মানসিক চাপ, রাগ, অভিমান ও আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৭, ০৬:০২ পিএম

আত্মহত্যা মহাপাপ। আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে শেষ করে দেওয়া। নিজের আত্মাকে নিজেই চরম যন্ত্রণা ও কষ্ট দিয়ে দেহ থেকে বের করে দেওয়ার নামই হচ্ছে আত্মহত্যা। নিজ হাতে নিজের জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। কেন এই আত্মহত্যা? কেনই বা তুচ্ছ কারণে নিজের অমূল্য জীবনটাকে কেন শেষ করে? আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মহত্যা? কেন? কেন? কেন? 

মানুষ কেন আত্মহত্যা করে তার কারণ আমার জানা নেই। তবে একটি মানুষ যখন প্রতারিত হয় তখন তার আকাঙ্খার মৃত্যু ঘটে। আর ঠিক তখনই নিজের ওপর অভিমান থেকে আত্মহত্যার পথ চলে আসে। আবেগময় মুহূর্তে অর্থাৎ যে বিষয়টা আরও গভীরভাবে চিন্তা করলে সমাধান হতে পারত।

অত্যাচারিত হতে হতে যখন কোনো মানুষ এমন একটা পর্যায় পৌঁছায়, যে অত্যাচারের প্রতিকার পাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না, তখন অনেকে আত্মাহুতি দিয়ে ফেলেন। দেখা গেছে যেসব নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করছে তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।

আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন যা মোটেও ঠিক নয়। আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য নানান গবেষণা হয়েছে। কিন্তু কমেনি এর প্রবণতা। কারণ যার যার মানসিক শক্তির উপরে আসলে এটা নির্ভর করে। আপনি কেন আত্মহত্যা করবেন? এমন কঠিন প্রশ্নের উত্তরে আসলে কোন গবেষণাই কাজে দেয়নি। যদি দিত তাহলে ঠিকই আত্মহত্যা বন্ধ করা সম্ভব হতো। কিন্তু সেটি হয়নি বরং বেড়েছে। কোন ধরনের মানসিক চাপ, রাগ, অভিমান থেকেই আসলে এখন আত্মহত্যার প্রবণতা দিনকে দিন বাড়ছে।

কেন এই আত্মহত্যা? তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যা? আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মহত্যা? কেন? কেন? চিকিৎসক হারুনের ভাষ্যমতে, ‘মানুষ কেন আত্মহত্যা করে তার উৎস সঠিকভাবে আজও আমি খুঁজে পাইনি। বলো তো, মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? একটি মানুষ যখন প্রতারিত হয়, যখন তার আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু ঘটে, তখন নিজের ওপর অভিমান থেকে সে আত্মহত্যা করে।

একটি সমীক্ষা বলছে আবেগের বশবর্তী হয়ে বেশির ভাগ মেয়েরা আত্মহত্যা করছে। অন্যদিকে পন্ডিতদের মতে, যাদের মানুসিক ক্ষমতা কম তারাই আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিচ্ছে।

আবেগময় মুহূর্তে অর্থাৎ যে বিষয়টা আরও গভীরভাবে চিন্তা করলে সমাধান হতে পারত, তা না করে অনেকে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন; যা মোটেও ঠিক নয়। যেমন অবৈধ গর্ভধারণ, প্রেমে প্রতারণা, পারিবারিক কলহ, বন্ধ-বান্ধবের সাথে অমিল ইত্যাদি ইত্যাদি। 

হয়তো অবৈধ গর্ভধারণ করা সেই নারী ভাবছেন, বিষয়টি যদি মানুষ জেনে ফেলে, তাঁকে মানুষ কী ভাববে? এ ভাবনা থেকে হয়তো আত্মহত্যা করেন। অথচ তিনি আত্মহত্যা না করলেও পারতেন। তিনি যদি ভুল করেই থাকেন, তা সংশোধনের উপায় ছিল। তিনি যদি প্রতারিত হয়ে থাকেন, এরও প্রতিকার ছিল। কিন্তু একটা সময় একটা বয়স মানুষকে হয়তো এত সুযোগ দেয় না। যে কারণে অনেক সময় মানুষ আত্মহত্যা করে; যা মোটেও কাম্য নয়। ভীষণ কষ্ট দেয়।

প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে ভাবছেন, কেন এমন ঘটল আপনার সাথে। আপনি কি একবার ভেবে দেখছেন আপনার চলে যাওয়ার পর (মৃত্যুর) কি হবে? আপনি মুক্তি নিতে চাচ্ছেন মৃত্যুকে বরণ করে। সত্যি কি আপনি মুক্তি পাচ্ছেন? যদি আমার উত্তর না হয়, তাহলে কেন এই আত্মহত্যা?

পারিবারিক কলহ থেকে মুক্তি পেতে আপনি আত্মহত্যা করার কথা ভাবছেন? আসুন আপনাকে বলছি, আপনি পরিবারের মত হতে পারছেন না। আপনার অনেক দোষ, ভুল, তাই পারিবারিক ভাবে আপনাকে একটু আলাদা ভাবে দেখছে। কিন্তু আপনার মৃত্যুর পর ওই পরিবারটার কি হবে ভেবে দেখেন তো? সত্যি কি আপনি তাদের মুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন? নাকি তাদের সারা জীবনের জন্য কাঁদিয়ে যাচ্ছেন? সব কিছু ধৈর্য নিয়ে সহ্য করুন। একদিন ঠিক সময় আপনার অনুকুলে আসবে। 

বন্ধ-বান্ধবের সাথে অমিল, মিলছে না তাদের সাথে? তাদের সাথে চলাফেরা বন্ধ করে দিন। নিজেকে তাদের থেকে শক্তিশালী করে তুলুন। তাদের থেকে আলাদা থাকুন। নিজের পরিবারকে সময় দিন। গল্প করুন। টিভি দেখুন। খোলা যায়গায় মুক্ত মনে চিন্তা করুন। আত্মহত্যায় সমাধান না। 

আসুন আমরা নিজ নিজ যায়গা থেকে নিজের মতো করে পাশের মানুষ গুলোকে সচেতন করি। একটি আত্মহত্যা, একটি পরিবারের সারা জীবনের কান্না।


আরেফিন সোহাগ,
লেখক ও সাংবাদিক
মোবাইল: +৮৮০১৭৩১৬৬৪৬৬৬
ইমেইল: [email protected]

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: