তারা মারা গেলেও লাশ নিতে চায় না পরিবার

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৫০ পিএম

স্বজনদের অবহেলা আর ভুল ঠিকানা দেয়ার কারণে সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না পাবনা মানসিক হাসপাতালের ২০ জন রোগী। এদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন ২১ থেকে ২৬ বছর ধরে। ফলে হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই কেটে যাচ্ছে তাদের জীবন। মারা গেলে মরদেহটিও গ্রহণ করতে চাননা পরিবারের সদস্যরা।

পাশাপাশি দীর্ঘ পাঁচ দশকেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দেশের মানসিক রোগের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘পাবনা মানসিক হাসপাতালে’। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ৫শ শয্যার এই হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে চিকিৎসার কার্যক্রম।

সরেজমিন পাবনা শহরতলীর হেমায়েতপুরে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মগবাজারের নয়াটোলা আমবাগান এলাকার আবুল হাশেম মিয়ার ছেলে সাঈদ হোসেন। ১৯৯৬ সালের ২২ জুলাই মানসিক রোগী হিসেবে তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে যান স্বজনরা। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২১টি বছর। কিন্তু সুস্থ্ হয়েও স্বজনদের ভুল ঠিকানার কারণে বাড়ি ফিরতে পারছেন না তিনি। ৩৬ বছর বয়সে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখন তার বয়স ৫৬ বছর।

ইচ্ছা থাকলেও স্বজনদের কাছে ফিরতে পারছেন না তিনি। শুধু সাঈদ নয়, ঢাকার পল্লবী এলাকার কাজী গোলাম গাউসের ছেলে কাজী আকরামুল জামান ও পাবনার আটুয়া মোমেনাবাদ এলাকার ডলি খাতুন সহ ২০ জন রোগীর অবস্থা একই। স্বজনদের অবহলোয় সুস্থ হয়েও বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তারা। অপেক্ষার দিন শেষ না হওয়ায় হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই কাঁটছে তাদের জীবন। সুস্থ অনেকেই জানান, আমরা বাড়ি ফিরতে চাই, কিন্তু কেউ নিতে আসেনা।

&dquote;&dquote;দীর্ঘদিন সেবা করতে গিয়ে হাসপাতালের নার্সদের স্বজন হয়ে উঠেছেন এসব রোগী। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা খাতুন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এসব রোগীর সেবা করতে গিয়ে তারা এখন আমাদের স্বজন হয়ে গেছে। আমরাও তাদের নিজের পরিবারের মানুষ হিসেবে দেখি। আমরা যেভাবে তাদের বলি সেভাবেই তারা চলে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের রোগী তথ্য প্রেরণ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন হোসেন জানান, রোগী ভর্তির সময় নেয়া তথ্য তাৎক্ষনিকভাবে ঠিক থাকলেও পরবর্তীতে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়না। এমনকি কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহটিও নিতে চাননা স্বজনরা। এর পেছনে রয়েছে আর্থিক, সামাজিক ও সম্পত্তি জনিত নানা কারণ।

এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের আন্তরিকতার অভাবকেই দায়ী করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর মার্যাদাবোধ নিয়ে তাদের মানসিক অবস্থা ও চিন্তা চেতনার পরিবর্তন করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের পরিচালক ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস জানান, রোগীকে ভর্তির পর থেকে তাদের স্বজনরা আন্তরিক থাকেন না। শুধু তাই নয়, কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহটি নিতেও তাদের কোনো আগ্রহ থাকে না। ধর্ম অনুযায়ী লাশের দাফন আমাদেরই করতে হয় বেশিরভাগ সময়। পাবনা মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও মানসিক হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. শাফ্কাত ওয়াহিদ বলেন, রোগীর স্বজনদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মানসিক রোগীর মর্যাদাবোধ সম্পর্কে আন্তরিক থাকতে হবে। তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

অপরদিকে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বর্তমানে মাত্র ৫ জন মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল কলেজের দু জন সহকারি অধ্যাপক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। মঞ্জুরীকৃত মোট ৫৪২টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১৮৯টি। চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি একটি হাফওয়ে হাউজ নির্মাণ করা গেলে ৫শ শয্যার ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস।

&dquote;&dquote;উল্লেখ্য, দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে শহরতলীর হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জায়গার উপরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিলো ৬০। সময়ের চাহিদায় যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ শয্যায়।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: