অকাল বৃষ্টিতে ফসলহানির শঙ্কা

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:০৬ পিএম

কুমিল্লায় গত ৩ দিনের অকাল বৃষ্টিতে আলু, লাল শাক, ডাটা শাক, মাসকলাই, গম, সরিষা ও মসুর ডালসহ শীতের সবজি বিজে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা। পচতে শুরু করেছে করলা, আলু, লাল শাক আর ডাঁটা শাকসহ শীতের অনেক সবজিই পানি বন্দি হয়ে পচনের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কৃষকের মনে। 

শুকনো মাটিতে চাষের উপযোগী সব ফসলের ক্ষেতেই বৃষ্টি ভেজা অনিশ্চয়তা। শীত মৌসুমের এই অকাল বৃষ্টি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়েই দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফলন পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি জেগেছে অনেক দিন ধরেই গরম হয়ে থাকা সবজি বাজারে আরো দাম চড়ার ভয়। 

জানা যায় কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, মাধাইয়া, গৌরীপুর, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বরুড়া, লাকসাম, নাঙ্গলকোটসহ জেলার সবকটি উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে শীতকালীন সবজির চাষ করে লাভ হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে গিয়ে কৃষকের মুখে হাসি নেই। ৩ দিনের অকাল বৃষ্টিতে কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা আলুর জমি তলিয়ে গেছে। আলু চাষে একর প্রতি ইউরিয়া ১১২ কেজি, টিএসপি ৭৫ কেজি এমওপি ১১২ কেজি, জিপসাম ৪০ কেজি ব্যবহার করতে হয় সে হিসেবে হালচাষ সহ হেক্টর প্রতি খরচ হয় ১ লক্ষ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছে গড়ে ১ শত ৭৭ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।তাই এবারের অকাল বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমান  ১ শত ৭৭ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।সে জন্য প্রতি বছরই আলুর মৌসুম শুরুর আগে শুধু কৃষকরাই নয়, যারা কৃষি কাজের সাথে জডড়ত নন এমন অনেকেই আলু চাষে দিকে ঝুকে পড়েন।

আলুর চাষ স্বল্প সময়ে লাভ বেশি।গত মৌসুমে কৃষকরা আলুর বাম্পার ফলন পেয়ে খুশিতে এ মৌসুমে গোমতির চড় সহ কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ জাতের আলু আবাদ করেছেন।উন্নত জাতের আলু আবাদ করে প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৫ মণ আলুর ফলন বেশি পাওয়া যায়। উন্নত জাতের আলু আবাদ করে প্রতি বিঘা জমিতে লক্ষ মাত্রার চেয়ে গত মৌসুমে প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন আলু অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ায় কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় আলু চাষীদের আনন্দের মাত্রাটাও অনেক বেশি দেখা গিয়েছিল।গেল মৌসুমে আলু উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ছাডড়য়ে যাওয়ায় কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারন অফিসের কর্মকর্তারাও অনেক খুশি ছিলেন।

সমগ্র জেলায় এ মৌসুমে আলু আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে। তার লক্ষ্য মাত্রা ছাডড়য়ে আবাদের পরিমাণ দাডড়য়েছে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫শত হেক্টর বেশি। হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২৫ টনেরও বেশি। সেই হিসেবে গেল মৌসুমে ৪ লক্ষ্যাধিক টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছিল।
চলতি মৌসুমে কুমিল্লার ১৬ উপজেলার মধ্যে বুডড়চং দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, চান্দিনা আদর্শ সদর, হোমনা, মেঘনা, তিতাস, মুরাদনগর, সদর দক্ষিন ও বরুয়ায় ব্যাপক আলুর চাষ হয়েছে।ফলনের দিক থেকে  দাউদকান্দি উপজেলা এগিয়ে থাকায় এবারও এই উপজেলায় ৬ হাজার ২ শত ২১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। ফলনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চান্দিনা উপজেলা। এই উপজেলায় ২ হাজার ৯ শত ৭৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে এবং বুডড়চং উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও চান্দিনা , মুরাদ নগর, আদর্শ সদর ও দেবিদ্বারের কয়েকটি গ্রাম ঘুড়ে আলু চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এবার আলুর মৌসুমে চাষিরা ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, গ্র্যানোলা, মালটা, হিরা, অরিগো, কোষ্টারিকা, পেট্রোনিজ, বেলেনী, এস্টারিক্স, সাগিতা ও রোজগোল্ড জাতের আলুর আবাদ করেছে তবে হুয়াইট ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল জাতের আলু ব্যাপক ফলন হওয়ায় এ দুই জাতের আলুর চাষ বেশি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেকে অন্যান্য জাতের আলু আবাদ করেছে।
 চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা, কাশিনগর, মুন্সিহাট, কালিকাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফসলি জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে এমন চিত্র দেখা গেছে। কেটে রাখা ধান হাতে নিয়ে কাঁদছেন অনেক কৃষক। 

প্রতি বছর অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষকের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ থাকে। নতুন ধান কেটে মাড়াই শেষে গোলা ভরা ধান থাকে ঘরে ঘরে। নতুন ধানের চাউল দিয়ে পিঠা-পায়েস, খেজুরের রস, রস দিয়ে সেমাই-ফিন্ন ইত্যাদি আয়োজন করা হতো। কিন্তু এবার আবহাওয়া ভিন্ন হওয়ায় শনিবার ও রোববার মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ দরে মেঘলা আকাশ, ইলসে ঘুড়ি বৃষ্টি সকল প্রকার আয়োজনকে ম্লান করেছে। কৃষকদের চোখে-মুখে হতাশার চাপ।

বুড়িচংয়ে গত তিনদিনের অগ্রহায়ণের শেষের টানা ও থেকে থেকে হালকা ও ভারী বর্ষণে কৃষকদের ধানের বীজতলায় পানিতে তলিয়ে গিয়ে সেখানে হাঁটু পানি বিরাজ করছে। ইরি-বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকরা যথাসময়ে ইরি বোরো ধান রোপনের উদ্দেশ্যে বাজার থেকে উন্নতজাতের ধানের বীজ দিয়ে বীজ তলা বুনে ছিল। অনেকে আবার গতবারের ভালো ধানের জাত থেকে তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বীজ সংরক্ষণ করে ওই বীজের চারা দিয়ে ধান রোপনের অধীর আশায় বুক বেধেছিল।

কিন্তু, বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বিরূপ আবহাওয়ার দরুণ শীতের আগমনের এ মৌসুমে ধানের বীজের এ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এদিকে এরূপ বৃষ্টির ফলে এতদঅঞ্চলের ব্রিক ফিল্ডের ইট প্রস্তুতকারি বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলেও জানা যায়। তাদের ধারণা ছিলে বছরের এই সময়টাতে সাধারণরত বৃষ্টিপাত হয় না। তাই তারা বিপুল আশা ও উদ্দীপনা নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে ইট প্রস্তুত করতে ছিল। কিন্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ওই বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাদের মাথায় হাত পড়েছে। সারি সারি কাঁচা ইট পলিথিনের কাগজ দিয়ে ঢেকে দিলেও গত কয়েক দিনের হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাতে কাঁচা ইটগুলো ভেঙে আবার মাটিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষিবিদ এহতেসামূল রাসূলে আয়াত এর পরামর্শ হলো কৃষকরা পৌষের ১ম সপ্তার শেষের দিকে পুনরায় আলু চাষ করতে পারেন অথবা ভুট্টা বা বোরো আবাদ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ জানান, কুমিল্লার সবকটি উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাছাড়া আলু বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। সেই সাথে অর্থকারী ফলও।খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার দিন দিন এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, বাজারে আলুর দাম কখনোই আর কম থাকছে না এবং প্রতি বছর উৎপাদিত আলুর যে পরিমাণ হিমাগারে রাখা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদিত হয়।

বিডি২৪লাইভ/এস এ


 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: