ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছিল চীন

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৭, ০৪:০৪ পিএম

ভারত ও চীনের মধ্যে ডোকলাম ইস্যুতে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘ডোকলাম সমস্যা নিয়ে ভারত দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করার চেষ্টা করবে।’

রবীশ কুমার গত ১৫ আগস্ট লাদাখে ভারত ও চীনা সেনার মধ্যে সংঘর্ষের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘১৫ আগস্ট লাদাখে চীনের পক্ষ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল। ভারত তার পাল্টা জবাব দিয়েছে।’

&dquote;&dquote;গত ১৫ আগস্ট ভারত সীমান্ত লঙ্ঘন করে লাদাখে চীনা সেনাবাহিনী অনুপ্রবেশ করলে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি পাথর নিক্ষেপ ও ধস্তাধস্তি হয়। চীনা বাহিনীর কমপক্ষে ১৫ জন সেনা ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়লে সীমান্তে মোতায়েন ভারতীয় বাহিনী তাদের বাধা দেয়।

ওই ঘটনার পরদিন গত ১৬ আগস্ট চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং সীমান্ত লঙ্ঘন ও সংঘর্ষের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, লাদাখে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কোনো খবর তার জানা নেই। তিনি অধিকন্তু ভারত যাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ও দু’দেশের মধ্যে চালু থাকা প্রাসঙ্গিক রীতি–নিয়ম মেনে চলে সে সংক্রান্ত উপদেশ দিয়েছেন। সীমান্তে শান্তি, স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় চীনা সেনাবাহিনী সবসময় দায়বদ্ধ বলেও চুনয়িং মন্তব্য করেন।  

চীনা সেনার সীমান্ত লঙ্ঘন প্রসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেসময় কোনো মন্তব্য করা না হলেও ওই ঘটনার ৪ দিনের মাথায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বিষয়টির স্বীকৃতি দিয়েছেন।  

শুক্রবার তিনি চীনকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকে না। লাদাখের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দু’পক্ষের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে দু'টি বৈঠকও হয়েছে। একটি লাদাখে ও অন্যটি নাথুলায়।’

চীনের সঙ্গে যুদ্ধ হলে ভারতের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

এদিকে, ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ হলে তাতে ভারতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার  আশঙ্কা রয়েছে বলে বিশ্লেষকমহলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘এর ফলে ভারতের দেহে ‘স্পেনীয় ক্যান্সার’-এর মতো গভীর ক্ষত তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। স্পেনীয় ক্যান্সার নেপোলিয়নের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল, কিন্তু চীন-ভারত যুদ্ধ শুধু নরেন্দ্র মোদির মর্যাদাহানিতেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে না, গোটা বিশ্বে ভারতের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে।’

তাছাড়া ভারত যুদ্ধে পরাজিত হলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির অভিমুখ চীনের দিকে ঘুরে যেতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

নয়াদিল্লির পক্ষে জাপানি রাষ্ট্রদূতের সাফাই

এদিকে, গতকাল শুক্রবার নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত কেনজি হিরামাৎসু বলেছেন, ডোকলাম এলাকা নিয়ে মূলত চীন ও ভুটানের মধ্যে বিরোধ হলেও, ভুটানের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকায় ভারতীয় সেনাকে ওই এলাকায় যেতে হয়েছে।  

নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়ে জাপানি রাষ্ট্রদূত কেনজি হিরামাৎসু এরকম সাফাই দিলেও চীন বলছে, ডোকলাম ভারতের এলাকা নয়, এটি চীন ও ভুটানের মধ্যে বিতর্কিত এলাকা, সুতরাং চীন ও ভুটান নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে, তাতে ভারতের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।

তাছাড়া চীন গুরুতর যে মন্তব্য করেছে তা হল- ভারত যদি তৃতীয় পক্ষ হয়ে ভুটানে সেনা মোতায়েন করতে পারে তাহলে সে পাকিস্তানের হয়ে কাশ্মিরে অবস্থান করতে পারে। এরফলে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরো জোরালো হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতের দাবি, ‘সড়ক তৈরির নামে একতরফাভাবে বিতর্কিত এলাকার দখল নেয়ার চেষ্টা করে চীন সীমান্ত চুক্তি ভেঙেছে। এতে ভুটানের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়াসহ ভারতের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে। সেজন্য সেনা পাঠিয়ে সড়ক তৈরির কাজ আটকানো ছাড়া ভারতের আর কিছুই করার ছিল না। ত্রিদেশীয় সীমান্তে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে তিন পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে, ভারত এবং চীনের মধ্যে -এমন চুক্তি রয়েছে বলে ভারত জানিয়েছে। ডোকলাম ত্রিদেশীয় সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় ভারতের ওই দাবি জোরালো হয়েছে।

পানিপ্রবাহ নিয়ে ভারতকে অন্ধকারে রেখেছে চীন

অন্যদিকে, ভারত-চীন চলমান ডামাডোলের মধ্যে ডোকলাম ও লাদাখের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চীন শতদ্রু এবং ব্রহ্মপুত্রের পানির প্রবাহ নিয়ে ভারতকে রিপোর্ট দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন, হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য আদানপ্রদান করার জন্য ২০০৬ সালে দু’দেশের চুক্তি হয়েছিল। প্রতি বছর মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বারে বারে শতদ্রু আর ব্রহ্মপুত্রের পানির প্রবাহ নিয়ে চীন ভারতকে তথ্য দেবে বলে কথা ছিল। কিন্তু চীন চলতি বছরে এখনো পর্যন্ত কোনও রিপোর্ট দেয়নি।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহারসহ দেশের নানা জায়গায় যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে ব্রহ্মপুত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ার কারণ থাকতে পারে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাহলে পানির প্রবাহ সম্পর্কে চীন ভারতকে অন্ধকারে রেখে পরোক্ষভাবে প্রতিবেশিকে বিপদে ফেলতে চাইছে কী না সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।


বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: