৬ হাজার লাশ কেটেছেন যিনি!

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০১৭, ১১:৩৯ এএম

২৫০ শয্যা ফেনী সদর হাসপাতালে প্রায় ১৮ বছর ধরে লাশ কাটছেন আবদুর রহিম বাদশা। লাশ কাটাই তার পেশা। জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে লাশ ও মর্গ। ফেনী ও আশপাশের কয়েক জেলার হাজার হাজার লাশ কেটে ময়নাতদন্তে সহযোগিতা করেন তিনি। 

আবদুর রহিম জানান, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নিয়মিত তাকে এ কাজ করতে হয়। জেলাসহ আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে নিয়মিত জ্ঞাত-অজ্ঞাত লাশ আসে আধুনিক ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে। তখনই ডাক পড়ে রহিমের। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ছয় হাজার লাশ কেটেছেন। 

তিনি আরো জানান, ফেনী সদর হাসপাতালের জরাজীর্ণ মর্গে কোনো সহযোগী ছাড়া একা লাশ কাটতে হয় তাকে। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা নেই। সাত বছর ধরে পানির ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুত্ব্যবস্থা থাকলেও বিকল হয়ে পড়ে থাকে দীর্ঘদিন। পরে নিজের টাকায় সংস্কার করতে হয়। 

এত কিছুর পরও তাকে পরিবার নিয়ে থাকতে হয় অনাহারে-অর্ধাহারে। অস্থায়ী (মাস্টাররোল) নিয়োগের পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ১০০ টাকা বেতন দেয়। এ টাকা আর বাড়েনি। এ দিয়েই সংসার চালান তিনি। স্ত্রী ছাড়াও এক ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি করে এলেও কর্তৃপক্ষ তা শোনেনি।

লাশ কাটার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজটা করেই যেহেতু আমাকে জীবন নির্বাহ করতে হয়, সে জন্য যত কষ্টই হোক না কেন, এটি করতে হয়। মানবতার স্বার্থেই কাজটি করি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ মর্গে কোনো ডোম নেই। কাজটি না করলে পরিচিত-অপরিচিত লাশগুলোর কী অবস্থা হতো, একবার চিন্তা করুন। ’ 

আবদুর রহিমের বাড়ি বরিশালের কোতোয়ালি থানার টিবি হাসপাতাল রোড এলাকায়। বর্তমানে তিনি ফেনী শহরের সুলতানপুরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। রহিম বলেন, ‘সুলতানপুর এলাকায় বহু বছর ধরে আছি। অনেকটা স্থানীয় বাসিন্দার মতো হয়ে গেছি। এলাকার লোকজনও মোটামুটি সহযোগিতা করে। স্থানীয় মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়ি। সমাজের আর দশজনের সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। ’

তিনি জানান, যেসব মরদেহ এখানে নিয়ে আসা হয় তার মধ্যে বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তি। এ ছাড়া আত্মহত্যা, খুন ও সংঘর্ষে মৃতের মরদেহও আসে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের দেহ অনেক সময় অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব মরদেহ কাটা-ছেঁড়া করতে বেশি সমস্যা হয়। কাদের নামে একজন কর্মচারী সহায়তা করে থাকে।

রহিম দুঃখ করে বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে পরিবারের সদস্যদের ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারি না। ছেলেটি এখন তার ফুফুর কাছে থাকে। ’ 

এ বিষয়ে ফেনী সদর হাসপতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. অসীম কুমার সাহা বলেন, ‘সরকারিভাবে ডোম নিয়োগের কোনো বিধান নেই। জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে যেখানে দুই থেকে তিনজন ডোম দরকার, সেখানে একজনেরই নিয়োগব্যবস্থা নেই। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যারা কাজ করছে তাদের জাতীয় করে আরো ডোম নিয়োগের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘রহিমের আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে অনেক সময় চিকিৎসকরা তাকে নানাভাবে সাহায্য করে থাকেন। তাঁর চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যাপারে সব রকম চেষ্টা করব।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: