‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিল জামায়াত’

প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৫৪ এএম

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাংসদ আহসান হাবিব লিংকন বলেছেন, সংবিধান সংশোধন করে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এই নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকারের যে সংকট, তার সমাধান শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের ব্যাপার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশের স্বনামধন্য অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডি২৪লাইভের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন আহসান হাবিব লিংকন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিডি২৪লাইভের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন।

লিংকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন বাতিল করে ছিলেন তখন যে সংসদীয় কমিটি হয়েছিলো সেই সংসদীয় কমিটিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে তখনও তিনি (শেখ হাসিনা) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু কোন খান থেকে, কোন ইঙ্গিতে কেন তিনি এইদিকে গেলেন ও দেশকে একটা অনিশ্চিত, ভয়াবহ সংকটে ঠেলে দিলেন তা বুঝে আসে না।

তিনি বলেন, আমরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। ১৭২ দিন টানা হরতালের কর্মসূচি পালন করেছি। তখন তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন তৃতীয় বিশ্বের মত আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তখন তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ পর্যন্ত আমরা করেছি। জামায়েতে ইসলামীও সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছে। অনেক ত্যাগ, অনেক রক্তের বিনিময়ে, অনেক অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় করি।

তিনি বলেন, আমি মনে করি সেই দিন শেখ হাসিনা সঠিক ছিলো। কিন্তু আজ হয়তো কোনো এক শক্তি তাকে ভুল বুঝিয়ে দেশটাকে বড় সংকটের মুখে রেখেছে। আজকে ৭০ টাকা কেজি চাল। ১০০ টাকা কেজি পেয়াজের মূল্য। মানুষ যাবে কার কাছে। কার কাছে আশ্রয় নিবে। সাধারণ মানুষ আজ গভীর সংকটে। দেশের এই ভয়াবহ সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। এসব কারণেই বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে সংকট আছে তা সমাধানের উপায় কি? এবং এই সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা কি হতে পারে? জানতে চাইলে, লিংকন বলেন, সংবিধানে সংশোধনী এনে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত। এটা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধয়ক সরকার যখন বাতিল করেছিলেন তখন যে সংসদীয় কমিটি হয়েছিলো সেই সংসদীয় কমিটিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে তখনও তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু কোন খান থেকে, কোন ইঙ্গিতে কেন তিনি এইদিকে গেলেন ও দেশকে একটা অনিশ্চিত, একটা ভয়াবহ সংকটে ঠেলে দিলেন তা বুঝে আসে না।

সাবেক এই সাংসদ বলেন, আমি নির্বাচনী এলাকাতে গণসংযোগে গিয়েছিলাম। মানুষের মুখে শুধু একটাই কথা এবার ভোট দিতে পারব তো? কেন্দ্রে যেতে পারব? যে ভোটটা দিব তার ঘোষণা আসবে? তাহলে এটা তো বঙ্গবন্ধুর কন্যার জন্য তো ডিসকেডিট! এই জিনিসটা ওনাকে বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর একবার বিএনপি একবার আওয়ামী লীগ এই ধারাবাহিকতায় তো ক্ষমতার পালা বদল হচ্ছিল। কিন্তু না আমাকে একবারে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হবে। ৪১ সাল নয় তার চেয়ে বেশি থাকেন তবে মানুষের ভোটের অধিকার বঞ্চিত করে নয়।

দেশের যখন এ রকম রাজনৈতিক সংকট থাকে দুর্নীতিবাজরা তখন সেই সুযোগ গ্রহণ করে উল্লেখ করে সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, দেশের এই সংকটে দুর্নীতিবাজরা লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করছে। এটা আমার কথা নয়। সরকারের কথা। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো লুট হয়ে যাচ্ছে। রডের জায়গায় বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গতকালও এক সেমিনারে বলা হয়েছে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা করতে ৫৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ ভারতে খরচ হয় মাত্র ১৩ কোটি টাকা। পাকিস্তানে খরচ হয় ১৪ কোটি টাকা। চীনে খরচ হয় ১১ কোটি টাকা। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত যে রাস্তা হবে সেখানে খরচ হবে ৯৫ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর নজর দেয়া উচিত। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমার আমলে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। অথচ পিডিবির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে ওই দিন ৭ হাজার ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। ওনি বলেছেন, ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তাহলে ওনাকে ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে। যারা ওনাকে এ রকম ভুল তথ্য দিচ্ছে তাদেরকে অবিলম্বে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিছু দুর্নীতিবাজ  রাজনীতিবিদ তাকে ভুল পথে নিয়ে দেশটাকে একটা বড় সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দিতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অনেক গুণ আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তিনি প্রধানমন্ত্রী। আমাদের বড় বোন। ওনি রাগ করতে পারেন, ক্ষোভ করতে পারেন, অভিমান করতে পারেন। কিন্তু জাতিকে বিভক্ত করতে পারেন না। ওনার কাজ হলো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। বঙ্গবন্ধু দল, মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেই স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। আজকে এ দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবশ্যই তাকে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন কিছু বামপন্থী নেতা আছেন ওনার সাথে যাদের ভোট নেই। এই জন্য তারা চাচ্ছে না বিএনপির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে আসতে। কারণ হলো যেহেতু তারা বাম তাদের সাথে আন্তর্জাতিক একটা সম্পর্ক আছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবেও চাপ প্রয়োগ করে আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বানাতে চায়। যেটা প্রধানমন্ত্রীর জন্যেও লজ্জাকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ দেশের সবচাইতে প্রচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই সংগঠন তো নির্বাচনকে ভয় পাওয়ার সংগঠন নয়। এমন কোনো বাড়ী নেই যে বাড়ীতে আওয়ামী লীগ নাই। সেই আওয়ামী লীগ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা দেখে নির্বাচন কে ভয় পাচ্ছে কেন?

দেশের চলমান সংকট সমাধান একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে। যেহেতু তিনি সরকারে আছেন তাই সমাধানের উদ্যোগটাও তাকেই নিতে হবে। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় ওনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, সারাবিশ্বে ওনার আন্তর্জাতিক খ্যাতি আছে, তাহলে ওনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। যে যে কারণে বেগম খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে যাননি ঠিক একই কারণে এবারও নির্বাচনে যাবেন না যদি না নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয়। এটা আমার জন্য নয় জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। দিতে হবে। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময় অর্জিত এই দেশে আপনি মানুষকে ভোট দিতে দিবেন না। ঘোষণা করে দিবেন তা হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনা ভোটে প্রধানমন্ত্রী এটা কোনো দোষারোপ না এটা বাস্তবতা। আর আওয়ামী লীগ যেভাবে দোষারোপের রাজনীতি করে। তাদের শাসননামলে লাখ লাখ কোটি টাকা যে দুর্নীতি হচ্ছে। এখন হাওয়া ভবন তো প্রতিটি উপজেলায়। তখন তো একটা ছিলো কিন্তু এখনতো শত শত হাওয়া ভবন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রতিবছর প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। গত ৯ বছরে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, লুট হয়ে যাচ্ছে। ৯ বছর ধরে পদ্মা সেতুর মাত্র ১টা স্পেন উঠেছে আরও ৮৩ টি বাকী। মুহিত সাহেব বলেছেন মেয়াদে হবে না। আগামী মেয়াদেও হবে না। আপনি আমার কাছে নিশ্চিত থাকতে পারেন।

আমাদের কর্মদক্ষতার দিকে সরকার নজর দিতে পারছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যস্ত বিএনপি-জামায়াকে নিয়ে। জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদ থেকে, সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেনি? ১৯৯৬ সালে জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিএনপির ভোট বিভক্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে।’

দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি কি নেতৃত্ব সংকটে পড়বে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে বেশি মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে মনে হয়, বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, ইতোমধ্যেই আদালতে তথ্য প্রমাণ তার (খালেদা জিয়া) আইজীবীরা উপস্থাপন করেছেন তাতে প্রতিয়মান হয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন ঘটতে পারে। সেটা সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে। তাকে সাজা দেয়া হলে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হবে এবং এর দায়ভার প্রধানমন্ত্রীকেই বহন করতে হবে। জনগণ বিশ্বাস করে না বেগম খালেদা জিয়া এই সামান্য টাকা নিয়ে কোনো দুর্নীতি করতে পারেন। ১/১১ সরকার তদন্ত করেই আমাদের দুই নেত্রী সম্পর্কেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাননি। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে বিপরীতে মাত্র ২ কোটি ৩ কোটি টাকার জন্য যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এটা্ প্রতিহিংসা ছাড়া কিছুই না। অন্যায়ভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করা হলে জনগণ যদি রাজপথে নেমে আসে তাহলে তা গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হতে পারে। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শীতার প্রতি আস্থাশীল।

বিডি২৪লাইভ/এএএম/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: