বড়াল নদের বুকে ধানের চাষ!

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ এএম

এক কালের খরস্রোতা নদ বড়াল শুকিয়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। নদটি নাব্যতা হারিয়ে এখন ফসলের মাঠে পরিনত হয়েছে। নদের বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য হালচাষ করা হচ্ছে। উজানে বাঁধ দিয়ে চাষাবাদের জন্য সেচ দেয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং যাতায়াতের জন্য নদের বুকে একাধিক ব্রীজ নির্মাণ করে নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া প্রমত্ত পদ্মায় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় পদ্মার শাখা বড়াল নদের এ অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। নদের বুকে পলি জমে জমে উঁচু হয়েছে, দু’পাড় চেপে গেছে এবং নদের পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। নদের চর ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে।

রাজশাহী জেলার চারঘাট নামক স্থান থেকে পদ্মার শাখা হিসেবে বড়াল নদের উৎপত্তি হয়ে বাঘা, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ভাংগুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ী হয়ে হুড়া সাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় যমুনা নদীতে পড়েছে। শুধু বাগাতিপাড়া উপজেলার বুক চিরে প্রায় ২২ কিঃ মিঃ পথ অতিক্রম করেছে। এক সময় যোগাযোগের সুবিধার কারনে বড়াল নদের দুই পাড়ে জামনগর বাজার, তমালতলা বাজার, বাগাতিপাড়া থানা ভবন, দয়ারামপুর সেনানিবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

এছাড়া অসংখ্য জেলে পল্লী জীবিকার প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থ বছরে নদের তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে  স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদ শুকিয়ে শীর্ণ খালে পরিনত হয়েছে। বর্ষায় নদে কিছু পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মরা নদে পরিনত হয়। এ সুযোগে এ সময়ে এলাকার কৃষকরা নদের বুক জুড়ে ফসলের আবাদ করেন।

পরিনত হয় গবাদী পশুর চারণ ক্ষেত্রে। এক সময় যে বড়ালের পানির সেচে নদের তীরবর্তী মানুষ তাদের জমিতে ফসল ফলাত এখন সে নদের বুকে অগভীর নলকূপ বসিয়ে চলে ইরি চাষ। নদ আছে, নৌকা আছে, নেই শুধু পানি। নদে পানি না থাকায় এ নদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারী উদ্যোগ গ্রহন করে পুনঃ খনন করা না হলে বড়াল তার ঐতিহ্য হারাবে, মুছে যেতে পারে মানচিত্র থেকে এমনই অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

এ ব্যাপারে বড়াল নদী রক্ষা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আঃ করিম বলেন কর্তৃপক্ষ যদি খননের মাধ্যমে বড়াল নদের প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করে তবে শুধু অর্থের অপচয় হবে কোন কাজ হবেনা । নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ সচল করতে হবে এবং এর জন্য চারঘাট রামাগাড়ি সহ সমস্ত স্লুইস গেট  ও বাঁধ অপসারণ করতে হবে। তবেই আমরা আবার ফিরে পেতে পারি আমাদের বড়াল নদ।
 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: