কেমন আছে সিদ্দিকুর?
শাহবাগে ‘পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে’ আহত হওয়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান বর্তমানে চেন্নাইয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন তার বড়ভাই নওয়াব আলী ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুল আহসান মেনন।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে সিদ্দিকুরের চোখের অপারেশন হয়। শংকর নেত্রালয়ের চিকিৎসক লিঙ্গম গোপাল এই অপারেশন করেন। অপারেশনের পর লিঙ্গম গোপাল জানান, সিদ্দিকুরের চোখের রেটিনার ৯০ শতাংশেরও বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। সিদ্দিকুর রহমান চোখে দেখতে পাবেন কিনা তা নিশ্চিত হতে আরও ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগবে।
ডাক্তাররা সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফেরার বিষয়টিকে এখন ভাগ্যের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিদ্দিকুরের বন্ধু শেখ ফরিদ।
তিনি বলেন, গত শনিবারও সিদ্দিকুর বাম চোখে কিছুটা আলো অনুভব করছিল। তাতে আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিদ্দিকুরের সঙ্গে কথা হয়েছে। সিদ্দিকুর জানিয়েছে, ডাক্তার তাকে দেখে গেছেন। কিন্তু তিনি কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি।
সিদ্দিকুরের বন্ধু আবু সাঈদ বিডি২৪লাইভকে বলেন, ড. বৃহস্পতিবার চোখ পরীক্ষা করে ছেড়ে দিবে। চেন্নাই থেকে রওনা দিবে শুক্রবার দুপুর ১২টায়। ঢাকায় বিকাল ৪ টায় পোছানোর কথা। আমরা ৭ কলেজের বন্ধুরা সে দিন বিমানবন্দের উপস্থিত থাকব। তার সাথে দেখা করবো। তার পাশে সব সময় ৭ কলেজের বন্ধুরা পাশে থাকবে।
এদিকে সিদ্দিকুর রহমানকে নিজের একটি চোখ দান করতে চান জাহাঙ্গীর কবীর নামের এক শিক্ষার্থী। যিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর কবীর বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে চোখ। সবকিছু প্রসেসিং হলে আমি আমার একটি চোখ দান করব। আমি অনেক ভেবে-চিন্তে এটা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হল চোখ। চোখ ছাড়া একজন মানুষ মৃতপ্রায়। তার কোন মূল্যায়ন থাকে না। ব্যক্তিগত জীবনে সে স্বস্তি পায় না। আমি সেটা গভীরভাবে চিন্তা করলাম। যদি একটা চোখে সিদ্দিকুর দেখতে পায় তার বাকি জীবনটা একটা পথে থাকবে। যদি একেবারে না দেখে তাহলে জীবনের কোনো মানেই থাকবে না, বেঁচে থাকার কোনো মানেই থাকবে না-এটা অনুধাবন করেই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলাম।’
জাহাঙ্গীর কবীরের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে। তার বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন। সাত ভাই-বোনের পরিবারের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন জাহাঙ্গীর।
চোখ দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবরা বারণ করলেও তাদেরকে বুঝিয়েছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘পরিবারকে আমি ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও আমি পরে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। আমার বন্ধু-বান্ধবরাও অনেকে বারণ করেছে। আমি তাদের বুঝিয়েছি যে, আমি এক চোখ দিয়েও চলতে পারব।’
জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘একচোখ দিয়ে দিলে আমার সমস্যা হবে না। গত দু’দিন থেকে একচোখে দেখার প্র্যাকটিস করছি। ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেয়ার আগে আমি তিন ঘন্টা এক চোখ বন্ধ করে শুধুমাত্র অন্য চোখ দিয়ে হেটেছি, কাজ করেছি। দেখেছিলাম, একচোখে মানুষ কতটুকু দেখে। যদিও একটু সমস্যা হয় তারপরেও আমি চলতে পারব, সে আত্মবিশ্বাস আমার আছে।’
চোখ দানের বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্দিকুরের কয়েকজন বন্ধুকে অবগত করেছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। বলেন, ‘এ ব্যাপারে শেখ ফরিদ, সাঈদ ভাইসহ সিদ্দিকুরের কয়েকজন বন্ধুর সাথে কথা হয়েছে। তারা সিদ্দিকুর এবং তার মা’কে বিষয়টি জানিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্দিকুরের বন্ধু আবু সাঈদ বিডি২৪লাইভকে বলেন, সিদ্দিকুর ভাইয়ের অপারেশন হল। এ বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলা হবে। তবে আগে অপেক্ষা করবো সিদ্দিক ভাইয়ের চোখের সর্বশেষ কি ফলাফল আসে। এজন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বিডি২৪লাইভ/এমআই
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: