বেহাল রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:২৭ পিএম

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহর থেকে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে এটি অবস্থিত। সম্পূর্ণ আবাসন সুবিধা নিয়ে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। 

পূর্ণাঙ্গ আবাসন সুবিধা না থাকা ও ক্যাম্পাসের আশেপাশে নিন্ম পরিবেশের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে থাকতে হয়। তারা ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনে।

তবে এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে পরিবহন সেবা দেওয়ার মতো নিজস্ব গাড়ি নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির। নিজস্ব গাড়ি সংকটের কারনে ভাড়া গাড়ি দিয়ে এ চাহিদা মেটাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

এ অবস্থায় প্রশাসন স্থানীয় মালিক সমিতির কাছে চুক্তিবদ্ধ। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছরের জন্য চুক্তি বদ্ধ হয় ঝিনাইদহের সময় এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে। আগামী বছর ৩১ মে এ চুক্তি শেষ হবে। সময় এন্টারপ্রাইজের বর্তমান মালিক ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। তার দেওয়া গাড়ির অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহন করার জন্য বাস আছে মোট ৪৭টি। এর মধ্যে নিজস্ব মাত্র ১৬টি। এ ১৬টির মধ্যে আবার সচল রয়েছে মাত্র ১১টি। ভাড়ায় চালিত ৩১টি বাসের মধ্য ১৫টি কুষ্টিয়া সড়কে, ১১টি ঝিনাইদহ ও ৫টি শৈলকুপা সড়কে চলাচল করে।

স্থানীয় মালিক সমিতি তার ক্ষমতাবলে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সড়কে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাচ্ছে। লক্কড়ঝক্কড় মার্কা এসব গাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি থাকলেও তাদের ক্ষমতা বলে বিআরটিসি’র কোন গাড়ি ঝিনাইদহ সড়কে ঢুকতে দেয়না বলে অভিযোগ রয়েছে।

&dquote;&dquote;

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মৈত্রীর আহবায়ক মোরশেদ হাবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন ব্যবস্থা স্থানীয় মালিক সমিতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভাড়ায় চালিত গাড়ির ড্রাইভাররা শিক্ষার্থীদের ওভারটেক করে প্রতিনিয়ত বাইরের পেসেঞ্জার তুলে থাকেন যা সম্পূর্ন নিয়ম বর্হিভূত। এছাড়া মালিক সমিতি শিক্ষার্থীদের বহনের জন্য যে গাড়ি দিচ্ছে তার অধিকাংশ  ফিটনেসবিহীন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ সমস্যার  সমাধান করতে পারে বলে আমি মনে করি।   

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবহন অধিদপ্তর ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রিন্ডোরিংয়ের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এটি হয়ে গেলে আশা করি এ সমস্যাটি আর থাকবে না।

এদিকে ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহর পর্যন্ত যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার রাস্থা খানা খন্দলে ভরা। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে চমর দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এছাড়া রাস্তার এ বেহাল দশার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে বৃত্তিপাড়া নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। 

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষাথী মুজাহিদুল আলম বলেন, ক্যাম্পাস থেকে দুই শহরে (কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ) যাতায়াতের রাস্তার অধিকাংশ জায়গা খানা খন্দলে ভরা। এ অবস্থায় আমাদেরকে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক সময় রাস্থার মাঝখানে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এসময় আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিবহন সংকট আছে তা বর্তমান প্রশাসনের আমলে অনেক খানি নিরসন হয়েছে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন ব্যবস্থা যাতে আরও বেশি স্বনির্ভর হয় সে জন্য নিজস্ব গাড়ি ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর ক্যাম্পাসে যদি কোন আনফিট গাড়ি থাকে তাহলে আমরা দেখা মাএই তা বাতিল করবো।

এছাড়া রাস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রাস্তা সংস্কারের জন্য আমরা দুই জেলার প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত এ ব্যাপারে তারা উদ্যোগ গ্রহন করবেন।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: