হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা, দুই বোনের জামা ছিঁড়ে নিল ছাত্রলীগ নেতা!

প্রকাশিত: ১০ আগষ্ট ২০১৭, ০৮:৫৯ এএম

রোকনুজ্জামান পিয়াস: খুবই সামান্য ব্যাপার। বাজারের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে একজনের সঙ্গে অপরজনের ধাক্কা লাগে। তাতেই লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যায়। মুহূর্তেই ১৫-২০ জন লোক চলে আসে। তারা এসে আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে লাগলো। আমরা দু’বোনও তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করলাম। তারা আমাদের ওপর চড়াও হলো। আমাদের জামা-কাপড় ধরে টেনে ছিড়ে ফেললো। তাদের কাছে আমাদের কিছুই করার ছিলো না। আমরা দু’বোন কান্নাকাটি করতে লাগলাম। ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হয়ে তারাও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা তাদের উপরও চড়াও হয়। আমরা একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। পরে ছাত্রলীগের আরেক নেতা এসে তাদের নিবৃত্ত করে।

গতকাল এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান পিকুলের শ্লীলতাহানির শিকার হওয়া ইডেন কলেজের দুই ছাত্রীর একজন। তিনি বলেন, ওরা হয়তো আমার স্বামীকে মেরেই ফেলতে চেয়েছিলো। এদিকে ভিকটিম ছাত্রীদের একজন এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে জানিয়ে চকবাজার থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

মামলার বাদী ছাত্রীটি জানান, রোববার তিনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক ছাত্র তার স্বামী এবং ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তার ছোট বোন পলাশী মোড় বাজারে মাছ কিনতে যান। বাজারের মধ্যে চলাফেরার সময় তার স্বামীর সঙ্গে পিকুলের ধাক্কা লাগে। এ সময় পিকুল তার স্বামীকে ধমক দেন। পরে এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। ঘটনা এ পর্যন্তই। কিন্তু পিকুল ফোন করে লোকজন ডেকে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে ১৫-২০ জন লোক এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। এলোপাতাড়ি মারধরের একপর্যায়ে তার ছোট বোন গিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ওই বখাটেরা তাকে ধাক্কা মারে। এতে পিলারে তার মাথা ধাক্কা খায়। তিনি মাথায় আঘাত পান। বখাটেরা তার জামা-কাপড় ধরেও টান দেয়। এতে তার শরীরে থাকা ওড়না ছিঁড়ে যায়।

ইডেন কলেজের শেষবর্ষের এই ছাত্রী আরও জানান, একই সময়ে তিনি এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকেও মারধর করে। তারও জামা-কাপড় ধরে টান মারে। এতে তার জামার পেছনের অংশ ছিড়ে যায়। তাদেরকে রক্ষার জন্য বাজারের অন্যরা পিকুল ও তার লোকজনকে ঠেকাতে গেলে তারা তাদের ওপরও চড়াও হয়। মারধরের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতা পরে তাকে বুঝিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, তিনি না আসলে হয়তো তারা তার স্বামীকে মেরেই ফেলতো। পরবর্তীতে ওই ছাত্রী, তার স্বামী ও ছোট বোন ওই অবস্থাতেই চকবাজার থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরদিন সোমবার রাতে সেটা মামলা হিসেবে গণ্য করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তারা তিনজন পলাশী মোড়ের মাছের বাজারে মাছ কিনছিলেন। ওই সময় বাজারের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে পিকুলের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এতে পিকুল ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্বামীকে গালিগালাজ করে। তখন তিনি ও তার ছোট বোন এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় পিকুল তার অনুসারীদের ফোনে ডেকে আনে। তারা তার ও তার বোনের ওপর হামলা করে। হামলার একপর্যায়ে শ্লীলতাহানি করে। টানা-হেঁচড়াকালে তাদের দু’জনের জামা ছিঁড়ে দেয়। আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। একপর্যায়ে মাছের বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে পিকুল তাদের ওপরও ক্ষিপ্ত হয়। পরবর্তীতে এসএম হলের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সম্পাদক মো. রাসেল আহম্মেদ তাদেরকে উদ্ধার করেন।

এদিকে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম অর রশিদ তালুকদার জানান, ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তদন্তে সব অভিযোগেরই সত্যতা মিলেছে। এখন আসামিকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত পিকুলের বিরুদ্ধে সব আইনি ব্যবস্থাই নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।    

এদিকে এ ঘটনায় পিকুলকে রোববারই ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিজানুর রহমান পিকুলকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। সেইসঙ্গে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার কেন করা হবে না- তা জানাতেও কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে। সূত্র: মানবজমিন

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: