নাটোরে 'টার্গেট বাজারে' লাভজনক টমেটো চাষ 

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৩:২৪ পিএম

চলতি বছর বন্যার করাল গ্রাস ভাসিয়ে দিয়েছে দেশের কৃষি সম্পদের সমৃদ্ধ ভান্ডার উত্তরাঞ্চলকে। ক্ষতির আচ লেগেছে এ জনপদের কৃষি প্রধান অঞ্চল নাটোরেও। তাই বিগত সময়ের চেয়ে চলতি শীত মৌসুমে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকের চেষ্টাও প্রাণান্ত।
 
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলাকে বলাকে বলা হয় সমগ্র জেলার মধ্যে সর্বোত্তম উর্বর কৃষিজ এলাকা। আগস্টের বন্যায় শস্য ভেসেছে এ অঞ্চলের কৃষকেরও। ঘুরে দাঁড়াতে তাই শীতকালীন আগাম টমেটো চাষ করেছেন অনেক কৃষক। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের তথা শীতের প্রথমদিকের বাজারকে টার্গেট করেই মূলত এ উৎপাদন করছেন তারা। 
গাছে গাছে ফলনও সন্তোষজনক। তাই টমেটো বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ভালো আয়ের আশা করছেন কৃষকরা।
 
নলডাঙ্গায় টমেটো চাষের হালচাল দেখতে গিয়ে কথা হয় একাধিক কৃষকের সাথে। তাদের দাবি, শীতের শুরুতে অন্যান্য সবজির তুলনায় টমেটোর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সবজি হিসেবে ক্রেতাদের চাহিদার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকায় দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। সাধারণ শীতকালীন সবজি হিসেবে চাষ করা হলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর আবাদ দ্বিগুন লাভ এনে দিতে পারে। উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টমেটোর চাষ হলে ঘুরে দাঁড়াবে অনেক কৃষক। কম সময়ে টমেটোর উৎপাদন হওয়ায় সাথে থাকছে অন্য সময় জুড়ে অন্য ফসল উৎপাদনের সুযোগও।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, নাটোর সদর, লালপুর ও নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুরে উপজেলায় টমেটোর চাষ হয়। তন্মধ্যে, নলডাঙ্গাতেই বেশি চাষ হয়। চলতি রবি মৌসুমে জেলার ২০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম টমেটোর চাষ হয়েছে। আর ২৬ হেক্টর জমিতে রোপণ চলছে। গত মৌসুমে হয়েছিল ২৬০ হেক্টর জমিতে।
&dquote;&dquote;

সরেজমিনে নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনাগর, বাঙ্গালখলসী চেউখালি, শরকুতিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ভালো লাভের আশায় পরিচ্ছন্ন টমেটো পেতে বাঁশের মাচার উপর চাষ হচ্ছে টমেটো। টমেটো গাছের শাখাগুলো যত্ন সহকারে মাচার উপর নুইয়ে দেয়া হয়েছে। শ নিড়ানি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। মাঠে থাকা কৃষকদের অনেকেই জানান, তাদের কারো কারো জমির টমেটো এখন তোলার উপযোগী। তারা জানান, প্রতি মণ তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে।
 
বাঙ্গালখলসি গ্রামের কৃষক এনামুল বলেন, 'আমি প্রতিবছরই টমেটো চাষ করি। গত বছর সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে খরচ বাদে ২৭ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। এবার ১০ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন। আগামী সপ্তাহেই টমেটো বাজারে তুলতে পারবো। আশা করছি, এবার বেশি দাম পাবো।’
 
মাধনগর গ্রামের আইয়ুব আলী ও শরকুতিয়া গ্রামের রুবেল হোসেন জানান, একটু ভালোমত চাষ প্রতি বিঘা টমেটো চাষে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তবে দাম ভালো হলে লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করা যায়। প্রতি বিঘায় খরচ বাদ দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে লাভ হবে।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: আমিরুল ইসলাম বিডি২৪লাইভকে জানান, গত কয়েক বছরে টমেটোর বাজার সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছানোয় চাষ বাড়ছে। এ অঞ্চলে আমন ধান ওঠার পর পরই শীতের আগাম জাতের টমেটো উৎপাদন করা যায়। স্থানীয় বাজারে প্রথম দফায়ই বেশি দাম পেয়ে বেশ লাভবান হন কৃষকরা। লাভের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাষিদের উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের টমেটো চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা কৃষিবিভাগ এ ব্যাপারে চাষীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শসহ পাশে থাকবে।
 
উল্ল্যেখ্য, চলতি বছর নলডাঙ্গায় ৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: