হামিদের মশা নিধন যন্ত্র বাজারজাতকরনে মালয়েশিয়ায় সেমিনার

প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:০৩ পিএম

প্রাণঘাতী জিকা ভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্ব যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে। ঠিক তখন এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার পন্থা উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আবদুল হামিদ।

আর এ মশা নিধন যন্ত্র বাজারজাত করনে রবিবার বিকেলে কুয়ালালামপুর হোটেল ভিস্থানার বলরুমে অনষ্টিত হল এক সেমিনার । মালয়েশিয়ার টিভি প্রেজেন্টার তাজনিম বিনতে ফায়সালের উপস্থাপনায় সেমিনারে এ যন্ত্রের উপকারিতা তুলে ধরেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিটরী মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: উরম কুমার বড়ুয়া, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড: কবিরুল বাশার।

এ ভাইরাস ছড়ায় মশার মাধ্যমে। একইভাবে ম্যালিরিয়া ও ডেঙ্গুর ভাইরাসও মানুষের শরীরে ছড়ায়। যা নিধনে তরল ওষুধ, কয়েল, বৈদ্যুতিক জালসহ নানা উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কয়েলের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করায় জনস্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল উদ্বিগ্ন। অন্য উপকরণগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

তবে হামিদ তার উদ্ভাবিত যন্ত্রকে জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলে জানানতারা। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামের হামিদ উদ্ভাবিত নতুন মশকনিধন যন্ত্রটি গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ গেজেটে বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে।

নতুন এই যন্ত্রের নাম দেয়া হয়েছে ‘এইচ ই সি মসকিটো কিলার’ (হামিদ ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মসকিটো কিলার)। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, হামিদের ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মশকনিধন যন্ত্রটি উদ্ভাবনের কথা।

এ বিষয়ে সেমিনারে এম এ হামিদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে মশা নিধনে ইলেকট্রনিক, ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ও রাসায়নিক যেসব উপকরণ-যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা হয়েছে তার থেকেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে আমার উদ্ভাবিত ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মসকিটো কিলার।’ তিনি আরও জানান, সরকার তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটির স্বীকৃতি দেয়ার আগে প্রায় ১৮ মাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খোঁজখবর নিয়েছে। এরপর কোথাও না থাকায় যন্ত্রটিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

পোপাদিয়ার আবদুল হাকিম মেম্বারের বাড়ির সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হাজী শামসুল হক ও মাহমুদা খাতুনের সন্তান এম এ হামিদ ১৯৯৮ সালে হাওলা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০০ সালে কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেলিযোগাযোগ বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি।

এ ছাড়াও জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন হামিদ। নিজের এ উদ্ভাবন প্রসঙ্গে হামিদ বলেন, ২০১১ সাল থেকে তিনি গবেষণা শুরু করেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে একপর্যায়ে সফল হয়েছেন। ওই বছরের ২ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট বিভাগে আবেদন করেন তিনি। ২৪ জুন তার আবেদন গ্রহণ করা হয়। তার প্যাটেন্ট নম্বর ১৫০/২০১৪।

৩৪ বছর বয়সী হামিদ বলেন, মশা নিধনের এ যন্ত্র এবং ব্যবহৃত রাসায়নিক থেকে কোনো বিষক্রিয়া ছড়াবে না। বরং যন্ত্রটি মশাকে আকৃষ্ট করবে। যন্ত্রটির মধ্যে যে রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে দেখতে তা এক ধরনের খাদ্য। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে যেভাবে মশা আক্রমণ করে ঠিক সেভাবে মানুষ মনে করে ওই যন্ত্রটির সংস্পর্শে চলে আসবে মশা। এক ফুট উচ্চতা এবং ছয় ইঞ্চি প্রশস্ত (টেবিল লাইটের আকৃতি) এই যন্ত্রটিতে পাঁচ ওয়াটের একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব থাকবে। বৈদ্যুতিক সুইচে যন্ত্রটি লাগিয়ে দিলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে মশা নিধন শুরু হয়ে যাবে।

দুই হাজার বর্গফুটের মধ্যে যত মশা থাকবে সব মশা যন্ত্রের ভেতর ঢুকে যাবে। যন্ত্রটি মানবদেহের মতো মশাকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় এ যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুৎ ছাড়াও ব্যাটারি দিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা চলবে। যন্ত্রটির ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম। বিদ্যুৎ খরচ হবে সাত ওয়াট। একটি রিফিল দিয়ে (রাসায়নিক দ্রব্য) চার মাস চলবে। এর মূল্য ১০০ টাকা। একটি রিফিলসহ যন্ত্রটির এককালীন মূল্য দুই হাজার টাকা। চার মাস পরপর রিফিল পরিবর্তন করতে হবে।

হামিদ বলেন, এ যন্ত্রটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থযুক্ত, বিষাক্ত ধোঁয়াহীন, শব্দহীন, কয়েল ও স্প্রের মতো বায়ু দূষণ করে না, দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব, ডিম লাইটের মতো জ্বলে, সহজে বহনযোগ্য, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও স্থায়ীভাবে মশা নিধন করে। যন্ত্রটির রয়েছে এক বছরের ওয়ারেন্টি।

হামিদ জানান, এর মধ্যে চীনে গিয়ে ওই দেশের সরকারের কাছে তার প্যাটেন্ট জমা দিয়েছেন। সেখানে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য হার্মেস সান করপোরেশন লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছেন গত বছরের ১৫ মে। এরপর ভারত সরকারের কাছেও আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। নিজ উদ্ভাবিত যন্ত্র ব্যবহার করে মশকনিধন বিষয়ে ব্রাজিল ও আমেরিকান দূতাবাসের সাথে হামিদ ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে ঢাকায় গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই দেশগুলোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করব। আমার বিশ্বাস এইচইসি মসকিটো কিলার দিয়ে জিকা ভাইরাসের বাহক এডিস মশা নিধন হবে।

অর্থের অভাবে নতুন এই যন্ত্র বাজারজাত করতে পারছেন না জানিয়ে হামিদ বলেন, ‘আমি গবেষণা করে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছি। কিন্তু আমার পক্ষে বাজারজাত করা সম্ভব নয়। এটি প্রচার না হওয়ায় কেউ এগিয়ে আসছে না। তবে কিছু দিন আমি স্বল্প পরিসরে কিছু যন্ত্র এলাকার আশপাশের মসজিদ ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সরবরাহ করি।’ এর মধ্যে যন্ত্রটির চাহিদা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারে মালয়েশিয়ার প্রায় ১২ টি  কোম্পানির প্রতিনিধি ও দেশটির ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সেদেশে কর্মরত বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা  উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: