ইসিতে আ’লীগ-বিএনপির প্রস্তাব: পাল্টাপাল্টি সমালোচনা 

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৭, ০৭:৪৬ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে দেশের সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে রাজনৈতিক দলের দেয়া সকল প্রস্তাবনা জমা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে দেশের সবচেয়ে বড় দুটি (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অপরের প্রস্তাব নিয়ে করছে পাল্টাপাল্টি সমালোচনা।

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে গত ২৪ আগস্ট শুরু হয় সংলাপ। গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় পার্টি (জেপি) সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে শেষ হয় ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ। গত ১৫ অক্টোবর ইসির সঙ্গে সংলাপে বসে ২০ দফা প্রস্তাবনা দেয় বিএনপি। অপর দিকে, ১৮ অক্টোরব ১১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির ২০ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছেঃ- নির্বাচনের জন্য সহায়ক সরকার নিশ্চিত করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, ১/১১ এর আমলে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, গুম–খুন–হয়রানি বন্ধ করতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সভা সমাবেশ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কার্যকর সংলাপের উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে, ই-ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার করা যাবে না, সব দলের জন্য এখন থেকে সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরি করতে হবে, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের অন্তত সাত দিন আগে থেকে মোতায়েন করতে হবে, সিইসি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না পুরো ইসি বসে সিদ্ধান্ত নেবে এবং ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে, ২০০৮ সালের পূর্বে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসন সমূহের যে সীমানা ছিল সেই আসন সীমানা পুনর্বহাল করতে হবে।

আওয়ামী লীগের ১১ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছেঃ- শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহার, নির্বাচনের আগে নির্বাচনী এলাকার পরিবর্তন না করা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নির্বাচনের দিন বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রদান এবং প্রয়োজনে নির্বাচনের দিন বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনা মোতায়েনের মত বিষয়াবলী।

বিশিষ্টজনদের মতে, দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো ইসির সঙ্গে সংলাপে নিজেদের প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরলেও দেশের মানুষ ও ইসির নজর রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপির প্রস্তাবনার দিকে।

এদেকি সংলাপে বসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রশংসা করেছেন। সংলাপের পর বিএনপি নির্বাচন কমিশনের প্রতি কিঞ্চিৎ আস্থার কথা প্রকাশ করেছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কোনভাবেই সংবিধান এবং কমিশনের আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারবে না। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান এবং নির্বাচন কমিশনের অন্তর্ভুক্ত আইন অনুসারেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। সেদিক থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া প্রস্তাবনাকে মাথায় রেখেই কাজ করবেন বলেও জানা গেছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আওয়ামী লীগের দলীয় লোক। তার পক্ষে আওয়ামী লীগের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। বিএনপি যতই ভালো প্রস্তাবনা দেখ না কেন তা মানা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। এই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। গণতান্ত্রি পন্থাকে সমুন্নত রাখতে ইসির সংলাপে অংশ নিয়েছিল। এই সংলাপে যে তেমন কোন ফল পাওয়া যাবে তা আগে থেকেই জানতো বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিডি২৪লাইভকে বলেন, দেশে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দুটি দলই বড়। একটি ভালো নির্বাচন করতে হবে। যাতে সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, গ্রহণযোগ্য হয়। আমরা যুদ্ধ করা জাতি, একটি ভালো নির্বাচন করতে পারবো না এটা আমার কাছে মনে হয় না। সবাই যখন আমরা আলোচনায় বসছি এবং প্রধানমন্ত্রীও সংসদে বলেছেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আলোচনা করে একটি ভালো নির্বাচন করতে চান। আলোচনার টেবিলে গেলে সব সমস্যারই সমাধান হবে। সংবিধান এখানে কোন বাঁধা নয়, বাঁধা হচ্ছে ইচ্ছা শক্তি।

নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ যে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করেছে তা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয় মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কিভাবে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিভাবে ভোটের ফল পাল্টে দেয়া যায় সেই কৌশল আছে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনায়। যা সম্পূর্ণরুপে জনমতের বিপরীত।

তিনি বলেন, সবাই চায় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সেনাবাহিনী মোতায়েন কিন্তু আওয়ামী লীগ চায় সেনাবাহিনী ঠুটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকুক। সেই কারণে তারা সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিতে চায় না। বিগত আওয়ামী শাসনামলে অনেক দলীয় ক্যাডারের লাইসেন্স ও বিনা লাইসেন্সে অস্ত্র দেয়া হয়েছে। এখন ভোট গ্রহণের দিন আওয়ামী লীগের অনুকূলে সন্ত্রাসী কায়দায় ব্যালট বাক্স ভর্তি করতে সেই অস্ত্রগুলোই ব্যবহার হবে। সুতরাং সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা না দিলে ভোট-সন্ত্রাস রোধ করা যাবে না।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের ১১ দফা প্রস্তাব কোন দলীয় প্রস্তাব নয়। আমাদের প্রস্তাব অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব। আর বিএনপির যে প্রস্তাব তা হচ্ছে দলীয় প্রস্তাব।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনস্বার্থ মাথায় রেখে প্রস্তাব দিয়েছে। বিএনপি দলীয় স্বার্থে প্রস্তাব দিয়েছে। এই দলটি সব সময়ে নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে। তাদের প্রস্তাবনা জনস্বার্থ বিরোধী।

বিডি২৪লাইভ/এএএম/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: