ইসির সংলাপ: ৪ ইস্যুতে ৪০ দলের মতবিরোধ 

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৭, ০৩:০০ পিএম

দুই মাস ধরে নির্বাচন কমিশনের আলোচিত সংলাপে সব রাজনৈতিক দলের সাড়া দিলেও প্রধান চারটি ইস্যুতে মত বিরোধ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, ইভিএম ও না ভোট চালু নিয়ে বিপরীত মুখী অবস্থানে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সিংহভাগই।

ইসির এখতিয়ারের বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর সুপারিশগুলো একীভূত করতে কমিশনও কাজ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি সাংবিধানিক হওয়ায় তা নিয়ে কমিশনের করার কিছুই নেই।

এখতিয়ারের বাইরে এমন আরও কয়েকটি দাবি এসেছে সংলাপে-ইসি নিয়োগ জাতীয় পরিষদ গঠন, প্রধান নির্রাচন কমিশনার ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্রাচনকালীন সরকার, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল নিয়ে সরকার, নবম সংসদেও দল নিয়ে সরকার গঠনসহ নানা ধরনের প্রস্তাব এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সংবিধান অনুযায়ী ভোট আয়োজনের দাবিও করা হয়েছে। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় পরিবর্রন এসে প্রতিরক্ষা বিভাগ যুক্ত করা, সেনাবাহিনীকে বিচারি ক্ষমতা দেওয়া, ইভিএম চালু ও না ভোট চালুসহ ইসির এখতিয়াওে থাকা বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪০টি দলের সাড়ে পাঁচ শতাধিক সুপারিশের মধ্যে প্রধান চারটি বিষয়ে মত বিরোধ রয়েছে দলগুলোয়। ৪০টি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপে অন্তত ৫৫০টি সুপারিশ করা হয়েছে। দলগুলোর সুপারিশ পর্যালোচনা করেও দেখা গেছে, ৪০টি দলের মধ্যে প্রায় ২০টি দল সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে, এরমধ্যে অনেকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে বা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখার সুপারিশ করেছে। অন্তত ১২টি দল সংসদ ভেঙে ভোটের সুপারিশ করেছে; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের প্রস্তাবও অন্তত ৯ দলের। তিনটি দল সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল নিয়েও সরকার গঠনের কথা বলেছে।

স্বস্তি নির্রাচন কমিশনে:

৪০ দলের সঙ্গে সফলভাবে সংলাপ শেষ করতে পেরে খুবই খুশি ইসি। ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন বিডি২৪লাইভ ডটকমকে বলেন, আমরা বেশ সফলভাবে রাজনৈতিক দলের সংলাপ শেষ করেছি। সবাই খুব আন্তরিক ছিলেন, আমরাও সহায়তা পেয়েছি। সুচারু ও সফলভাবে সংলাপ সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে বর্তমান ইসি স্বস্তি বোধ করছেন। 

নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিগত দুই কমিশনের সংলাপের অভিজ্ঞতা ‘সুখকর’ না হওয়ায় কে এম নূরুল হুদার কমিশন খানিকটা ‘চিন্তায়’ ছিল। ২৪ অগাস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদের সেই চিন্তা দূর হয়েছে। এবারের সংলাপে দলগুলোর দাবি-দাওয়ার চেয়েও গণমাধ্যমে বেশি আলোচনায় এসেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় দেশের প্রধান এ দুই দলের ভূয়সী প্রশংসা করে সিইসির মন্তব্য। 

এ বিষয়ে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, গণমাধ্যমে বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাওয়ায় আলোচনা হয়েছে। প্রতিটি দলকেই সিইসি মহোদয় প্রশংসা করে আসছেন। আমরা তো মনে করি, খুব সফল সংলাপ করতে পেরেছি দলগুলোর সঙ্গে। আমরাও স্বস্তি বোধ করছি।

একীভূত করা হবে:

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহম বলেন, সবার সঙ্গে অক্টোবরেই সংলাপ শেষ করবো। এরপরই সুপারিশগুলো একীভূত করা হবে। যেসব সুপারিশ ইসির এখতিয়ারের মধ্যে থাকবে এবং অভিন্ন হবে-তা কমিশন একীভূত করবে। সেই সঙ্গে যেসব সুপারিশ এখতিয়ারের বাইরে রয়েছে, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে সেগুলোও একীভূত করা হবে । সার্বিক সুপারিশ কমিশনের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে।

সরকারের কাছে প্রতিবেদন: 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও বলেছেন, সংলাপ শেষে সবার প্রস্তাব একীভূত করে আমরা একটি প্রতিবেদন করবো। আমাদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বসবো। যেসব বিষয় আমাদের এখতিয়ারে নেই সেগুলোর বিষয়ে সরকারের কাছে প্রয়োজনে পাঠানোর জন্যে ব্যবস্থা করা হবে।

সহায়ক সরকারসহ বেশ কিছু দাবি রাজনৈতিক হওয়ায় তাতে কমিশনের ভূমিকা থাকবে না বলে জানান সিইসি। তিনি জানান, দলের সুপারিশের মধ্যে কিছু বিষয় রাজনৈতিক, কিছু বিষয় সাংবিধানিক ও কিছু সুপারিশ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রয়েছে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার সবই করবে কমিশন।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে গত ৩১ জুলাই ইসির এবারের সংলাপ শুরু হয়। এরপর ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। ২৪ অগাস্ট-১৯ অক্টোবর ৪০টি দলের মত বিনিময় হয়েছে। দেশের প্রধান তিনটি দলের মধ্যে ৯ অক্টোর জাতীয় পার্টি, ১৫ অক্টোবর বিএনপি ও ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসে ইসি। এখন বাকি পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ২২, ২৩ ও ২৪ অক্টোবর বৈঠক করবে ইসি।

আলোচনায় জিয়া ও সংলাপ বয়কট:

বিএনপির সঙ্গে সংলাপে জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে আনায় সিইসির সঙ্গে সংলাপ বর্জন করেছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। সেই সঙ্গে দলটি সিইসি কে এম নূরুল হুদার পদত্যাগ দাবিও করেছে।

অভিন্ন অধিকাংশ প্রস্তাব:

সব দলের অংশ গ্রহণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, নিরপেক্ষতা নিশ্চিত; প্রচারে সরকারি সুবিধা বাদ; কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন; প্রবাসীদের ভোটাধিকার; অনলাইনে মনোনয়ন জমা; গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তৎপরতা বন্ধ; স্বতন্ত্র প্রার্থী তায় ১% সমর্থন তালিকা বাতিল; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত রাখা; নিবন্ধিত দলকে রাষ্ট্রীয় অনুদান, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা;; ফৌজদারি দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া; নির্বাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক প্রচার প্রচারণা ও ভোট চাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করা; স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলকে নিবন্ধন না দেওয়া ; প্রার্থীর নাম, দল ও প্রতীকের উল্লেখ সম্বলিত অভিন্ন পোস্টারের ব্যবস্থা করা; নির্বাচনী বিরোধ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, নির্বাচন কালো টাকা ও পেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত রাখা, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দন্ডিতদের দুই বছর পর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার সুযোগ বাতিল করা, যে সব দল ৩০ এর বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দেবে সে সব দলকে বেতার ও টিভিসহ সরকারি প্রচারমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের কমিশন থেকে প্রত্যাহার করা প্রভৃতি।

 

বিডি২৪লাইব/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: