২১ জেলায় ৩৯ জন নিহত

প্রকাশিত: ১৭ আগষ্ট ২০১৭, ০৬:৩৯ পিএম

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ২১ জেলায় ৯৬ টি উপজেলায় ৩৯ জন মারা গেছে বলে জানা যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে বৃহস্পিতিবার ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বন্যায় ২১ জেলায় ৯৬ টি উপজেলায় ৩৯ জন মারা গেছে। ৩২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক লাখ ৭২ হাজার ২১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং সাত লাখ ৫২ হাজার পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুর জেলায়। এ জেলার ১৩টি উপজেলার সবগুলোয় বন্যাকবলিত। এ জেলায় ১১ জনের মৃত্যু ও ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৫ জন মানুষের। এছাড়াও কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১৬০ টি উপজেলার মধ্যে ৯০টি উপজেলা এখন বন্যায় প্লাবিত।

কুড়িগ্রাম: জেলার নয়টি উপজেলায় সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পানি উঠেছে। সদরে কল্যাণ এলাকায় ধরলা নদীর বাঁধ ভেঙে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়ক মণ্ডল গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের ২০ ফুট অংশ ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এমনকি কাঁঠালবাড়ী ও হুলোখানা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বাংটুর ঘাট এলাকায় বাঁধ ভেঙে ওই এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে দুই ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।এদিকে বন্যার কারণে ৬০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম ও বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ায় জেলার কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

গাইবান্ধা: এ জেলার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার হেক্টর আমন ধান ও পাটের জমি তলিয়ে গেছে। এবং ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সৈয়দপুরের খড়খড়িয়া নদীর বাঁ তীরে পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া এবং বসুনিয়া এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় সদর উপজেলার পাটোয়ারীপাড়া, নয়াবাজার, সুড়কিমিল, কাজীপাড়া, হাতিখানা, নতুন বাবুপাড়া, মিস্তিরিপাড়া এবং বাঁশবাড়ি মহল্লায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও: এ জেলায় প্রায় ১২ হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন এছাড়াও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পৌর শহরের ডিসিপাড়া, হঠাৎপাড়া, জলেশ্বরীতলা, খালপাড়া, গোয়ালপাড়া, হাজিপাড়া, টিকিয়াপাড়াসহ আট-নয়টি মহল্লা ও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ এবং হরিপুর উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে রোপা আমন, সবজিখেত ও জাগ দেওয়া পাট তলিয়ে গেছে।

পঞ্চগড়: জেলার চারটি উপজেলা ও একটি পৌরসভায় ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেসে গেছে পাট ও আমন খেত। অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ: এ জেলার কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সদ্য রোপণ করা রোপা ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও যমুনা নদীর তীরবর্তী চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া, এনায়েতপুর এলাকার বামনগ্রাম এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।

জামালপুর: এ জেলার ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, কুলকান্দি, বেলগাছা, সাপধরী ও নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ, বালিজুড়ি ও জোড়খালি ইউনিয়ন এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি ও চিকাজানি ইউনিয়ন এবং দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের কিছু অংশে বন্যার পানি উঠেছে। এতে ওই সব ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির কারণে ইসলামপুর-নোয়ারপাড়া রাস্তা, শিংভাঙা-আমতলি পাকা রাস্তা, দেওয়ানপাড়া-ভূতেরপাড়া রাস্তা, বাম বাজার-পশ্চিম বামনা রাস্তা, মেলান্দহ-মাহমুদপুর রাস্তা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এ উপজেলার ৫৫টি গ্রামে পানিবন্দী আছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৪৫০ হেক্টর আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মোস্তফা জানান: এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই আশ্রয় কেন্দ্রে চার লাখ ১১ হাজার মানুষ আশ্রয় নি‌য়ে‌ছে। বন্যায় ত্রাণ হিসেবে ৩ হাজার ২৫০ মে. টন চাল দেয়া হয়েছে। ১ কোটি ৩২ লাখ নগদ টাকা দেয়া হয়েছে। ১৬ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট দেয়া হয়েছে।

বি‌ডি২৪লাইভ/ এএইচএস/ এমআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: