কেন আত্মহত্যা করলেন এমপি পুত্র অনিক?

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ০৪:০৬ পিএম

আত্মহত্যা বা আত্মহনন হচ্ছে একজন নর (পুরুষ) কিংবা নারী (মহিলা) কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। যখন কেউ আত্মহনন করেন, তখন এ প্রক্রিয়াকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়।

ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে এক ধরনের অপরাধরূপে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যিনি নিজেই নিজের জীবন প্রাণ বিনাশ করেন, তিনি -আত্মঘাতক, আত্মঘাতী বা আত্মঘাতিকা, আত্মঘাতিনীরূপে সমাজে পরিচিত হন।

প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ।

রবিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের এমপি মুহাম্মদ এডভোকেট মোস্তফা লুতফুল্লাহ একমাত্র ছেলে অনিক আজিজ (২৬) গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

সকালে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার ন্যাম ৫নং ভবনের ৫০৪ নম্বর কক্ষ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন। শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে ন্যাম ফ্লাটটিতে অনিক, তার বোন সৃষ্টি ও ড্রাইভার ছিলেন। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই ঘুমাতে যায়। সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠলেও অনিক আজিজ উঠছিলেন না। অনেক ডাকাডাকি করলেও না উঠায় তার রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায় তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

জানা যায়, ২৭ বছর বয়সী অনীক খুলনার সিটি পলিটেকনিক থেকে ইলেক্ট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে আইইএলটিএস করছিলেন। পাশাপাশি পাঠশালায় ফটোগ্রাফির কোর্স করছিলেন তিনি।

মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘তোর জন্য চিঠির দিন......’ ছিল এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহর ছেলে অনিক আজিজের শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস। যে স্ট্যাটাসটি অনিক ভোর ৪টা ০৫ মিনিটে ফেসবুকে আপডেট করেছেন। কিন্তু সকালেই ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে পাওয়া গেল তার ঝুলন্ত মরদেহ।

&dquote;&dquote;

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী আজ ভোরে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার বাসায় ফিরে ছেলের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ বাসা থেকে অনীকের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। পোস্ট মর্টেম হলেই সব বোঝা যাবে বলেও জানান তিনি।

ইতোমধ্যে অনিকের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে অনীকের লাশের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ এম সেলিম রেজা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে যা লেখা হয়েছে, ময়নাতদন্ত করে তারও একই ধারণা হয়েছে।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে কী ছিল জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, “লেখা ছিল গলায় তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা। আমার ফাইন্ডিংসেও তাই পাওয়া গেছে।”

এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ। তবে ঠিক কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি পুলিশ। নেপথ্য কারণ নিয়ে এখনো কেউ মুখ খুলেননি। তবে প্রেমঘটিত কারণে বা অন্য কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: