শেরপুরে মাল্টা চাষের উজ্জল সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১২ আগষ্ট ২০১৭, ০৮:২৮ পিএম

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে মাল্টা চাষ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় ও একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগের উজ্জল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টা চাষ করে এমনটাই প্রমাণ করেছেন উপজেলার একজন সফল উদ্যোক্তা। এমন উদ্যোক্তা তৈরি হলে আর সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শেরপুরের পাহাড়ি এলাকায় মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটবে এমনটা আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

&dquote;&dquote;

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারোপাহাড় অধ্যুষিত গ্রাম কালাকুমা। ওই গ্রামের একজন সফল উদ্যোক্তা আলহাজ্ব মোঃ মোশারফ হোসেন। জীবনের শুরুতেই যিনি জীবনের তাগিদে ঢাকায় চলে যান। পুরনো ঢাকায় প্লাস্টিক ব্যবসায় যার সুনাম রয়েছে। কিন্তু কংক্রিটের এ শহর আর কারখানার শব্দে উৎপাদিত কাড়ি কাড়ি টাকা তাকে ফেরাতে পারেনি। মাটির টানে ছুটে প্রায়ই আসেন এলাকায়।

&dquote;&dquote;

বর্তমান কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশ ও পরামর্শক্রমে তিনি নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন মাল্টার বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় খামারবাড়ি ঢাকার উদ্যান  তত্ত্ব বিভাগের তত্তাবধানে বারী-এ জাতের মাল্টার চারা গত ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোপন করেন তিনি। প্রায় ৩ একর জায়গা জুড়ে বর্তমানে প্রায় ৬’শর মতো গাছ রয়েছে। 

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ৩ বছর বয়স থেকে মাল্টার ফলন হতে শুরু করে। তবে ৫ বছর বয়স থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত মাল্টা ফলনের উপযুক্ত সময়। এসময় প্রতিটি গাছে গড়ে অন্তত দেড়শ মাল্টার ফলন ধরে। কিন্তু এ এলাকার মাটি এতোটাই উর্বর যে, মাত্র দুই বছর বয়স থেকে কিছু কিছু গাছে মাল্টার ফলন শুরু হয়। গত বছর বেশকিছু মাল্টা পরীক্ষামূলকভাবে রেখে দেওয়ার পর এর স্বাদ-গন্ধ দুটোই স্বাভাবিক পাওয়া গেছে।

এ বছরও প্রায় দেড়শ গাছে মাল্টার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ২০-৮০টি পর্যন্ত মাল্টা ধরেছে। স্বাদে-গন্ধে বাজারে আমদানীকৃত মাল্টা আর এখানে উৎপাদিত মাল্টার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য বুঝা যায় না। আর খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রায় প্রতিদিনই হাজী মোশারফের মাল্টার বাগানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন আগ্রহীরা।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মাল্টা চাষে খুব একটা ব্যয় নেই বললেই চলে। বছরের কার্তিক ও চৈত্র মাসে দুই দফায় কিছুটা গোবর বা এ জাতীয় সার দিলেই চলে। মাল্টা লেবু জাতীয় ফল বিধায় এতে কোন প্রকার কীটনাশক বা ঘনঘন সার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে মাল্টা চাষ লাভজনক ও ঝামেলাহীন।

মাল্টা চাষী হাজী মোশারফ হোসেন জানান, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর পরামর্শে আমি পরীক্ষামূলকভাবে ৩ একর জমিতে মাল্টার চাষ করেছি। তবে এর সাফল্য দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী বছর ১০ একর জমিতে মাল্টার বাগান করব।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল জানান, যেভাবে মাল্টার উৎপাদন ও গুণগত মান দেখা যাচ্ছে, এতে করে সন্দেহ নেই যে শেরপুরের পাহাড়ি এলাকার মাটি মাল্টা চাষে শুধুমাত্র উপযোগী নয় বরং বেশ উপযোগী। মাল্টা চাষে এ এলাকায় বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

শেরপুরের কৃষি খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন জানান, গাছের বয়স মাত্র দুই বছর কয়েক মাস। ইতিমধ্যেই বেশকিছু গাছে মাল্টার ফলন শুরু হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি, এখানে উৎপাদিত দেশীয় মাল্টা দিয়েই বাজারের যে চাহিদা, তা পুরণ করা সম্ভব হবে।

বিডি২৪লাইভ/এমঅাই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: