মনোয়ারা বেগমের বিষমুক্ত সবজির হাট

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ০২:০০ এএম

সোম ও বৃহস্পতি দুই দিন বিষমুক্ত সবজির হাট বসে মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে। সীম, বরবটি, বেগুন, কচু,ওল, পুইশাক, করলা, কাচাকলা, লাউ, কুমড়া, পাকাকলা, কচুর লতি, পেপে, লাল শাক, কাকরোলসহ অনেক রকমের সবজি ওঠে এই হাটে। মনোয়ারা বেগম এই সবজি ক্রয় করে ঢাকায় প্রাকৃতিক কৃষি নামের একটি বিষমুক্ত সবজির দোকানে পাঠিয়ে দেন। ব্যতিক্রমি এই সবজি হাটের উদ্যোক্তা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ  উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মস্তবাপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী। এলাকার ২ টি গ্রামের কমপক্ষে ৮০ জন গৃহিণী বিষমুক্ত সবজি উৎপাদান করছেন। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও বিক্রিতে সহযোগিতা করছেন মনোয়ারা বেগম। মনোয়ারা বেগম সামাজিক কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখায় খুলনা বিভাগীয় শ্রেষ্ট জয়িতা জাপান ভিত্তিক হাঙ্গার ফ্রি প্রাইজ, এলজিইডি পুরস্কার পেয়েছেন। পেশায় গৃহিনী হলেও তিনি একাধারে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের  মেম্বর ও বিষমুক্ত সবজি, কম্পোস্ট ও জৈব বালাই নাশক উৎপাদক ও বাজারজাতকারী।

অনুপমপুর গ্রামের বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনকারী মেহেরুন নেছা জানান, তাদের বাড়ির পাশে প্রায় ৭৫ শতাংশ জমিতে  বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করেন। এর মধ্যে লাউ, চালকুমড়া, কচু, দুধকচু, পেপে,করলা,কাগুজে লেবু উৎপাদন করা হয়। আর এগুলো  উৎপাদনের কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। জমিতে আমরা ভার্মি কম্পোস্ট সার আর জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করি। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহষ্পতিবার আমি মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে সবজি নিয়ে যাই। তিনি  বাজারের দামের চেয়ে কেজি প্রতি ৫ টাকা বেশি দরে কিনে নেন।  

মস্তবাপুর গ্রামের গৃহিনী রাবেয়া বেগম জানান, বাড়ির কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে তিনি বাড়ির পাশের পতিত জমিতে কলা, পুইশাক, লাশ শাক, কচু  চাষ করেছেন। আর তার এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, তার জমিতে কোন রাসায়নিক সার তিনি ব্যবহার করেন না। উৎপাদিত সকল সবজি মনোয়ারা বেগম তার কাছ থেকে কিনে নেন। রাবেয়া বলেন,  সবজি চাষ করে আমার বাড়তি কিছু আয় হচ্ছে । যা দিয়ে সংসারে কাজে লাগাতে পারছি।

একই গ্রামের গৃহিনী রেকসোনা বেগম জানান, তার বাড়িতে পতিত জমি ছিলো। একদিন তাকে সবজি উৎপাদনে উৎসাহ দেন। তিনি বলেন সকল সবজি তিনি কিনে নেবেন। সেই থেকেই সব সবজি তিনি কিনে নেন। মনোয়ারা বেগম তার মতো গ্রামের প্রায় অধিকাংশ বাড়ির গৃহিনীদের সবজি চাষে উৎসাহ দেন। সকলের উৎপাদিত সবজি তিনি কিনে নেন।  রেকসোনা জানান, যাদের বাড়িতে কম্পোস্ট সারও জৈব বালাই নাশক নেই তাদের বিনা মুল্যে  এগুলো বিতরন করেন মনোয়ারা বেগম।

সরেজমিন  মনোয়ারা বেগমের বিষমুক্ত সবজির বাজারে গিয়ে তার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, নিয়ামতপুর ইউনিয়নে  মস্তবাপুর ও  অনুপমপুর গ্রামের  রাবেয়া, রেকসোনা, রাজিয়া, সাহিমা, সালেহা, মুসলিম, ডালিম, মেহেরুন, রাহেলা, শাহনাজ, জাহানারা, রেহেনাসহ প্রায় ৮০জন গৃহিনীকে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করার জন্য পরামর্শ দিই।  গৃহিনীদের  বিভিন্ন সময়ে আমি বিনামুল্যে সবজির বীজ ও সবজি উৎপাদনের জন্য ভার্মি কম্পোষ্ট ও জৈব বালাই নাশক  দিয়ে থাকি।  তিনি গৃহিনীদের প্রতিশ্রুত দেন তাদের বাড়িতে উৎপাদিত সকল সবজি তিনি কিনে নিবেন। 

প্রতি বৃহষ্পতিবার ও সোমবার বিকাল ৩টার দিকে গৃহিনীরা তাদের বাড়িতে উৎপাদিত সবজি নিয়ে আসেন এই হাটে। সকলের সবজি তিনি কিনে নেন। মনোয়ারা বেগম জানান,  প্রচলিত বাজারের চেয়ে কেজি প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে এগুলো কিনে নেওয়া হয়। মনোয়ারা বেগম জানান, কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে পিকআপ অথবা বাস যোগে তিনি ঢাকার প্রাকৃতিক কৃষি নামের একটি বিষমুক্ত সবজির দোকানে দেন। 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে তিনি বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। তার বিষমুক্ত সবজির বাজার তিনি দেখেছেন।  তিনি বলেন, মনোয়ারা বেগম গৃহিনীদের কাছ থেকে সবজি কিনে ঢাকা শহরে পাঠাচ্ছেন অবশ্যই এটি ভাল। তবে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ শহরে একটি বিষমুক্ত সবজির দোকান করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর ফলে কালীগঞ্জের উৎপাদিক বিষমুক্ত সবজি  স্থানীয়রাও পাবে।

বিডি২৪লাইভ/এস এ 


 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: