বেলকুচিতে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ০৭:২৯ পিএম

চাঁদাবাজী-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মেয়রের দায়ের করা মামলায় উপজেলা যুবলীগের আহবায়কসহ দুই নেতা গ্রেফতার হওয়াকে কেন্দ্র করে বেলকুচিতে সংসদ সদস্য ও মেয়র গ্রুপ মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছে। সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডল গ্রুপ যুবলীগ নেতার পক্ষ নিয়ে তাদের মুক্তি এবং মেয়র আশানুর বিশ্বাস গ্রুপ শাস্তির দাবিতে পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশ করায় উপজেলার আওয়ামী রাজনীতির মাঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

অধিকাংশ দলীয় নেতাকর্মী বলছেন, সন্ত্রাসী দুই যুবলীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার পূর্বক দ্রুত সমস্যা নিরসন প্রয়োজন। নচেৎ উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যার আগে দুই যুবকলীগ নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর এমপি গ্রুপের যুবকলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা সন্ত্রাসী-নাশকতা চালিয়ে বাস-সিএনজি ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বাস মালিকরা ওই রুটে তিনদিন বাস চলাচল বন্ধ রাখে। বাস মালিক নেতাদের দাবি, বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও আসামীরা সংসদ সদস্যের সাথে প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাদের গ্রেফতার করছে না।

জানা যায়, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল হক রেজা তার বাহিনী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডলের ডানহস্ত হিসেবে উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছিল। বিভিন্ন নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করছে। চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগও দেয়া রয়েছে। যুবলীগ নেত্রীকে ধর্ষণ ও সরকারী কর্মকর্তাকে মারপিট করার অভিযোগে তার বাহিনীর সদস্য রিয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।

এ নিয়ে দলের মধ্যেও এক ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলায় দলীয় কোন্দল বাড়ছে। এছাড়া সংসদ সদস্য মজিদ মন্ডল ও সাবেকমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের মধ্যে দলীয় কোন্দল বিরাজ করায় সাজ্জাদুল হক রেজা সংসদ সদস্যের পক্ষ নিয়ে লতিফ বিশ্বাসের সহধর্মিনী পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ফেসবুকে নানা ধরনের কুৎসা রটনা করে। এ অবস্থায় গত ১২ ডিসেম্বর সাজ্জাদুল হক রেজা ও তার প্রধান সহযোগী ওমর ফারুকসহ তার বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় পৌর কার্যালয়ে গিয়ে ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে মেয়রের রুমের দরজায় লাথি দিয়ে মেয়রকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পৌরসভায় কর্মচারীর নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে চাঁদা দাবি করে। ভয়ে মেয়র দরজা বন্ধ করে ভিতরে লুকিয়ে থাকে। পরে পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাস দ্রুত বিচার আদালতে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় গত বৃহস্পতিবার ডিবি পুলিশ আহবায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা ও যুগ্ম আহবায়ক ওমর ফারুককে গ্রেফতার করেন।

এরপরই রেজার সন্ত্রাসী বাহিনী উপজেলায় সন্ত্রাসী তান্ডব ও নাশকতা শুরু করেন। রাস্তা অবরোধ করে ১৫-২০টি বাস-সিএনজি ভাংচুর করে ও একটি বাস আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়। পরের দিন সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডল আটক যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুল হক রেজার পক্ষ নিয়ে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।

সমাবেশে মেয়র ও তার স্বামী সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির লতিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ, উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করে তোলেন। মামলাটিকে মিথ্যা অভিহিত করে আটক যুবলীগ নেতার মুক্তির দাবি করেন। পরের দিন মেয়রের গ্রুপ আটক সাজ্জাদুল হক রেজার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেন। এতে উপজেলা আওয়ামীন লীগের রাজনীতির মাঠ আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। মেয়র গ্রুপ এবং সংসদ সদস্য মজিদ মন্ডল গ্রুপ মুখোমুখী হয়ে পড়েছেন। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রূপ নিতে পারেন।

পাল্পাপাল্টি সমাবেশ ও মহড়া নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যেও এক ধরনের ভীতি বিরাজ করছে। অন্যদিকে, বাস মালিক নেতারা দলীয় কোন্দলের কারণে যানবাহন ভাংচুর করায় তারাও নিরাপত্তায় ভুগছে। কিছু হলেও যানবাহনের ভাংচুর করার প্রবণতা তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এ জন্য তারা তিনদিন বাস চলাচল বন্ধ রাখার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়ায় গতকাল থেকে বাস চলাচল চালু করেছেন। বাস মালিক সমিতির সভাপতি লিটন সরকারের অভিযোগ বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামীরা প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের সাথে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক জানান, যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুল হক রেজা ভুলত্রুটি যাই করুক না কেন দলীয়ভাবে মিমাংসা করা যেতে পারত। এ নিয়ে মামলা হওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে তাতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নিরসন করার জন্য দ্রুত জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ জী খান বলেন, মেয়রের উপর হামলা ও হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার ঘটনা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ রাজনীতি যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে তাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিষয়টি নিরসন না হলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাস বলেন, পৌর কার্যালয় ভাংচুর ও লাঞ্চিতের ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়া হয়। পুলিশ মামলার আসামী দুই যুবলীগ নেতাকে করলে সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডলের নির্দেশে তার বাহিনী বেলকুচির আওয়ামীলী রাজনীতিকে কলুষিত করে তুলতে বেলকুচিতে জ্বালাও-পোড়া শুরু করে। বাস-সিএনজি ভাংচুর-জ্বালাও পোড়াও করে। নিরীহ মানুষের দোকান পাট লুটপাট করে। সন্ত্রাসীর পক্ষ নিয়ে সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডল মাঠে নেমে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে রাজনীতি পরিস্থিতি ঘোলাটে করে রাজনীতির অবৈধ স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডলের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: