‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের কাছে যে আশা করেছিল তা পায়নি’

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৪:৪১ পিএম

সম্প্রতি হঠাৎ চালের মূল্য বৃদ্ধি, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশের স্বনামধন্য অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডি২৪লাইভ ডটকমকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বাসায় এ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিডি২৪লাইভের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, আব্দুল্লাহ আল মামুন।

বিডি২৪লাইভ: বর্তমানে দেশে চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ এবং এর সমাধান কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
আব্দুল্লাহ আল নোমান: আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বর্তমানে সরকারের হাতে পর্যাপ্ত চাল মজুদ নাই। বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ্বে সরকারি কারণে বিদেশ থেকেও চাল আমদানি করেনি ফলে দেশে চাল সংকটের সৃষ্টি হয়েছে আর এই সংকট আছে বলেই মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।

এখন আমাদের চালের চাহিদা আছে। আমাদের দুটি দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। একটি সিলেট অঞ্চলের হাওরের বন্যা অপরটি ২৭ টি অঞ্চলের বন্যায়। ফলে স্বাভাবিক চালের যে উৎপাদন হওয়ার কথা ছিলো সেটি হয়নি। ফলে দেশে চালের সংকট তৈরী হয়েছে।

এ ছাড়াও সরকারের কাছে কমপক্ষে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুদ থাকার কথা কিন্তু পত্র-পত্রিকা থেকে দেখেছি খাদ্য অধিদপ্তরে বা জাতীয় খাদ্য গুদামে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টনের মত চাল মজুদ আছে। যেটা এক সপ্তাহের চালও না।কাজেই এ অবস্থায় অবিলম্বে যদি আমদানি সুবিধা না দেয়া হয় তাহলে এই সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে।

এর সমাধানগুলো হলো: যেভাবেই হোক প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে শুল্কমুক্ত বা ভ্যাট বিহীনভাবে চাল আমদানি করতে দিতে হবে। দেশে যখন স্টক থাকবে তখন মজুদাররা আর মজুদের সাহস পাবে না। যে কোনো মূল্যে চাল আমদানি করে সে গুলো স্টক করা। তাহলে চাউলের সংকটের সমস্যা সমাধান হতে পারে। শুধু মাত্র মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং গুদাম চেক করে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কাজেই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হলো আমদানি বাড়ানো এবং কৃষকদের পরবর্তী ফসলের জন্যে যে সুযোগ-সুবিধা ( বীজ, সার) প্রভৃতি আমদানি করে তাদেরকে বিনামূল্যে প্রদান করতে হবে। সেই সাথে যেহেতু তাদের দুটি ফসল মারা গেছে সেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে এককালীন অর্থ প্রদান করতে হবে। কিন্তু সেটা সুদ বিহীনই শুধু না যেটা একেবারে ক্ষতিপূরণের মত। তারা যাতে করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তাহলে হয়তো আমরা আমাদের সামনের সময়ে যে সংকট তা কাটিয়ে উঠতে পারবো। অর্থ্যাৎ কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগীতা দরকার এ বছর।

এ বিষয়ের জন্য সরকারের দায় হলো, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুদ থাকার কথা ছিলো সরকার সেটা রাখতে পারেনি। মিলারের কাছ থেকে সরকার যে চাল কেনার কথা বলেছে সেটা তো দেশেরই চাল তাই তাদের থেকে চাল না কিনে আমদানি করে বাড়তি স্টক করলে চাহিদা অনুযায়ী আমরা সেটা ব্যবহার করতে পারতাম।কিন্তু সরকার সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

শুধু চাল নয় যেকোনো জিনিসের সরবরাহ না থাকলে যদি চাহিদা বৃদ্ধি পায় তাহলে সে জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পাবেই উল্লেখ করে সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগে একসময় চালে দামের উপর শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় নির্ভর করত।কিন্তু আজকে সেভাবে চালের গুরুত্ব দেয়া হয়না। আমার মনে হয় সরকারের অভিজ্ঞতা নেই, দূরদর্শিতা নেই কিভাবে এই সংকট সমাধান করা যায়।যা প্রথমেই করার ছিলো কিন্তু সরকার সেটা করতে পারে নাই।যার ফলে একটা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে এবং এখনও এর তীব্রতা কমেনি।

তিনি বলেন, বাজারে মিথ্যা একটা প্রচারনা করা হচ্ছে যে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা মূল্য কমানো হয়েছে।কিন্তু বাজারে গিয়ে ক্রেতারা সেটা পাচ্ছেনা। আর একটা বিষয় শোনা যাচ্ছে সেটা হলো বাজারে এখন চাউল কেনার ক্রেতা নেই। কারণ যে বিক্রি করছে সে মনে করছে কখন যেন পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায় আর যে ক্রেতা সে মনে করছে দুদিন পর হয়তো দাম কমবে। এই অবস্থাতে বাজারে এখন ক্রেতা শূণ্যতার সৃষ্টি হচ্ছে।এখন মানায়মার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমস্যার কারণে অনেকেই এই বিষয়টিকে মনে করেছে আড়ালে চলে গেছে কিন্তু চালের মজুদ না বাড়ানো গেলে এটাই এক সময় প্রধান সংকট হয়ে দাঁড়াবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

&dquote;&dquote;

বিডি২৪লাইভ: বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে কিভাবে দেখছেন এবং এই সমস্যা সমাধানের উপায় কি হতে পারে ?
আব্দুল্লাহ আল নোমান: রোহিঙ্গা সমস্যা তো আজকের না। তাদের ইতিহাস ১৩শত বছর আগের।সেই থেকেই রোহিঙ্গাদের উপর অনেক নির্যাতন হয়ে আসছে। শুধু একবার না। অনেকবার মায়ানমারের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠি তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছ।কাজেই এটা একটা বড় সমস্যা আরো বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশ চীন, ভারত, রাশিয়া এবং আমেরিকাসহ সবাই দেখছে মায়ানমারে কি ধরনের নির্যাতন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটা একটা স্বর্ণ ক্ষণি। এই স্বর্ণ ক্ষণি ভাগ বাটোয়ারার কথাও চিন্তা করছে সবাই।

চীন, ভারত, রাশিয়া এবং আমেরিকা সবাই ওখানে ইনভেস্ট করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের যে ইনভেস্টমেন্ট সিকিউর হোক তা তারা চায় না। ফলে বিশ্ব মানবাতার যে বিপর্যয় ঘটেছে সে অনুসরে কথা বলছে সবাই কিন্তু কার্যত সে রকম ব্যবস্থা গ্রহন করেনি কেউ।

বাংলাদেশ সরকার সিকিউরিটি কাউন্সিলের বিষয়টি নিয়ে যাওয়ার জন্যে কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের নেতারা যেভাবে বক্তব্য দিয়েছে যে সেখানে ধর্ষণ হয়েছে, আগুন দিয়ে বাড়ি-ঘর পোড়ানো হয়েছে, প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, সমস্ত জাতীকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে।এই যে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থা গুলোর যে বক্তব্য আর বাংলাদেশের বক্তব্য এক না।

তিনি বলেন, মায়ানমার একাধিকবার আমাদের আকাশ সীমা লঙ্ঘণ করেছে কিন্তু আমরা সেরকম শক্ত কোনো জবাব বা বক্তব্য দিতে পারিনি। আমরা বলছি না যে আর একটা বন্দুক দিয়ে মেরে দাও কিন্তু তারা যে বার বার সীমা লঙ্ঘণ করছে সেটা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা উচিত ছিলো। মায়ানমারের এই আচারণ আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমান জনক বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই রাজনীতিবিদ।

এই সমস্যার সমাধান খুব সহজে হবেনা মন্তব্য করে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, তবে বাংলাদেশে সুবিধার জন্য বাংলাদেশ যদি কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। অবিলম্বে তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্ব বাসীর মাধ্যমে মায়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

এ ছাড়াও আর একটা ব্যাপার হচ্ছে সেফজোনের ব্যবস্থা করা। একটা এলাকা নির্ধারণ করে সেখানে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। অনেকেই মায়ানমারের ভিরতেই এটা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে আরো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা দরকার। আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো এই সেফজোন সম্পর্কে কি মনে করে সে সম্পর্কেও ধারনা নেয়া দরকার।

বিডি২৪লাইভ: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারে পদক্ষেপ যথাযথ কি না?
আব্দুল্লাহ আল নোমান: আমরা কিছু বললে তো সরকার মনে করে যে বিরোধী দলের কাজই বিরোধীতা করা কিন্তু আমরা তো চোখে আঙ্গুল দিয়েই দেখিয়ে দিচ্ছি। এই ঘটনা যখন শুরু হলো। রোহিঙ্গারা যখন মায়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসতে শুরু করলো তখন বাংলাদেশ থেকেও আবার পুশব্যাক করা হল। একদিকে মায়ানমার থেকে নির্যাতিত হচ্ছে অপর দিকে বাংলাদেশেও ঢুকতে পারছে না সেই সময়ে অনেক নৌকা বা ট্রলার ডুবে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গারা প্রাণ হারিয়েছে। যাদের লাশ পরে পাওয়া গেছে। সেই সময়ে সাথে সাথে আমাদের নেত্রী লন্ডন থেকে নির্যাতিত এই রোহিঙ্গাদের বিপদের দিনে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার প্রথম দিকে তাদেরকে আশ্রয় দিতে চায়নি। পরে বাধ্য হয়ে আশ্রয় দিয়েছেন।মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে রোহিঙ্গারা যে ব্যবহার আশা করেছিলো তারা সেটা পায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিডি২৪লাইভ: রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে বিএনপিকে নিয়ে নিউইর্য়কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কিভাবে দেখছেন?
আব্দুল্লাহ আল নোমান: রোহিঙ্গা ইস্যুটি একটি জাতীয় সমস্যা।এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারেনা।এটা একটা মানবিক ইস্যু। এ মানবিক ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। এ সমস্যা টা একটি দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা। জাতীয় ঐক্য ছাড়া এ সমস্যা সমাধান করা যাবেনা। কারণ এতো মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে কোনোভাবেই ধারণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। ইতোমধ্যে পাহাড় কেটে, গাছ পালা কেটে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে আমাদের দেশের বড় ধরনের পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। 

এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। আমরা যেন বিশ্বকে বলতে পারি যে এই ইস্যুতে আমরা জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ আছি। আপনারাও আমাদেরকে সহযোগীতা করুন। যারা এই বিপর্যয় ঘটিয়েছে তাদেরকে বিচার হওয়া উচিত। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকেই অগ্রনীভূমিকা পালন করতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম যে কার্যক্রমটা ছিলো শরনার্থীদের রক্ষা করা কিন্তু তাদের কার্যক্রমে তা দেখা যায়নি। তারা শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিকতা করেছে। ঐক্যবদ্ধ হলেই তো জবাব দিহিতা আসবে। তারা ( সরকার) জবাব দিহিতার জায়গায় থাকতে চায় না। তারা সেখানে ভয় পায়। তারপর সংকট সমাধানে বিরোধী দল হিসাবে বিএনপির যে কার্যক্রম তা তাদেরকে করতে দিতে হবে।কিন্তু তারা সেটা চায়না। তারা চায় ক্ষমতায় আবার কিভাবে যাওয়া যাবে। সেখানে মানুষ মরলো কি বাচলো, মানবিক দায়িত্ব পালন করা দরকার আছে কি নাই সেটা দেখার বিষয় নয়। তা নাহলে সারা জাতি বলছে এই বিষয়ে ঐক্য হওয়ার কথা কিন্তু সরকার এ বিষয়ে নারাজ।

সরকার বলেছিলো চায়না, ভারত, রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো কিন্তু এই ইস্যুতে কেউ এখন পাশে নেই। তাদের ধারণাও নেগেটিভ। তারা বলেছে এ বিষয়ে মায়ানমারের সাথে কথা বলবে।পররাষ্ট্রনীতিতে সরকার যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা এই ঘটনাই প্রমাণ করে।

বিডি২৪লাইভ/এএএম/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: