শুকনো পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন 

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ০৫:০৯ পিএম

নরসিংদীতে শুকনো পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। ভালো মানের চারা উৎপাদন, উৎপাদন খরচ কম ও ফলন বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পদ্ধতি। ধান চাষে কৃষকদের লাভবান করতে এ পদ্ধতি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষকরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করায় বোরো বীজ অঙ্কুরোদগমের হার কম হচ্ছে, চারাও ভালো হচ্ছে না। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে শুকনো বীজতলা পদ্ধতি অবলম্বণ করে বেশ ভালো ফল পাচ্ছেন তারা। শুকনো পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদনে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও বীজের অঙ্কুরোদগমের হার আশাতিত, চারাও সুস্থ্য থাকছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, স্বল্প সময়ে ধানের সুস্থ্য ও সবল চারা উৎপাদনে এবং কুয়াশার কবল থেকে বাঁচাতে ভেজা (সেচ দেয়া) বীজতলার চেয়ে শুকনো বীজতলা বেশি উপযোগী। এতে ফলন ভালো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষকরাও।

নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে শুধুমাত্র নরসিংদী সদর উপজেলায়ই ৫ হেক্টর এবং অন্যান্য আরো চার উপজেলায় ২ হেক্টর শুকনো বীজতলায় ধানের চারা উৎপাদন করা হয়েছিল। এ বছর বোরো মৌসুমে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর ও অন্যান্য আরো চার উপজেলায় ৫ হেক্টর শুকনো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
 
শুকনো বীজতলা তৈরি পদ্ধতি নিয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের ছেরেন্দা গ্রামের কৃষক মহিবুর রহমান জানিয়েছেন, ২০১৪ সর্ব প্রথম কৃষি অফিসের পরামর্শে এক ব্যাগ বীজ থেকে ৫ কেজি করে সনাতন ও শুকনো বীজতলা পরীক্ষামূলক আলাদা আলাদাভাবে শুরু করি। তাতে শুকনো বীজতলায় ব্যাপক সফলতা পাওয়ার পর আস্তে আস্তে এই বীজ তলার পরিধি বৃদ্ধি করতে থাকি। এ বছর নরসিংদী (এনএটিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে আমার একক নিজস্ব জমিতে আমিসহ এই এলাকার হাজী আব্দুল ওহাব, ইসমাইল, মতিন মিয়া, কবির মিয়া, বজলুর রমান, নজরুল ইসলাম, হরমুজ আলীসহ কান্দাইল সিআইজি (পুরুষ ফসল) সমবায় সমিতির ২০ জন্য সদস্য এক সাথে শুকনো বীজতলা তৈরি করেছি। আমরা এবার জমিতে বেড তৈরি করে শুকনো মাটিতে বীজ বপন করেছি। এরপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে, যাতে ঠান্ডা বা কুয়াশা থেকে বীজ রক্ষা পায়। বাইরের পরিবেশের চেয়ে পলিথিনের নিচে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকায় কম সময়ের মধ্যে বেশি পরিমাণ বীজের অঙ্কুরোদগম হয় এবং দ্রুত চারা বড় হয়। 

পলাশ উপজেলার চরনগরদী এলাকার কৃষক সারোয়ার মোল্লা জানান, আগে আমরা পানি সেচ দিয়ে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতাম। কিন্তু গত বছর থেকে শুকনো বীজতলায় চারা উৎপাদন করছি। এতে বীজ ও চারা উভয়ই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বাড়তি কোনো সেচও দিতে হয় না বলে খরচ অনেকাংশে কম লাগে।
 
নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী মোশারফ হোসেন জানান, প্রথম বছর আমাদের পরামর্শে মাত্র ৫ কেজি ধান বীজ দিয়ে শুকনো বীজতলা তৈরি করেন মহিবুর রহমান। ফলাফল দেখে নিজেদের উদ্যোগেই তিন বছর ধরে কান্দাইল এলাকায় ধীরে ধীরে শুকনো বীজতলার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।
&dquote;&dquote;
 
নরসিংদী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হাই জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিজ উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে শুকনো বীজতলার যাত্রা শুরু হয়। এ বছর ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি) জেলার সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় সারে ৩ হাজার কৃষকদের নিয়ে ৪০ হেক্টর শুকনো বীজতলার মাধ্যমে ১৪০টি প্রদর্শনী মাঠ তৈরি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই ১৪০টি প্রদর্শনীর সকল খরচ (এনএটিপি) বহন করবে। এই শুকনো বীজতলা তৈরি করতে ১০ কেজি ধান দিয়ে ৩ শতকের জন্য খরচ হয় মাত্র ৩ হাজার ৬শত টাকা। অপরদিকে সনাতন পদ্ধতিতে একই পরিমাণের বীজতলা তৈরি করার জন্য খরচ হয় ৫ হাজার ৫০ টাকার মতো। আর শুকনো বীজতলার চারা ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে রোপন করা সম্ভব হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে ৪০ থেকে ৫০ দিনের পর রোপনের উপযোগী হয়। বিশেষ করে শুকনো বীজতলার চারা উঠাতে গেলে গুচ্ছ শিকরের কোনো ক্ষতি হয়না ফলে রোপনের অল্প দিনের মধ্যেই ফলাফল দেখা যায়।
 
অন্যদিকে সনাতন পদ্ধতির বীজতলার চারা উঠাতে গেলে গুচ্ছ শিকর ছিড়ে যায় ফলে রোপনের পর গুচ্ছ শিকর গজাতে অনেক সময় লাগে।
 
এ বিষয়ে নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: লতাফত হোসেন জানান, বোরো মৌসুমের শুরুতে কুয়াশা খুব বেশি থাকায় অনেক সময় বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা হলে অর্ধেক বীজ কাঁদার ভেতরে থাকায় তা অঙ্কুরোদগম হতে পারে না। এছাড়া বিভিন্ন পাখিও ধান খেয়ে ফেলে। ফলে অর্ধেকের বেশি বীজই বিফলে চলে যায়। যার কারণে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতি হয়। এ কারণে ২০১৪ সাল থেকে শুকনো বীজতলার দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এই পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে সুস্থ্য-সবল চারা উৎপাদন সম্ভব। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের এ পদ্ধতিতে আগ্রহী করার তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করে কাজ করে যাচ্ছে। 

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: