যে কারণে সৌদি আরব ছাড়ছেন বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ০১:২৯ পিএম

পরিবারকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল করতে অনেকেই পাড়ি জমান সুদূর পরবাসে। লক্ষ্য একটাই সুখে থাকা ও পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফোটানো। এ কারণে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি হাজার হাজার নারী শ্রমিক বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছেন। এই দেশগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশ সৌদি আরব অন্যতম।

তবে সুখের আশায় এ সমস্ত দেশে আসার পর তাদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গৃহকর্তা কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে কাজ ছেড়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে আসা অসংখ্য সৌদি প্রবাসী নারী শ্রমিকরা।

সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দা কনস্যুলেটে রবিবার (২১ জানুয়ারি) পর্যন্ত অন্তত প্রায় ৩২৯ জন নারী শ্রমিক আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু এখানেই থেকে নেই প্রতিদিন বাড়ছে আশ্রয় নিতে আশা শ্রমিকের সংখ্যা।

এদিকে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের শ্রম কাউন্সিলর সারোয়ার আলম বলেন, এর আগে গত ২৯ মার্চ থেকে এক মাসে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৫০২ জন নারী শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ বছর নতুন করে আশ্রয়ে থাকা ৩২৯ নারীর মধ্যে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে রয়েছেন ৭৪ জন নারী শ্রমিক আর বাকি আড়াই শতাধিক নারী শ্রমিক রয়েছেন রিয়াদ দূতাবাসে।

বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দা কনস্যুলেটে আশ্রয় নেয়া এসব নারী শ্রমিকদের অভিযোগ, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বৈধভাবে শ্রমিক হিসেবে এলেও বাংলাদেশ থেকে দালালরা যে সব কাজের কথাবার্তা বলেছিল, সৌদি আরব আসার পর সেই অনুযায়ী তাদের কাজ দেয়া হয়নি। এমনটাই বলেন সৌদি প্রবাসী নারী শ্রমিকরা

শ্রমিকদের কেউ কেউ বলেন তাদেরকে সৌদি আরবের হাসপাতালে নার্সের সহযোগী ও পিয়নের কাজের কথা বলে আনা হলেও এখানে আসার পর ক্লিনারের কাজ দেওয়া হয়েছে। রিয়াদ দূতাবাসে আশ্রয় নেয়া অধিকাংশ নারীই মূলত গৃহশ্রমিক। তাদের ঠিক মতো বেতন দেওয়া হতো না, ঠিক মতো খাবারও পেতেন না। এছাড়াও দিনে দিনে মালিক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌন নির্যাতনেরও ঘটনা ঘটেছে। ফলে তারা কোনো ভাবে পালিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফ হোমে আশ্রয় নিয়েছেন। কয়েকজন নারী শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটাই বলেন।

আর এই নির্যাতন, কষ্ট শয়তে না পেরে দেশে ফেরার আশায় প্রতিদিনই আশ্রয় কেন্দ্রে নতুন নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দার মিশনের, দুই আশ্রয় কেন্দ্রে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত নারী শ্রমিক রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই থাকা ও খাওয়ার সমস্যার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ জানান, ‘বর্তমানে দূতাবাসে আশ্রয় নেয়া নারী শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর একটি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত যদি কোনো শ্রমিক আমাদের কাছে আসে বা আশ্রয় নেয়ার পর ২ থেকে ৮ সপ্তাহের মতো সময় লেগে যায়। এরমধ্যে আমরা যাবতীয় প্রক্রিয়া গুলো শেষ করেই তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেই।’

গোলাম মসীহ আরো বলেন, শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সহযোগিতাপরায়ণ। প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিকরা দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন। আবার তাদের দেশেও ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: