স্ত্রীর প্রেমিকের কাটা মাথা নিয়ে স্বামীর কাণ্ড!
স্ত্রীর সাথে প্রতিবেশী যুবকের পরকীয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাসিন্দা ফখরুল। স্ত্রীর পরকীয়া করার জন্য প্রেমিক সাইদকে হত্যার জন্য আরেক প্রতিবেশীকে ভাড়া করেন আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে। টাকার বিনিময়ে শুধুমাত্র হত্যাই করা হয়নি ফখরুলের স্ত্রীর প্রেমিকা সাইদকে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটে আরও কিছু রোমহর্ষক কাহিনী ঘটান ফখরুল।
পাবনার হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা এখন ছড়িয়ে পরেছে এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছানের লেখা হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা সম্প্রতি পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে এ বিষয়টি শেয়ার করেছেন।
পুলিশ সুপারের শেয়ার করা স্ট্যাটাসে বলা হয়, তাই বলে মাথা কেটে ব্যাগে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। তাও আবার কয়েক দিন ধরে। কে সেই হতভাগা যার মস্তক দেহ থেকে ছিন্ন করা হলো। কেন কাটা হল মাথা? দেহের বাকি অংশ কোথায় গেল? কি ছিল তার অপরাধ? কারা করলো এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড? জানতে হলে ঘটনার ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।
দিনটি ছিল অক্টোবরের ৩০ তারিখ। সন্ধ্যার পর খাবার খাচ্ছিল আটি গ্রামের সাইদ। হঠাৎ একটা ফোন কল। সাইদের বউ কল রিসিভ করল। এরপর সাইদকে ফোনটা দিতেই সে তড়িঘড়ি করে বাইরে চলে গেল। তারপর কেটে গেল ১ মাস। ফোনটা বন্ধ। কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে গত ৪ ডিসেম্বর সাঁথিয়া থানায় নিখোঁজ হওয়ার জিডি করেন সাইদের বাবা মন্তাজ।
অন্য পাঁচটা সাধারণ ডায়েরির মতো এটিও এন্ট্রি করা হয়। এএসআই শওকতের ওপর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। জিডি হাতে পেয়েই ঘটনাস্থল অর্থাৎ জিডিকারীর বাড়িতে যান শওকত। সাইদের বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন। সন্দেহ করার মতো কিছুই মেলে না। কাঠমিস্ত্রির কাজ করতো সে। ঘরে বউ আছে। দিন আনে দিন খায়। তবে মাঝেমধ্যে ইয়াবা সেবন করতো বলে শোনা গেলেও স্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া গেল না।
এছাড়া আর কোনো তথ্যই শওকত পেল না। বারবার সে ঘটনাস্থলে যেতে লাগল। কিছুই মিলল না। কেউ কেউ বলল, হয়তো কোনো মেয়েকে নিয়ে ভেগে গেছে। কিন্তু, আশেপাশের পাঁচ গ্রামেও কোনো মেয়ে ভাগার কথাও শোনা গেল না।
জিডির ১০/১২ দিন পর শওকত আমার কাছে আসে। বিষয়গুলো বর্ণনা করে। আমি পুরো বিষয় শোনার পর শওকতের কাছে থাকা সাইদ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে থাকি।
একপর্যায়ে সাইদ ওদিন কাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল, একে একে তাদের খুঁজে বের করি। এক সময় নিশ্চিত হই, সাইদ যার ফোন কলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তার নাম রাজীব। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় রাজীব নিজেও একজন নেশাখোর। রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুঁজতে থাকি। কিন্তু সে কোনোভাবেই ধরা দেয় না।
ইয়াবা কেনার টোপ দিয়ে কৌশলে রাজীবকে আটক করে শওকত। আমার কাছে নিয়ে এলে সে সাইদের ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে বর্ণনা করে। কিন্তু একটু খোঁজ নিতেই জানা যায়, সাইদ নিখোঁজের দিন গভীর রাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলেছে রাজীব।
এরই মাঝে হঠাৎ আমার চোখে পড়ে, সাইদ নিখোঁজের ১৫/১৬ দিন পর তার ফোন সাময়িক সময়ের জন্য খোলা ছিল। যাদের সঙ্গে ওই সময় সাইদের ফোন থেকে কথা হয়েছে তাদের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে খোঁজ লাগাই।
কিন্তু দেখা যায়, তারা সবাই সাইদের নিকটাত্মীয়। তারা মাঝে মাঝেই ওই নম্বরে ফোন করে দেখত ফোন খোলা আছে কি না? আমি হতাশ হয়ে যাই। হঠাৎ আমার চোখে পড়ে সাইদ নিখোঁজ হওয়ার আগের ব্যবহৃত ফোন সেট আর পরের ফোন সেট আলাদা। আমার মনে এবার খটকা লাগে।
এরপর আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি সেকশনের সহায়তা নিই। জানার চেষ্টা করি, পরবর্তী ফোন সেটটি কে নিয়মিত ব্যবহার করে। তাতে পাশের গ্রামের শামীম নামের একজনের নাম উঠে আসে। এবার নতুন উদ্যমে রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। এর ফাঁকে শওকতকে লাগাই শামীমের পেছনে। খুব দ্রুতই শামীমের বিস্তারিত আমার কাছে চলে আসে। তখন রাজীবকে পুনরায় প্রথম থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। তাকে শামীমের কথা বলতেই সে ভয় পেয়ে যায়। সে বুঝতে পারে আমরা হয়তো কিছু টের পেয়েছি।
রাজীব জানায়, শামীম, রাজীব ও তার সহযোগীরা সাইদকে খুন করে। করমজা গ্রামের খয়ের বাগানের পাশে ইউক্যালিপটাস বাগানে পুঁতে রেখেছে। কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই সাঁথিয়া থানার পুরো টিমকে নিয়ে গভীর রাতে বাগানে গিয়ে তার দেখানো জায়গা খনন করি।
তবে মাটির নিচে একটি দড়ি, ছেঁড়া গেঞ্জির টুকরা ও জমাট বাঁধা রক্ত ছাড়া কিছুই পাইনি। এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার সশরীরে এসে পুরো বিষয়টি শোনেন এবং আমাদেরকে দিক-নির্দেশনা দেন।
সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু, বুঝতে পারছিলাম না রাজীব কেন সাইদকে হত্যা করবে। একপর্যায়ে রাজীব জানায়, মঙ্গলগ্রামের ফখরুল তাকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ভাড়া করে।
বিনিময়ে সাইদকে খুন করতে বলে। কিন্তু, কারণটা তখনও স্পষ্ট ছিল না। ওদিনই ফখরুলকে গ্রেফতার করা হয়। সে জানায় এক অভাবনীয় তথ্য।
ফখরুলের তথ্যমতে, গত দুই বৎসর ধরে পুরুষত্বহীন ফখরুল। এ জন্য তার স্ত্রী পরপুরুষের প্রতি ঝুঁকে যায়। তার স্ত্রী ষড়যন্ত্র করে তাকে জেলে পাঠায়। এরই ফাঁকে সাইদের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। জেলে বসেই সে এ খবর পায়। বাড়ি ফিরে সাইদকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। এলাকার উশৃঙ্খল ছেলে রাজীবকে ভাড়া করে।
এর মধ্যে রাজীব ৩০ তারিখ রাতে তাকে ফোন করে জানায়, সাইদকে শেষ করে ফেলা হয়েছে। ফখরুল প্রমাণ চায়। তখন রাজীব ও শামীম সাইদের কাটা মাথা এনে তাকে দেখায়। কয়েকদিন ওই কাটা মাথা ব্যাগে নিয়ে ঘুরেন ফখরুল। পরে আবার তা ফিরিয়ে দেয়।
এর প্রেক্ষিতে তাদের প্রাথমিকভাবে ১৯ হাজার টাকা দেয় ফখরুল। দুইদিন পর তার মনে সন্দেহ হয়। হয়তো কাটা মাথা সাইদের নয়। ফখরুল পুনরায় মাথা দেখতে চায়। শামীম ও রাজীব আবার মাথা নিয়ে গেলে অর্ধগলিত মাথা দেখে শনাক্ত করতে না পেরে বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় ফখরুল।
যখন এ কথাগুলো হচ্ছিল এরই ফাঁকে সাঁথিয়া থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সকলের সহায়তায় খুব কৌশলে শামীমকে এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আটক করে। শামীমের কাছে সাইদের ব্যবহৃত সিম না পেলেও যে ফোন সেটে সাইদের সিম ব্যবহৃত হয়েছিল তা উদ্ধার করা হয়।
শামীম জানায়, ধরা পড়ার আগে সিম ভেঙে নর্দমায় ফেলে দিয়েছে। সেও ইউক্যালিপটাস বাগানে গিয়ে মরদেহ পুঁতে রাখার স্থান দেখায়। অতিরিক্তভাবে সে দেখায় কোথায় মাথা কেটে এনে পুঁতে রাখা ছিল এবং দ্বিতীয় বার মাথা দেখানোর পর কোথায় মাথাটা ফেলে দেয়া হয়।
মাথাটা সে ফেলেছিল ফখরুলের বাড়ির অদূরে কচুরিপানাভর্তি ডোবার ভেতর। তার দেখানো মতে ডোবায় গতকাল লোক নামানো হয়। হাজার হাজার উৎসুক জনতার উপস্থিতিতে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন সাইদের কাটা মুণ্ডু ডোবার কচুরিপানার ভেতর থেকে উদ্ধার হয়।
পুলিশ সুপারের শেয়ার করা স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়, এর চেয়ে বেশি কিছু লেখা সম্ভব নয়। সব কথা তদন্তের স্বার্থে বলতে পারলাম না। গত দেড়টা মাস নানা জল্পনা-কল্পনার পর এ ঘটনার রহস্য ভেদ করতে পেরে ভালো লাগছে। তবে একেক জন আসামি শনাক্ত করা আর তাদের ধরা যে কত কষ্টসাধ্য, কতটা ব্যয়বহুল তা বলে বোঝাতে পারব না। এখনও অনেক কাজ বাকি। তদন্তের স্বার্থে সবটা প্রকাশ করছি না।
তবে, সকলের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজে দয়া করে সহায়তা করুন। সম্মানিত সাংবাদিক ভাইরা অনেক কিছু জানতে চান, বুঝতে পারি না যে, তথ্য দেবার সময় না এলে তথ্য দিলে আমার পুরো প্ল্যান ভেস্তে যাবে।
বাদীপক্ষের চাপ, একটা জিডি হলো পুলিশ কিছু করলো না। কিছু অবুঝ নাছোড় বান্দা জানতে চায় তদন্ত কোন দিকে এগোচ্ছে? সব মিলিয়ে আমাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। শুধু এতটুকু বলি, ‘আস্থা রাখুন- আমরা অবশ্যই নিরাশ করব না। এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন হবেই।’
বিডি২৪লাইভ/ এস এস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: