হয়রানির আরেক নাম পাসপোর্ট অফিস !

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ০৭:০০ এএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি ও ভোগান্তির অন্তহীন অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম দুর্নীতি কিছুতেই থামছেনা। দিন দিন বাড়ছে পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম ও ভোগান্তি। অনিয়ম দুর্নীতি যেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা বন্ধু। পদে পদে টাকা গুনতে হয় পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষদের। এরপরও  ভোগান্তির কোন শেষ নেই বলে জানান পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ। সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক মানিক চন্দ্র দেবনাথের নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। মানিক চন্দ্র দেবনাথ বদলি হলেও পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম দুর্নীতির কোন পরিবর্তন আসেনি। 

উপ-সহকারী পরিচালক মানিক চন্দ্র দেবনাথের পরিবর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন সাকাওয়াত হোসাইন। যোগদানের পর কোন পরিবর্তন না হয়ে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অনিয়ম দুর্নীতি আগের মতই চলছে। সম্প্রতি দূর্নীতি দমন কমিশনের নির্দেশনায় “আমি ও আমার অফিস দূর্নীতি মুক্ত” লেখা ফেস্টুন ঝুলিয়েছে পাসপোর্ট অফিস। তবে দূর্নীতি মুক্ত নয় দিন দিন যুক্ত হচ্ছে দূর্নীতি আর জনভোগান্তি। গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ওপেনসিক্রেট এই অনিয়ম দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের নেতৃত্বে রয়েছে উপ-সহকারী পরিচালক সাকাওয়াত হোসাইন। সাকাওয়াত হোসাইন নিজেই দালালদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। বছরের পর বছর ধরে চলা কর্মচারীদের দুর্নীতি আর দালাল সিন্ডিকেটের আধিপত্য এখন যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে এখানে। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারির সৃষ্ট আইন ও উপ-সহকারী পরিচালকের  মদদ এবং ইচ্ছাকৃত অনিয়ম বিতর্কিত করছে নাগরিক অধিকার। ভিতরে ভিতরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে ভোগান্তি শিকার সাধারণ মানুষ। তথ্য মতে, প্রতিমাসে অন্তত ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয় এ অফিসে। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অংগ সংগঠনের একাধিক নেতা পাসপোর্ট অফিসে দালালিতে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দালালিতে জড়িত থাকার কারণে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে জানিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান তোতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক গোয়েন্দা সংস্থার পরিদর্শক জানান- সজিব, ইব্রাহীম, দিলীপ, নিবাস ও মতি ডাক্তারসহ ১০ থেকে ১২ জন দালাল রয়েছে এ পাসপোর্ট অফিসে। পরিচয় গোপন করে এক দালালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের মাধ্যমেও অফিস অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা নেন। পাসপোর্ট প্রার্থীদের কাছে ১ হাজার টাকার উপর যতটাকা পারি আদায় করি।

গত ১৬ জানুয়ারি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জানা গেছে, অফিস কর্মকর্তা ও দালাল সিন্ডিকেটের দাপটে চরম ভোগান্তির শিকার পাসপোর্ট প্রার্থীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও দালাল চক্রের সাথে সক্ষ্যতা গড়ে তুলেছে। অফিসের কোন অনুমতি ছাড়ায় অনায়াসে প্রবেশ করছে চিহ্নিত দালালরা। অভিযোগ আছে, অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ভুল দেখানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট করতে আসা এক ভূক্তভোগী জানান, আমি ঢাকায় থাকার কারনে জাতীয় পরিচয় পত্র করতে পারিনি। জন্মনিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করা যাবেনা বলে ফিরিয়ে দেন। তবে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে আমার ফরম জমা হয়েছে। পাসপোর্ট ডেলিভেরি তারিখের ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও পাসপোর্ট পাননি বলে অভিযোগ করেন আরেক ভুক্তভোগী। কর্তৃপক্ষ বলছে ঢাকায় পাসপোর্ট প্রিন্টিং মেশিন নষ্ট থাকায় পাসপোর্ট ডেলিভারিতে বিলম্ব হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আল মামুন রেজা সজল নামে এক আবেদনকারী জানান, জরুরী পাসপোর্টের জন্য ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন। হয়রানির ভয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রুহুল নামে এ দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফরম জমা দিয়েছেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চরাগ্রামের দেলুয়ার নামের এক আবেদনকারী বিডি২৪লাইভেক জানান, তিনি আগের দিন গত রোববার একই কাগজপত্র আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন। তখন অন্য ভুল ধরা হয়েছিল। সেই সময় হাসান নামের অফিস সহকারী বলেছিলেন, এসব ভুল কোন ব্যাপার না, পাসপোর্ট প্রতি দেড় হাজার টাকা দেন, সময়মতো এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাইয়েন। কিন্তু দুটি পাসপোর্টের জন্য তিন হাজার টাকা ঘুষ দিতে রাজি হয়নি দেলুয়ার। তাই রোববার কাগজপত্রে যেসব ভুল ধরা হয়েছিল সেগুলো সংশোধন করে পরের দিন জমা দিতে যান। কিন্তু এদিন আবার নতুন ভুল ধরে তাঁর কাগজপত্র আর জমা নেওয়া হয়নি। পরে অজ্ঞাত এক সুপারিশে পাসপোর্ট ফরম জমা নেন তার। 

এ বিষয়ে উপ-সহকারী পরিচালক সাকাওয়াত হোসাইন বিডি২৪লাইভেক জানান, দুইটি মেশিনে সারাদেশের পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়। একটি প্রিন্টিং মেশিন নষ্ট থাকায় পাসপোর্ট ডেলিভেরিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দালাল ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে উপ-পরিচালক সাকাওয়াত হোসাইন বলেন, পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এখানে শুধু ফরম জমা হয় ঘুষ লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। দালালিটা আমার অফিসের বাইরের ব্যাপার, কেউ যদি না বুঝে দালালদের টাকা দেই তাহলে আমার কি করার আছে। অফিসের বাইরে গিয়ে দালালদের পেটানোর ক্ষমতা সরকার আমাকে দেইনি। প্রশাসনিক ক্ষমতা যাদের হাতে তারাই দালাল নির্মূল করবে। এ অফিসে দালালদের কোন প্রশ্রয় নেই বলে তিনি জানান।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: