দিশেহারা ডিআইজি মিজান

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৪১ এএম

নেসারুল হক খোকন: নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান চাকরি হারানোর ভয়ে এখন ভিন্ন কৌশল বেছে নিয়েছেন। সবার সঙ্গে সমঝোতা করে এ যাত্রা পার পাওয়ার জন্য সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি তুলে নিয়ে যে মেয়েকে বিয়ে করে চার মাস সংসার করার পর কারাগারে পাঠিয়েছিলেন, এখন তার সঙ্গে আপস করার নতুন ফাঁদ পেতেছেন। অভিযোগ প্রত্যাহার করতে মেয়ের মাকে বাধ্য করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত পত্র বৃহস্পতিবার যুগান্তরের হাতে এসেছে। ডিএমপি কমিশনার বরাবর লেখা চিঠিটি যদিও এখন পর্যন্ত পাননি বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

জানা গেছে, মরিয়ম আক্তার ইকোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করাসহ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকার জীবন বিষিয়ে তোলার অভিযোগ তদন্ত করছেন পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) মইনুর রহমান চৌধুরী। তিনিসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি এরই মধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে এ তথ্য জানান।

এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধান চলাকালে ২১ দিন কারাভোগের পর ডিআইজি মিজান ১ জানুয়ারি ভুক্তভোগী তরুণী মরিয়ম আক্তার ইকোকে জামিনে বের করে আনেন। কিন্তু এরপর থেকে ১১ দিন তার কোনো খোঁজ মেলেনি। শত চেষ্টা করেও যুগান্তর প্রতিবেদক ইকো এবং তার মা কুইন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সূত্র নিশ্চিত করেছে, নিজের গুরুতর অপরাধের অন্যতম সাক্ষী ইকো এবং তার মাকে আড়াল করতে ডিআইজি মিজান রাজধানীর বছিলার ২ নম্বর সড়কের ১ নম্বর ভবন ‘বিসমিল্লাহ নিবাসে’ দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন। এজন্য তার গাড়িচালক গিয়াসকে (কনস্টেবল) ইকোর বাবা পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নেয়া হয়। শুরু থেকেই গিয়াস তার অন্যতম সহযোগী।

তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ প্রত্যাহার বিষয়ে একটি আবেদন বৃহস্পতিবার পাওয়া যায়। ইকোর মা কুইন তালুকদার স্বাক্ষরিত ওই আবেদনটি ২ জানুয়ারি রিসিভ দেখানো হয়। এতে তিনি লালমাটিয়ার সি-ব্লকের ১/১নং বাড়ির সি-৪ ফ্ল্যাটের ঠিকানা উল্লেখ করে বলেন, ‘বিগত ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত আমার সব অভিযোগ মানুষের প্ররোচনায় ও রাগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন দফতরে দাখিল করি। আমার দাখিলকৃত অভিযোগটি আমি স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ শরীরে, স্থির বুদ্ধিতে, অন্যের বিনা প্ররোচনায় সব অভিযোগ প্রত্যাহার করলাম এবং আমার পরিবারের সব সদস্যের অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’

ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কুইন তালুকদারের অভিযোগ প্রত্যাহারের এই আবেদন পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি এরকম কোনো আবেদন পাইনি। অলরেডি ডিআইজি মিজানকে ক্লোজড করা হয়েছে। এডিশনাল আইজি (অর্থ) মইনুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি ইনকোয়ারি করছে। আইজি স্যার এটা টেকওভার করেছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগ প্রত্যাহারের এসব চিঠি এখন আর ধোপে টিকবে না। সবাই জানে এগুলো কার ভয়ে, কী কারণে দিচ্ছেন। উনার (ডিআইজি মিজান) এখন তওবা করে চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়া উচিত। কারণ তার কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পুলিশের অনেক ক্যাডার কর্মকর্তাও তার আচরণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেকে সরকারি দলের বিশাল কিছু একটা পরিচয় দিয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করতেন। তিনি মনে করেন, আসলে এ ধরনের অফিসাররা কোনোদিনই সরকারের আশীর্বাদ হতে পারে না। শেষমেশ বড় বোঝায় পরিণত হয়। ডিআইজি মিজানের ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, শুধু নারী কেলেঙ্কারি নয়, এখন তার অনেক কিছুই বের হবে। নামে-বেনামে কোথায় কী পরিমাণ সহায়-সম্পত্তি গড়েছেন, তার হিসাব দুদক এরই মধ্যে খোঁজ নিতে শুরু করেছে। তিনি জানান, ডিআইজি মিজান মিডিয়ার সাহসী ভূমিকার কারণে ধরা পড়ার পর এখন তার অনেক ক্ষমতাধর দোসরও আতঙ্কে আছেন। কারণ তাদেরও অনেক কুকীর্তি আছে। তিনি বলেন, উচ্চপর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তাদের অনুসন্ধানে ভয়াবহ আরও তথ্য বের হবে।

ইকোর পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, জোরপূর্বক বিয়ে করা দ্বিতীয় স্ত্রী ইকোর বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বেইলি রোডের বাসা ভাংচুরের মামলাটি মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে মামলার বাদী ডিআইজি মিজানের ভাগিনা আসিফ আরেফিন। যদিও মামলায় এ পরিচয় গোপন করা হয়। মিজানের কাছে খবর চলে আসে জামিনে শিগগির বেরিয়ে আসবেন ইকো এবং এরপর তিনি সংবাদ সম্মেলন করে পুরো ঘটনা ফাঁস করে দেবেন। এর মধ্যে তিনি যুগান্তরের অনুসন্ধানের বিষয়টিও জেনে যান। এ অবস্থায় সবার সঙ্গে আপস-মীমাংসা করে নিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু তার সহকর্মীদের কয়েকজন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, এটি আপস-মীমাংসার পর্যায়ে আর নেই। কারণ যেসব ওডিও ও ভিডিও চিত্র মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে পড়েছে, তাতে তাকে বিভাগীয় মামলা ফেস করতেই হবে। এমনকি একপর্যায়ে ফৌজদারি মামলা হওয়ারও আশঙ্কা আছে। সূত্র:-যুগান্তর

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: