সংক্রামক রোগের মহামারি ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা (ভিডিও) 

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৫:৫৮ পিএম

বিডি২৪লাইভ টিম,
কক্সবাজার থেকে:

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রতিদিন হাজারও রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এত দ্রুত উন্নত করা সম্ভব না হওয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে রোহিঙ্গারা। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সংক্রামক ব্যাধি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার। অপরদিকে প্রতিদিনই শত শত আহত ও অসুস্থ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালগুলোর। এই বিষয়টি নিয়ে বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভের সাথে কথা হয় কক্সবাজার জেনারেল সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরীর। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকার আকারে বিষয়টি তুলে ধরা হলো:

বিডি২৪লাইভ: রোগী কেমন আসছে? তাঁদের অবস্থা কেমন দেখছেন?
ডা. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: আহত রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু মেডিকেল টিম প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে। ওখান থেকে যে গুলো জটিল (ইঞ্জুর্ড) আঘাতপ্রাপ্ত সে গুলোকে এখানে (রেফার্ড) স্থানান্তর করা হয়। এ পর্যন্ত অনেক রোগীই এসেছে তাঁর মধ্যে আঘাত প্রাপ্ত রোগী ছিল ১১৪ জন। এর মধ্যে ৩৪ জন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে। আহতদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ ছিল। সঙ্গে মাল্টিপল ফ্রেকচারও (অনেক জখম) ছিল।

বিডি২৪লাইভ: আগুনে পোড়া রোগী কেমন? তাঁদের অবস্থা কি এখন?
ডা. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: বেশ কয়েকটি পোড়া রোগী ছিল। যাদের আমরা আলাদা ট্রিটমেন্ট (সেবা) দিচ্ছি। অনেকের দেহের ২০ থেকে ৪০ ভাগই পুড়ে গেছে। পোড়া শিশুদের অবস্থা আশঙ্কা জনক।

বিডি২৪লাইভ: রোহিঙ্গাদের চিকিৎসায় আলাদা কোন ব্যবস্থা আছে কি?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: অনেক রোগী ও সীমিত ব্যবস্থা হওয়াতে আমাদের বেশ কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠছে। তবুও আমরা তাঁদের আলাদা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে, ৩ সিফটে সার্সিং সুবিধা চালু রেখেছি। জটিল অপারেশন গুলোও সেখানে করা হচ্ছে। এখানে ২৯ জন মেডিসিন বিভাগে ছিল। তাঁর মধ্যে ১৪ জন চিকিৎসা নিচ্ছে।। ডাইরিয়া ব্লকে ৫ জন ভর্তি আছে। অপুষ্টি জনিত রোগির সংখ্যাও অনেক বেশি। এখানে দুইটা নরমাল ও দুটা সিজার ডেলিভারি হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ: দৈনিক কত জন রোগী আসছে?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: আমাদের হাসপাতালটা ১’শ বেডের, প্রশাসনিক ভাবে এটাকে ২৫০ বেডে উন্নিত করা হয়েছে। যদিও স্ট্রাকচারটা ১’শ বেডের। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনি আমরা ৫’শ এর অধিক রোগীকে সেবা দিচ্ছি। আমাদের এক্সিস্টিং ম্যান পাওয়ার দিয়ে (অতিরিক্ত জনবল)। এটা আমাদের জন্য খুবই একটা বার্ডেন।এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।

বিডি২৪লাইভ: সংক্রামক ব্যাধির সম্ভাবনা কেমন? এটা কতটা মারাত্মক হতে পারে?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: যেহেতু ওয়াটার এন্ড স্যানিটেশন একটা বড় ইস্যু। কিছু দিন পরে সংক্রামক ব্যাধি মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে।

বিডি২৪লাইভ: শিশুদের জন্য এই পরিস্থিতিটা সমস্যার। এটা কিভাবে কাটিয়ে উঠা সম্ভব?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: শিশুদের ক্ষেত্রে বড় একটা ইস্যু হচ্ছে ইমুনাইজেশন। আপনারা জানেন, রাখাইনে শিশুদের মিয়ানমার সরকার টিকা দেয় না। এই শিশুগুলো কিন্তু টিকা প্রাপ্ত (ইমুনাইজ) না। আমাদের ন্যাটিব পিপলের (স্থানীয়দের) সঙ্গে মিশে কিন্তু আমাদের টোটাল ইমুনি সিস্টেমকে নষ্ট করে দিতে পারে। এই বিষয়টা আমরা স্বাস্থ্য বিভাগে এড্রেস করেছি। অলরেডি কিন্তু আমরা টিকা দান কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। প্রতিদিন ৪-৫ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ: কতজন শিশু ও নারীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: টোটাল ৩৪ জন শিশু ও ১’শ নারী কে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়ও অনেক পুরুষ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ: ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: অবশ্যই, চিকিৎসা ও ঔষধ ফ্রি। যারা আগে থেকে রেজিস্টার রোহিঙ্গা, তাঁদের জন্য উএনএইচসিআর (জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা) এর পক্ষ্য থেকে আলাদা ব্যবস্থা আছে।

বিডি২৪লাইভ: সরকার যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে? আপনাদের আরো প্রয়োজন আছে কিনা?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: অবশ্যই আছে। এটা গানিতিক হারে অবশ্যই সোজা, ৫ লাখ এক্সট্রা বার্ডেন। অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আমরা আমাদের চাহিদা পাঠিয়েছি। আপনারা জানেন এখানে অনেক বিদেশি সংস্থা আছে, তারাও আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ: সরকার যথেষ্ট সাপোর্ট দিচ্ছে কিনা?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: আপনি জানেন এখানে প্রধানমন্ত্রী ভিজিট করে গেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে গেছেন। খুবই পজিটিবলি নিয়েছে। নির্দেশ দিয়ে গেছেন তাঁদের সর্বোচ্চ সেবা করার জন্য।

বিডি২৪লাইভ: আপনি ওয়াটার এবং স্যানিটেশন নিয়ে কথা বললেন, এটা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে, এটা ছাড়াও রোহিঙ্গা যারা প্রবেশ করছে, তাঁদের মাধ্যমে কোন ভাইরাস প্রবেশ করছে কিনা? সেই বিষয়ে আপনাদের নজরাদারি কেমন?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: সংক্রামক ব্যাধি ছাড়াও ভাইরাস হেপাটাইটিস সি, এবং এইচআইভি ধরা পড়েছে। আমরা একটা এইচ আইভি রোগী শনাক্ত করেছি। অলরেডি আমাদের হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। চট্রগ্রামের পরেই কক্সবাজারেও এইচআইভি ম্যানেজম্যান্ট সেন্টার আছে, এর সহায়তায় আমরা ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি। আর আমি ব্যক্তিগত ভাবেই এই রোগীর ফিজিশিয়ার হিসেবে কাজ করছি।

বিডি২৪লাইভ: যারা স্থানীয় তাঁদের জন্য বিষয়টা কতটা চিন্তার? তাঁরা কি করতে পারে?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: আসলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আমাদের দেশে নতুন কিছু না। আগেও আসতো, এখনো আসছে। এবার সংখ্যাটা একটু বেশি। সংক্রামক ব্যাধি যেন না ছড়ায়, সেই বিষয়ে আগে থেকেই আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া আছে। যেহেতু এবার বেশি আসছে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। আশা করি এটা আমরা সমাধাণ করতে পারবো। স্থানীয়দের চিন্তার কিছু নেই।

বিডি২৪লাইভ: বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা, মল ত্যাগের স্বাস্থ্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। এটা কিভাবে দেখা হচ্ছে?
ড. মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান: এই বিষয়টা নিয়ে জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা যায়। প্রায় ৬০০ নতুন টয়লেট স্থাপন করা হচ্ছে। একই সাথে বাসস্থান নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের যেহেতু লজিস্টিক সাপোর্ট কম, তাই সংক্রমন আমরা প্রতিকারারে চেয়ে প্রতিরোধের দিকে বেশি জোর দিচ্ছ।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাযজ্ঞ। যার নেতৃত্বে রয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়। জাতিসংঘের হিসেব মতে সহিংসতায় এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে হাজারের অধিক রোহিঙ্গা, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ঘরবাড়ি। ৫ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভিডিওটি দেখতে  এখানে ক্লিক করুন...

বিডি২৪লাইভ/এমআর/এএস/এসএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: