এমপি রানার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চতুর্থবারের মতো পেছাল

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ০৪:৫৮ পিএম

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা আবারও অসুস্থ্য হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ধার্য তারিখ চতুর্থ দফায় পেছাল। সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি। সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে এ মামলার বিচার কার্য শুরু হয়।

টাঙ্গাইল কোর্ট ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আদালতের বিচারক আবুল মনছুর মিয়া সকাল ১১টায় এজলাসে বসেন এবং প্রথমেই চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। রাষ্ট্রপক্ষ মামলার বাদি নাহার আহমেদ, ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুনের হাজিরা দাখিল করেন।

এ মামলার আসামি নাসির উদ্দিন নুরু, মাসুদুর রহমান মাসুদ ও ফরিদ আহম্মেদ হাজিরা দিয়েছেন। এছাড়া মামলার আরো তিন আসামি মোহাম্মদ আলী, আনিছুর রহমান রাজা ও সমির কারাগারে আটক রয়েছে। কিন্তু মূল আসামি এমপি রানা আদালতে উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানী শেষে বিচারক মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আগামী (১১ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার মূল আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সরকার দলীয় এমপি আমানুর রহমান খান রানা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অসুস্থ্য জনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এবং ফিস্টুলা অপারেশন, উচ্চ রক্তচাপ ও মেরুদন্ডের ব্যাথা জনিত কারণে তিনি যাতায়াতে অক্ষম বলে তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি। এ সংক্রান্ত কাগজপত্রও তারা আদালতে উপস্থাপন করেন।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পিপি মনিরুল ইসলাম খান জানান, এমপি আমানুর রহমান খান রানা অসুস্থতার অজুহাতে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ নয়বার পিছিয়ে যায়। একই কারণে সাক্ষ গ্রহনের তারিখও চারবার পেছাল। এ অবস্থায় মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। এ মামলায় তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল গফুর ও অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকি, জহিরুল ইসলাম জহিরসহ আরো কয়েকজন।

জানা যায়, মামলার মূল আসামি টাঙ্গাইল-৩(ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিস্টুলা অপারেশনের কারণে ঢাকা মেডিকেলের ড. আ.ন.ম নূরে আজমের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। অপারেশন জনিত কারণে তিনি সাময়িকভাবে ভ্রমনে অক্ষম হওয়ায় আদালতে হাজির না করায় ইতিপূর্বে নয়বার এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানী পিছিয়ে যায়। এরপর গত (৬ সেপ্টেম্বর) মামলাটির অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম তারিখ ছিল গত (১৮ অক্টোবর), দ্বিতীয় তারিখ ছিল (১ নভেম্বর) ও তৃতীয় তারিখ ছিল (২৭ নভেম্বর)। এসব দিনও তিনি অসুস্থ্য জনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এ মামলায় সাক্ষীর পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয় (২২ জানুয়ারি)।

উল্লেখ, বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ শহরের কলেজপাড়ায় নিজ বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনার দুইদিন পর নিহতের স্ত্রী নাহার আহমদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তরিত হয়। তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এসআই অশোক কুমার সিংহ (পিপিএম) এ হত্যাকান্ডে এমপি রানা ও তার ভাইদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পান।

দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে বিগত ২০১৬ সালের (৩ ফেব্রুয়ারি) এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার ছোট ভাই জাহিদুর রহমান খান কাকন, সহিদুর রহমান খান মুক্তি, সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক গোলাম মাহফিজুর রহমান। এরপর গত (১৮ সেপ্টেম্বর) এমপি রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। নয়বার তারিখ পেছানোর পর গত বছরের (৬ সেপ্টেম্বর) দন্ডবিধির ৩০২/ ১২০/৩৪ ধারায় সংসদ সদস্য রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত। এ মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি ১০ আসামি এখনও পলাতক রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: