিক আর কত সবাইকে বলবো, আমি ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী? বলতে বলতে আমি ক্লান্ত, হতাশ। আমার টার্গেট ছিল এদেশের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করবো। সেই আশা অপূরণ রয়ে গেল। তাই এখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি। বুঝতে পারছি। সবাই আমাকে নিয়ে খেলছে। মুখে আশ্বাস দিচ্ছে। এটা এই পর্যন্তই। আজ  দেখেন ক্রিকেট বোর্ডে কারা আছে।যাদের ক্রিকেটের কোন ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ নেই। তারা দাপটের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আর আমরা যারা ক্রিকেটকে এতো কিছু দিয়েছি। তারা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না।

&dquote;&dquote;

বিডি২৪লাইভ: বিপিএলের এবারের আসরে প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজি দলগুলো পাঁচজন করে ক্রিকেটার এক ম্যাচে খেলতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক ম্যাচে পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার খেললে অনেক দেশিয় ক্রিকেটাররা ম্যাচ পাবে না। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

মোহাম্মদ রফিক: পাঁচজন খেলার বিষয়টা আমিও জেনেছি। এখানে আসলে সবাই চায় জিততে। তাই বিদেশিদের নিবে ম্যাচ জিতানোর জন্য। কিন্তু বিদেশিরা যখন খারাপ করবে তখন কি করবে? তাই আমাদের দেশি ক্রিকেটারদেরও সুযোগ দিতে হবে। সুযোগ পেলে তারা খুবই ভাল করবে। কারণ আমাদের দেশে এখন জাতীয় দলের বাহিরে তেমন একটা ভালো মানের ক্রিকেটার নাই। যারা কিনা আগামী দিনে দেশের হাল ধরবে। তাই আমি মনে করি এ সব জায়গা গুলোতে তাদের সুযোগ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।

বিডি২৪লাইভ: বিসিবি আপনাকে কোন প্রোগ্রামে ডাকছে না। কিন্তু বিপিএলে ফ্রাঞ্চাইজি গুলো কি আপনার ব্যাপারে কোন আগ্রহ প্রকাশ করেছে?

মোহাম্মদ রফিক:  দেখেন, আসলে আগ্রহ বলতে বিসিবিকে আগে দেখাতে হবে। তারা যদি নির্ধারণ করে দেয় তাহলে আমরা কোচিং লাইনে থাকতে পারবো। তবে ফ্রাঞ্চাইজি দলগুলো যেহেতু নিজেরাই দেখে তাই তাদের আগ্রহ থাকতে হবে আমাদের প্রতি। আমি আশাবাদী এবার হয়তো রংপুর রাইডারসের সাথে থাকতে পারবো।

বিডি২৪লাইভ: ক্রিকেট থেকে একেবারেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে ?

মোহাম্মদ রফিক: একভাবে বলতে গেলে হ্যাঁ। এখন ক্রিকেটের সাথে আমি সম্পৃক্ত নই। আশা আছে আমাদের কেরানীগঞ্জে একটা ক্রিকেট একাডেমি করার চেষ্টা করছি সেটা নিয়ে অগ্রসর হবার। আমরা মোটামুটি কাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছি। একটা টুর্নামেন্ট ছেড়েছি কিছুদিন আগে। আরো অনেক কাজ বাকি আছে। এতো বড় প্রজেক্ট, আর্থিক একটা ব্যাপার আছে। তবে আমি আশাবাদী। আমার এলাকার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু ভাই আমাকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুত কাজ শেষ করতে পারবো।

আর একটা ছোট কাজ করি। কোলকাতায় সৌরভ গাঙ্গুলি ক্রিকেট একাডেমিতে সংক্ষিপ্ত প্রোগ্রামে অংশ নেই মাঝে মাঝে। এই তো গত ২৬ মার্চে গিয়েছিলাম। ১৩ দিনের ওই প্রোগ্রামে কাজ করেছি।

বিডি২৪লাইভ: আপনার ছেলের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে পড়েছিল। আপনার মনে যে দুঃখ তা অনেকটা প্রকাশ পেয়েছে সেই লেখায়। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কি ?

মোহাম্মদ রফিক: দেখেন, এই দুঃখ থাকবেই। আপনার পরিবারের কারো সাথেই যদি এমন কিছু দিনের পর দিন চলতো তাহলে তারাও কেউ এমন কিছু লিখতেন। এটা স্বাভাবিক বিষয়। আমার ছেলে তার বাবার কষ্টতটা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছে। তাই তা প্রকাশ পেয়ে গেছে।

বিডি২৪লাইভ/এসএম/এমআর
 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: