শেখ হাসিনার উন্নয়নের ৯ বছর 

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০১:০৭ পিএম

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ছিলো উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। নয় বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। কৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত। দিনবদলের সনদ, ‘রুপকল্প-২০২১’, এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচির প্রতি জনগণ অকুন্ঠ সমর্থন প্রদানের কাজ করেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী।

বর্তমান সরকারের আমলে মাথাপিছুর আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ১৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুতের উত্পাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। ৮৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। 

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো- ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পখাতের অবদান ৩৭ শতাংশে উন্নীত, বেকারত্ব ও অর্ধ-বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশে নামীয়ে আনা, মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ৬০০ কিলো ওয়াট-ঘন্টায় উন্নীত করা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পরিকল্পনাটি তার বাস্তবায়ন মেয়াদের অর্ধকালে উপনীত হয়েছে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপি ছিলো ৭২ বিলিয়ন ডলারেরও কম এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১০২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় অর্থাৎ ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের তুলনায় সাড়ে তিন গুন। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৫.১ শতাংশ যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭.২৮ এ উন্নীত হয়।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সাড়ে চার গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ছিল মাত্র ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩ শত কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

বেসরকারি বিনিয়োগ ২০০৫-০৬ এর ৭৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা হতে প্রায় ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ০.৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২.৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ও কর রাজস্ব পাঁচ গুণ বেড়েছে। মোট রাজস্ব আয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪৪.২ হাজার কোটি টাকা হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১৮.৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয় অর্থাৎ রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। এ সময়কালে কর-রাজস্ব ৩৫.৫ হাজার কোটি টাকা হতে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯২.২৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৪৪ শতাংশ যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৭.১৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী পয়েন্ট-টু- পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৫.৮৩ শতাংশ; এসময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.১৩ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি মাত্র ৩.৮৫ শতাংশ।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের প্রধানতম শ্রম বাজারের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে ২০১০-১১ হতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর সময়কালে মোট ৪০ লক্ষ ৩২ হাজার জন কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। এত কর্মসংস্থান অতীতে আর কখনো হয়নি। ২০১৭ পঞ্জিকাবর্ষে রেকর্ড ১০ লক্ষ ৮ হাজার ৫২৫ জন বাংলাদেশি কর্মোদ্দেশ্যে বিদেশে গমন করেছে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪.৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ১২.৮ বিলিয়ন ডলার হয়। রেমিট্যান্স আয় প্রায় তিন গুণ (১৬৬ শতাংশ) বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ গুণেরও বেশী বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে ছিল ৩৩.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজাভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। রিজাভ বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় সাড়ে নয় গুণ।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন হয় ২৬.৫ মিলিয়ন মে. টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাল উৎপন্ন হয়েছে ৩৩.৮ লক্ষ মে. টন। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লক্ষ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। দেশে খাদ্য মজুদ ক্ষমতা ১৪.৬ লক্ষ মে. টন থেকে বেড়ে ২০১৬ তে ২০ লক্ষ ৪০ হাজার মে. টনে উন্নীত করা হয়েছে।

১৩ টি বৃহৎ সেতু নির্মাণ, ৩০.৫ কি:মি: নতুন সড়ক ও ৪ হাজার ৪৬ মিটার কংক্রিট সেতু নির্মাণ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নতীকরণ, ৩.১ কি:মি: কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে। ৭৫০ মি. দীর্ঘ তিস্তা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নতীকরণ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। নিকুঞ্জ-বনানী-মিরপুর-পূর্বাচল সংযুক্ত উড়াল সেতু, মগবাজার-মালিবাগ উড়াল সেতু সমূহ উন্নয়নের দৃশ্যমান মাইলফলক সৃষ্টি করেছে।

এছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ,দোহাজারী হয়ে রামু হতে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্র্যানজিট ডেভেলপমেন্ট, পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প (১ম ও ২য় পর্যায়০, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড প্রজেক্ট, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প (২৬৬০ মেগাওয়াট),এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ। ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ৫০ ভাগ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সরকার নির্বাচনী ইস্তেহারে ২০১১ সালে মধ্যে ৫০০০ মেগাওয়াট এবং ২০১৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ ্্উৎপাদন ৭০০০ মেগাওয়াট উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। যা ইতোমধ্যে ২০১১ সালেই এ লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালের ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ১৫ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে (সরকারি খাতে ৭০৫৪, বেসরকারি খাতে ৫৫২৫ ও ভারত হতে আমদানিকৃত ৬০০ মেগাওয়াট)। এতে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন দাড়িয়েছে ৪৩৩ কিলোওয়াট। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। নির্মানাধীন রয়েছে নতুন ৩৩টি স্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

শিক্ষা ক্ষেত্রেও এক অবিস্মরণীয় সাফল্য রয়েছে। ২৬ হাজার ১৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকরি সরকারি করা হয়েছে। বিদ্যালয়বিহীন ১ হাজার ১২৫টি গ্রামে নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

নারী প্রতি মোট সন্তান জন্মহান ২.১০ তে নেমে এসেছে, একই সময়ে শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ২৮ জন এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ৩৫ জনে নেমে এসেছে, যা ২০০৫ সালে ছিল যথাক্রমে ৫৬ জন ও ৮২ জন। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে ১৭৮ জন যা ২০০৫ সালে ছিল ৩২০-৪০০ জন।

বাংলাদেশের ’জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ বিশ্বের সর্ববৃহৎ তথ্য পোর্টাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে যেখানে টেলি ডেনসিটি ছিল মাত্র ১৩.৪৪ শতাংশ, ২০১৭ সালে এসে তা ৮৩.০৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একটি নিরবচ্ছিন্ন ও উন্নত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মহাকাশে ’বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নামে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা ২০১৭ সালের বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ৩০ নম্বরে। যুক্তরাষ্ট্রের টাইম কর্পোরেশনের বাণিজ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন ফরচুনের মারচ ২০১৬ সালের জরিপে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: