কারাগার থেকে নেতার্মীদের উদ্দেশ্যে যা বললেন খালেদা 

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৯:০৮ এএম

কারামুক্তির আগ পর্যন্ত নেতার্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিতে বলেছেন। কর্মসূচি চলার সময় কেউ যেন গাড়িতে একটি ঢিলও না ছুড়ে, সে ব্যাপারে নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কোনো অনুপ্রবেশকারী যাতে নাশকতা সৃষ্টি করে দলকে বেকায়দায় ফেলতে না পারে, সেদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। চেয়ারপারসনের এমন বার্তা সারা দেশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের শীর্ষ নেতাদের পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিটের নেতাকে তার কর্মীদের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া আন্দোলনের সময় কোথাও কোনো হামলা বা নাশকতার ঘটনা ঘটলে দলীয়ভাবে দ্রুত তদন্ত করে জনসম্মুখে তা প্রকাশ করতে হবে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা যুগান্তরকে এসব কথা বলেন। দলের সিনিয়র ওই নেতা বলেন, খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন কোনোভাবেই যেন আন্দোলন সহিংস রূপ না নেয়। কারণ সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাবে বিএনপিকে উসকে দেয়ার, কিন্তু তাতে আমাদের পা দেয়া চলবে না। এ খবর দিয়েছে দৈনিক যুগান্তর।

সূত্র জানায়, ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর শনিবার বিকালে দলের নীতিনির্ধারকরাসহ ৫ আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। দলের ভবিষ্যৎ করণীয় ও তার মুক্তির ব্যাপারে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে সূত্রটি জানায়। আগামী দিনের আন্দোলনে করণীয় সম্পর্কে আইনজীবীদের মাধ্যমে কিছু নির্দেশনা পাঠান দলের চেয়ারপারসন। শনিবার সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে চেয়ারপারসনের গুরুত্বপূর্ণ এ বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়।

এরপর স্থায়ী কমিটির নেতারা বসে নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। চেয়ারপারসনের নির্দেশেই মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও অনশনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলকে কেন্দ্র করে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। নেতাকর্মীরা সক্রিয় হচ্ছেন। তারা রাজপথে নেমে আসছেন। তারা আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে চলে আসছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আন্দোলন ইস্যুতে কথা বলছেন। তাদের এ সক্রিয়তা ও চাঙ্গাভাব আগামী আন্দোলন ও নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন রাজপথমুখী।

আগে যেখানে তাদের নামানোই যেত না, এখন তারা পথে নামছেন। একসময় তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রের অনেক নেতার প্রতি অভিযোগের আঙুল তুলতেন। কেন্দ্র থেকে দায় চাপানো হতো অন্যদের ওপর। অনেক দিন থেকেই এভাবে পাল্টাপাল্টি চলছিল। কিন্তু দলের চেয়ারপারসনের কারামুক্তির দাবিতে সবাই আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামছেন। পালিয়ে থাকা, দায় চাপানো বা অভিযোগ করার প্রবণতাও কমছে। নেতাকর্মীরা বুঝতে পারছেন তাদের রাজপথে নামার বিকল্প নেই।

এছাড়া চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের নির্বাচনী প্রচারের কাজ সমানতালেই চলছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে যে কর্মসূচি পালন হচ্ছে, তার প্রতিটিতেই জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসছে। সবাই বলছেন, চেয়ারপারসনকে নিয়ে তারা নির্বাচনে যাবেন। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশি তৎপর। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দল সম্পর্কে ভালো বার্তা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দলটি যে ইতিবাচক, সে খবরও যাচ্ছে দেশবাসীর কাছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসনের কারামুক্তি ছাড়া এ মুহূর্তে আমরা কিছু ভাবছি না। তার কারামুক্তির আগ পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাব। এ ব্যাপারে চেয়ারপারসনসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নেত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমরা হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচিতে যাব না। নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের যে প্রতিবাদ চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনুপ্রবেশকারীরা যাতে নাশকতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চেয়ারপারসনের কারামুক্তিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা আরও ঐক্যবদ্ধ। সাধারণ মানুষকে এ আন্দোলনের সঙ্গে একা করতে সারা দেশের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের চাঙ্গাভাব ও সক্রিয়তা নিঃসন্দেহে আগামী দিনের নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলন বা নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছে। এটি জনগণ মেনে নেয়নি। ফলে এ ইস্যুতে আমরাই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হব।

এদিকে চেয়ারপারসনের কারামুক্তিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্র্মীরা আগের চেয়ে অনেকটা সক্রিয়। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে এসেছেন। দীর্ঘদিন যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে যাদের দেখা যায়নি, তারাও এখন রাজপথে। রোববারের মানববন্ধন ও সোমবারের অবস্থান কর্মসূচিতে এর প্রমাণ মেলে। ঢাকায় সমাবেশ ছাড়া অতীতে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে এত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। নেত্রীর মুক্তির দাবিতে সিনিয়র নেতাদেরও রাজপথে মিছিলের অগ্রভাগে দেখা যাচ্ছে। শুধু কেন্দ্র নয়, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এ ইস্যুতে রাজপথে। ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে তারা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। গ্রেফতার হতেও ভয় পাচ্ছেন না। সবমিলিয়ে দল বেশ চাঙ্গা হচ্ছে। কারামুক্তির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য আরও দৃঢ় হয়েছে। এ ইস্যুতে তারা প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সরকারবিরোধী জনমত তৈরি করতে পারছেন। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এ কর্মসূচির ফলে নেতাকর্মীদের এ চাঙ্গাভাব আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের নতুনভাবে মাঠে নামতে হবে না।

জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার যুগান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এমন কর্মসূচি দেয়া যাবে না, যাতে জনগণের জানমালের ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া আরও অনেক বেশি জনপ্রিয়, তা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। নেতাকর্মীরাও তার মুক্তির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। চেয়ারপারসনের জনপ্রিয়তা ও নেতাকর্মীদের ঐক্যকে পুঁজি করে আাগামী নির্বাচনে গেলে তা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী যুগান্তরকে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে চেয়ারপারসনের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি। এতে জনগণের সমর্থনও আমরা পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে প্রতিদিন পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। কোনো কারণ ছাড়াই লাঠিচার্জ করছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাশকতার জন্য আমাদের উসকানি দিলে আমরা সেদিকে পা দিচ্ছি না।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: