বাংলাদেশ ক্রিকেট ও একজন নাফিস!
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উজ্জল নক্ষত্র শাহরিয়ার নাফিস। জাতীয় দলে খেলার শুরু থেকে ক্রিকেট বিশ্বে নিজেকে তুলে ধরেছেন তিনি। এক সময় তাকে রানের মেশিনও বলা হতো। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহ-অধিনায়কেরও দায়িত্ব পালন করেছেন এই ক্রিকেটার। সম্প্রতি তিনি দেশের স্বনামধন্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি২৪লাইভ’র সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিডি২৪লাইভ’র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমরান হোসেন।
জন্ম:-
১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন শাহরিয়ার নাফিস আহমেদ। বাবা মেজর (অবঃ) মহিউদ্দিন আহমেদ। মা সালামা আঞ্জুম। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। অপর দুই ভাই- ইফতেখার নাইম আহমেদ ও ইকতেদার নাজিব আহমেদ।
শিক্ষা:-
বাবার চাকুরির কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে ঢাকার বিখ্যাত সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেন।
ক্রিকেট ক্যারিয়ার:-
বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০৫ সালে তার অভিষেক ঘটে। বাংলাদেশ দলের প্রথম ইংল্যান্ড সফরে তিনি দলভুক্ত হন। যদিও তার আগে মাত্র ৫টি প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। তার আগে তিনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেন। তার প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সুযোগ ঘটে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তিনি ৭৫ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। নাফিস বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি একদিনের আন্তর্জাতিক শতক করেন যা এখনও বজায় আছে। তার প্রথম টেস্ট শতক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুল্লায় যা বাংলাদেশের টেষ্ট ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই টেষ্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ৩৫৫ রান করে যা প্রথম দিনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন।
বৈবাহিক জীবন:-
২০০৬ সালের ১ নভেম্বর ঈশিতা তাসনিমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। স্ত্রী ঈশিতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান শাখওয়ার আলী নাফিস। শাখওয়ার বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র।
ক্রিকেটে আসার গল্প:-
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ দেখে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ হয় নাফিজের। বাবা-মায়ের পরামর্শেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয় এই টাইগারের। পরিবারের সবাই তাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছে।
নাফিসের ক্রিকেট গুরু:-
ক্রিকেটে শাহরিয়ার নাফিসের হাতেখড়ি হয় ফারুক ভাইয়ের বড় ভাইয়ের কাছে থেকে। তার নাম বাবু। তিনি ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি নাফিসকে সর্ব প্রথম একটা ব্যাট দিয়েছিলেন। তার হাতেই এই রানের মেশিন ক্রিকেটের বেসিকটা শিখেছেন। বছর খানিক টেনিস বল দিয়ে ছাদে প্রাকটিস করেছেন বিদেশি বোলারদের তুলোধুনো করা এই ব্যাটসম্যান। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড "আন্ডার ১২" একটা প্রোগ্রাম চালু হয়। সেই প্রোগ্রামে প্রাকটিস করেছেন তিনি। চালু হওয়ার কিছু দিন পরই প্রোগ্রামটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৫ সালে অঙ্কুর ক্রিকেটার্সের ওয়াহিদুল গণির স্যারের কাছে খেলা শিখেন এই ক্রিকেট তারকা।
নাফিসের ক্রিকেটার হওয়ার পিছনে রয়েছেন যারা:-
শাহরিয়ার নাফিস বলেন, আমার আম্মা আমাদের তিন ভাইকে অনুশীলন করাতে নিয়ে যেতেন। অবশ্যই আব্বা, আম্মা না চাইলে ক্রিকেটার হতাম না। আব্বা- আম্মার প্রেরণা সবার আগে। আর কোচদের মধ্যে বাবু ভাই। দ্বিতীয়ত ওয়াহিদুল গণি স্যার আমাকে হাতে ধরে খেলা শিখেয়েছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ওনার কোচিংয়ে নিয়মিত ছিলাম। এরপর আন্ডার ১৫ ন্যাশনাল দলে চান্স পাই। পরেই বিসিবির প্রোগ্রামে চলে আসা। ২০০১ সালে 'আন্ডার ১৭' ন্যাশনাল টিম, ২০০২ সালে 'আন্ডার ১৯' ন্যাশনাল টিম। ২০০৫ সালে জাতীয় দলে খেলা। তবে আমার স্ত্রী আমাকে যে সাপোর্ট করেছে তা আমার জীবনে অনেক বড় ব্যাপার। আমি ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে আমার স্ত্রী আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। মনের শক্তি যুগিয়েছে। খারাপ সময়ে ছায়ার মতো আমার পাশে থেকে শক্তি যুগিয়েছে।
হঠাৎ জাতীয় দলে না থাকার কারণ:-
শাহরিয়ার নাফিস বলেন, এখন যদি আপনি বাংলাদেশ টিমের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন খেলোয়াড়রা অনেক সুযোগ পায় এবং সুযোগ কাজে লাগিয়ে কামব্যাক করেন। আমরা একটা সময় দেখেছি তামিম হতাশাজনক খেলেছে। আবার ভালো খেলে কামব্যাক করেছে। বর্তমানে তামিম বাংলাদেশের ইতিহাসে বেস্ট তিন জনের মধ্যে একজন। এটা তার নিজের কৃতিত্ব। সাকিব ও মুশফিকেরও একটা খারাপ সময় গেছে। এখন তারা ভালো খেলছে এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে খারাপ করার পর আমি অনিয়মিত হয়ে যাই। যার ফলে ২টা ম্যাচ খেলছি, আবার ২ ম্যাচ ড্রপ হয়েছে। তখন কনফিডেন্স বিল্ডাবটা আসলে ঐভাবে করতে পারি নাই। পাশাপাশি এখন খেলোয়াড়রা যেভাবে সুযোগ পায়। ঐ সময়ে সেটা পাওয়া যায়নি। যার ফলে ছন্দপতন হয়। এরপরেই নিজের উপর রাগ করেই আইসিএল-এ যোগ দেই। আইসিএল টুর্নামেন্টে অনেক ভালো করি। আমি ফুরিয়ে যাইনি, এটাই প্রমাণ করতে আইসিএল-এ গিয়েছিলাম এবং আমি ভালো খেলে সেটা প্রমানও করেছি। এরপরেই ঘরোয়া লিগে ভালো করার পরে জাতীয় দলে আবার সুযোগ পাই। তারপর টানা ৪ বছর খেলে বাদ পরে যাই।
এখন যা করছেন নাফিজ:-
এখন বিপিএলের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন নাফিজ। তার টার্গেট থাকবে গত বছরের চেয়ে ভালো করা এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
খেলোয়াদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে বিসিবির দ্বিমত কেন?
শাহরিয়ার নাফিজ:-এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিষ্ঠান এবং তার কর্মচারীদের মধ্যে দ্বিমত থাকবেই। এই দ্বিমত প্রতিষ্ঠান এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। ঠিক এভাবেই বিসিবি প্রতিষ্ঠান আর প্লেয়াররা প্রতিষ্ঠানের একটা অংশ। তাদের মধ্যে মতের পার্থক থাকতেই পারে। তবে এটা যাতে গুরুতর পর্যায়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ক্রিকেট নিয়ে মজার ঘটনা:-
শাহরিয়ার নাফিজ:- একটা জিনিস কি যেদিন থেকে খেলা শুরু করেছি আজকে পর্যন্ত প্রত্যেকটা দিনই মজার দেখেই ক্রিকেট খেলে যাচ্ছি। যে দিন আর এই মজাটা থাকবে না সেদিন হয়তো আর খেলবো না। তাই আলাদা করে বলা খুবই ডিফিকাল্ট। ১৮ বছরে অনেক ঘটনাই রয়েছে ক্রিকেট অঙ্গনে।
আপনার সন্তানকে ক্রিকেটে আনবেন কি?
শাহরিয়ার নাফিজ:-প্রথমত আমি অবশ্যই চাই আমার ছেলে খেলাধূলা করুক। কারণ পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বাচ্চারা খুব বেশি ভিডিও গেমস, কম্পিউটার গেমস ও স্মার্ট ফোনের দিকে ঝুঁকে পরেছে। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়চ্ছে। সেই দিক থেকে আমি অবশ্যই চিন্তা করবো আমার ছেলে মাঠে যাক। খেলাধূলা করুক। পাশাপাশি ছেলে যদি ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখায় তাহলে বাবা হিসেবে আমি অবশ্যই তাকে সবদিক থেকে সহযোগিতা করবো।
ধারাভাষ্যকার নাফিজ!
এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যে দুইটি ম্যাচে ধারাভাষ্য দিয়েছে ওটা আসলে আমার শিক্ষানবিশ ছিল। যেহেতু ক্রিকেট অঙ্গনে থাকার ইচ্ছা। তাই ক্রিকেট ছাড়ার পর এটাই করবো হয়তো।
পুরস্কার:-
২০০৬ সালে আইসিসি’র বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়, বিসিবি’র বছরের সেরা ক্রিকেটার, বিসিবি’র বছরের সেরা ব্যাটসম্যান ও গ্রামীণফোন ও প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন ক্রিকেটে আলো ছড়ানো এই বিষ্ময় নাফিজ।
ক্রিকেট নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:-
শাহরিয়ার নাফিজ:- চেষ্টা করবো যত দিন ফিট আছি এবং পারফর্ম করতে পারছি ততদিন ক্রিকেট খেলবো। যখন ফর্ম ও ফিটনেস সাপোর্ট করবে না তখন অবশ্য চেষ্টা করবো ক্রিকেট অঙ্গনে থাকার। সেটা হতে পারে কোচিংয়ের মাধ্যমে বা ধারাভাষ্যের মাধ্যমে। তবে ক্রিকেটের বাহিরে তেমন কোন কিছু করার পরিকল্পনা নেই।
বিডি২৪লাইভ/আইএইচ/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: