‘বেগম’ যখন জেলে!

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৯:৩০ পিএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এটা তার বিএনপির জন্য অধিকতর এক প্রতিকূল পরিস্থিতি। গণতন্ত্রের পরের ধাপটি হতে পারে আরো গুরুত্বপূর্ণ। এ দলটি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে অনায়াসলব্ধ বিজয় তুলে দেয় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ওয়াজেদের হাতে। 

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ‘জনগণের যথাযথ ম্যান্ডেটবিহীন’ একটি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। যদি আপিল করার পর খালেদা জিয়ার শাস্তি ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়, শুধু তাহলেই তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হবেন।

তাই আগামী নির্বাচনী লড়াইয়ের গতিপ্রকৃতি কি হবে তা নিয়ে অন্যরকম এক অনিশ্চয়তা রয়েছে। এতে নতুন করে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। তাতে সুশাসন ও খুঁড়িয়ে চলা অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই দীর্ঘায়িত অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তবে তত্ত্বগতভাবে ন্যূনতমভাবে বলা যায় যে, খালেদাকে দেয়া শাস্তি প্রমাণ করে বাংলাদেশে আইনের শাসন বিদ্যমান এবং কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। 

ওই মামলার রায় দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হয়েছে। বিএনপির কমান্ডের প্রতি তাদের সমর্থন আছে। মোটর সাইকেলে দৃশ্যমান হয়েছে অগ্নিসংযোগের বিষয়। এটা হলো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সিলেটে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন পাঁচ জন। আদালতের রায়ের পর পরই যে অস্থিতরতা সৃষ্টি হয় তা শান্ত করতে কর্তৃপক্ষ পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। মোতায়েন করে ৫০০০ পুলিশ সদস্য। এমনকি বাস ও ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। 

বিএনপি দাবি করছে বৃহস্পতিবার খালেদার বিরুদ্ধে দেয়া শাস্তি হলো রাজনৈতিক প্রতিশোধ। তবে ওই রায়ের মধ্যে এমন আলামত আছে কিনা তা আমরা জানি না। এটাই সত্য যে, তাদের নেতা জেলে গেছেন। এরপরের ৪৮ ঘণ্টা দলটি ছিল হালছাড়া। এতে ক্ষমতাসীন ‘বেগম’ হয়তো স্বস্তিতে মৃদু হেসেছেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি যে ভঙ্গুর তা আরো একবার প্রমাণিত হলো। 
বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি পয়েন্টে আসতে পারেন, তারা মনে করতে পারেন খালেদাকে শাস্তি দেয়ার ঘটনা নির্বাচনী কার্যক্রমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে। তবে শেখ হাসিনার প্রত্যাশার কাছে তা হতে পারে এক অপরিপক্বতা। কারণ, শেখ হাসিনা তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হতে চাইবেন। 

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের বিরোধীতাকারী ফ্যাক্টরগুলোর কথা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। বিশেষ করে ব্লগারদের ওপর আইসিস স্টাইলে হত্যাকাণ্ড এবং উগ্র ইসলামপন্থীদের উত্থানের বিষয় রয়েছে এর মধ্যে। এ ছাড়া আছে জামায়াতে ইসলামী। 

সারকথা হলো, আরও একবার নির্বাচন বর্জন করার সক্ষমতা রাখে না বিএনপি। তারা আরও একবার শেখ হাসিনার হাতে ‘আস্থাহীন বিজয়’ তুলে দিতে পারে না। খালেদা জিয়া কারাগারে থেকে দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা তাও তারা নিশ্চিত নন। এখন সব কিছু নির্ভর করছে আপিলের ওপর। তাই বর্তমান সময় ও ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্বল করা বিএনপির জন্য খুব সহজ কাজ নয়। (ভারতের দ্য স্টেটসম্যানের সম্পাদকীয়-এর অনুবাদ) সূত্র: মানবজমিন।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: