‘খালেদাকে জেলে রেখে, শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না হাসিনা’

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৩৩ পিএম

ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক জীবন, দেশের চলমান অবস্থা, আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বিডি২৪লাইভ'র সঙ্গে একান্তে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী। তার সাক্ষাৎকারটি নেন বিডি২৪লাইভ’র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, আব্দুল্লাহ আল মামুন।

বিডি২৪লাইভ: আপনার ব্যক্তিগত জীবন (শৈশব, স্কুল জীবন, মজার কোনো স্মৃতি) ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু বলুন?
আতাউর রহমান ঢালী: নারায়ণগঞ্জে আমার জন্ম। আমার মা-বাবা দুজনই বৃটিশ আমলে শিক্ষক ছিলেন। আমাদের ৪ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আমিই সবার ছোট। আমার স্কুল ও কলেজ জীবন আমি নারায়ণগঞ্জেই শেষ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করি। আসলে ছোট বেলার স্মৃতিগুলো এই বয়সে মনে করা খুব সহজ নয়। অনেক স্মৃতিই হারিয়ে গেছে আবার কিছু স্মৃতিতো মানুষের থাকেই।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যখন হয় তখন আমার খুব স্বাভাবিক ঘরেই জন্ম। জন্মের পর কখনও প্রাচুর্য্য দেখিনি। ছোট ঘরে জন্ম হলেও আমাদের পরিবারের পরিবেশটা খুব সুন্দর ছিলো। ছোট ঘরে মানুষ হয়েছি কিন্তু বাবা- মায়ের আদর্শটা আমাদের সব সময় নাড়া দিত। বাবার সাথে আমার স্মৃতিটা হলো যে ছোট বেলায় আমরা সবাই একসাথে যখন খেতে বসতাম তখন তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা আমাদেরকে শুনাতেন। সেই সময় আমার বাবা বলত জ্ঞানের কোনো সিলেবাস নেই এটার কোনো সারটিফিকেটও নেই। এ কথাটা ওনি আমাদের সব সময়ই বলত।

আমি যখন ৫ম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষা দিব। সেই সময়ে বৃত্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো আমার বাবা- মায়ের কাছে আগেই চলে আসত। যার ফলে পরীক্ষার আগে আমার মা আমাকে পড়াতো না। বিষয়টি পড়ে বুঝে ছিলাম। আমার বাবা অত্যন্ত মানবিক গুণাবলীর একটা লোক ছিলেন। সেই লোকটাকে ১৯৭১ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমার মায়ের সামনে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এটাই হলো আমার জীবনে একটা বড় দুঃখ। তার লাশটাও আর কখনও খুঁজে পাইনি। এটা একটা বড় ট্রাজেডি আমার জীবনে।

বিডি২৪লাইভ: আপনার রাজনৈতিক জীবন কিভাবে কেটেছে?
আতাউর রহমান ঢালী: ১৯৬৬ সালে আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত হই। তখন আমি ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম। পরিবার থেকে কখনো কঠিন ভাবে বাধার সম্মুখীন হয়নি। সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ। তখন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করি। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে মিছিল বের করি। আমার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস হচ্ছে আমি কখনো অনূকুল অবস্থায় রাজনীতি করতে পারিনি। বিএনপিতে যোগ দিয়েছি বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়। ১৯৮৪ সালের পর থেকে আমি আর কোনো রাজনীতিতেই যুক্ত ছিলাম না। আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় চলে গেলাম। সেখানে প্রায় দশ-বার বছর থাকলাম পুরো পরিবার নিয়ে। এখনও সবাই সেখানেই আছে কিন্তু সেখানে আমার মন টিকল না। দেশে চলে আসলাম। তারপর ম্যাডামের সাথে কথা হল। তিনি আমাকে আহ্বান জানালেন। তাই চিন্তা করলাম একটা সময় যখন রাজনীতি করেছি এখন না হয় গণতন্ত্রের জন্য শেষ জীবনটা বিলিয়ে দিয়ে যাই। তাই এই দলের সাথে যুক্ত হয়ে পরলাম ২০১৬ সালে।

বিডি২৪লাইভ: প্রধান বিচারপতির সাথে ক্ষমতাসীনদের এ রকম আচরণে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না, বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
আতাউর রহমান ঢালী: প্রধান বিচারপতির সাথে আওয়ামী লীগের ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নাই। দ্বন্দ্বটা হলো আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুইটি স্তম্ভ তাদের আয়ত্তে নিয়েছে অন্যায়ভাবে প্রশাসন এবং অনির্বাচিত পার্লামেন্ট। এখন বিচার বিভাগকে তাদের আয়ত্তে নিতে চায়। যেটা চরম একটা অন্যায় কাজ। বিচার বিভাগের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা আজকে এই আওয়ামী লীগ, ১৯৫৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিব বলেছিল।

আওয়ামী লীগ মুখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলে, তাহলে কি কারণে বিচারপতির রায়ের বিরুদ্ধে তারা আস্ফালন করে। এই আস্ফালন তো তাদের বিচার বিভাগের প্রতি অবমাননার বর্হি প্রকাশ। এটা তারা করতে পারে না। এটা একটা সভ্য দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অত্যন্ত দুঃখজনক। গণতন্ত্রকে হত্যার সামিল। আওয়ামী লীগ মুখে স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে কিন্তু বাস্তবে স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী সকল কাজ করছে।

&dquote;&dquote;

বিডি২৪লাইভ: চলমান সংকট সমাধানে ও আন্দোলনে সফল হতে গেলে বিএনপির কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত?
আতাউর রহমান ঢালী: গত ৮ বছরে বিএনপির উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে। পাকিস্তান থেকে শুরু করে এ যাবত কালের ইতিহাসে এটা নাই। বিএনপির মহাসচিবের নামে ১৬৩টি মামলা। দেশের ৩বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উনি বিচার বিভাগকে সম্মান দেখিয়ে মামালার সাত দিন পরে পরে কোর্টে হাজির হন। আজকে উনি বিদেশে এবং তার সমস্ত কিছু কোর্টকে তিনি জানিয়ে বিদেশে গেছেন। আইনগত ভাবে উনি বিদেশে আছেন। কি করে উনার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু করলেন। আজকে বিএনপি কোথায় আছে? আমরা একটা মিছিল করতে পারি না। দলের ১৬৩ জন কর্মীকে গুম করা হয়েছে। এমন কোনো নেতা নেই যার নামে দশটি মামলা নেই। এই যে স্টিম রোলার, এই যে স্বৈরশাসন বাংলাদেশে আমরা আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান তার বাপের শাসনও দেখছি কিন্তু এই রকম শাসন কখনো দেখিনি। আগামী দিনে আমরা অবশ্যই আন্দোলনে যাব। এই আন্দোলনের ভিত্তি আমরা এখন থেকেই প্রস্তুত করছি।

বিডি২৪লাইভ: বেগম জিয়া দেশে ফিরলে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
আতাউর রহমান ঢালী: আমাদের এটা নিয়ে কোনো ভয় নেই। কারণ ১৯৬৯ সালের আগে শেখ মুজিব বড় নেতা ছিলেন না। শেখ মুজিবকে বড় নেতা বানিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। একই ঘটনা দেখেন এরশাদ ক্ষমতাচ্যূত হয়ে যদি জেলে না যেত এরশাদ পাঁচটা সিট পেত না। বেগম খালেদা জিয়া এখনও দেশের একমাত্র জনপ্রিয় নেত্রী। মামলা দিলে ও জেলে নিলে তিনি আরো জপ্রিয়ই হবেন। বেগম খালেদা জিয়াকে জেলের ভিতরে রেখে হাসিনা শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। তারপরও এ বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। ম্যাডাম এর আগেও বন্দি ছিলেন কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা তো বন্দি ছিল না।

বিডি২৪লাইভ: আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনা কি?
আতাউর রহমান ঢালী: আমরা নির্বাচন চাই। বিএনপি গণতান্ত্রিক পার্টি। আর গণতান্ত্রিক পার্টির মূল বিষয়টাই হলো নির্বাচন। বেগম জিয়া খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরেই তিনি সহায়ক সরকারের রুপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন এবং সেই সহায়ক সরকারের ভিত্তিতেই আমরা নির্বাচন চাইব এবং আমি আশা করি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।

বিডি২৪লাইভ: বিএনপি কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
আতাউর রহমান ঢালী: সাধারণতই যে দল করি চাই সে দল আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসুক। যদিও একাধিকবার এর আগেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। আবারও আসুক এটাই আমার কম্য। যে যাই বলুক হয়তো আমাদের অনেক ভুল ছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বিএনপির সমক্ষ হতে পারেনি। আর পারবেও না।

বিডি২৪লাইভ/এএএম/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: