যশোর ৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যারা

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৩:২৭ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আবারও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে দেশের রাজনীতির হাওয়া। নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে মত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন সব দলের নেতাকর্মীরা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় যশোরের ৬টি আসনই এখন ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। তা উদ্ধারে তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে যশোর জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে বলে জানান জেলা বিএনপির নেতারা।

স্থানীয় বিএনপি সূত্র মতে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যিনি দল থেকে এ আসনগুলোতে মনোনয়ন পাবেন তিনিই হবেন বিএনপি’র কান্ডারি এবং তাকে কেন্দ্র করে হারানো অবস্থা ফিরে পাবে এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করবে। তাই এ সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চান বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

মনোনয়ন দৌড়ে ৬ আসনেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে সে ক্ষেত্রে জেলার একাধিক আসন শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। এর আগে তেমনটিই দেখা গেছে।

যশোর-১ (শার্শা উপজেলা)

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-৮৫। জেলার সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি ২০০৮ সালে শরিক দল জামায়াতকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। বিএনপি যদি এবারও জামায়াতকে ওই আসন ছেড়ে দেয় সেক্ষেত্রে প্রার্থী হবেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আজিজুর রহমান। তবে এবার যশোর-১ আসনে মনোনয়ন পেতে বেশ আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা। তারা কর্মীদের পক্ষে টানছেন, চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগও।

এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক মহসীন কবীর, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুজ্জামান মধু, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির ও জেলা বিএনপি নেতা ও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওসমান গণি। তবে কেন্দ্রের সাথে ভালো সম্পর্ক, এলাকার উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড ও নেতাকর্মীদদের দুর্দিনে পাশে থাকায় মফিকুল হাসান তৃপ্তি অথবা ওসমান গণিকেই আগামী দিনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে দেখতে চায় এলাকাবাসী।

যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা)

জেলার দু’টি সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিকরগাছা ও চৌগাছা নিয়ে জাতীয় সংসদের-৮৬ আসন গঠিত। এ আসনে ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলায় ২২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা। আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা-নেত্রী। তারা হলেন- ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নি। চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। আর পুরোনোদের মধ্যে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাকও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে এ আসনটিও ইতিপূর্বে জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার রেকর্ড রয়েছে বিএনপির। সেক্ষেত্রে এ আসন থেকে জামায়াতের সাবেক এমপি মুহাদ্দিস আবু সাঈদ নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

যশোর-৩ (সদর উপজেলা)

ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা শহর যশোর। ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে জাতীয় সংসদের আসন ৮৭ গঠিত। বসুন্দিয়া ইউনিয়ন ছাড়া সদর উপজেলার বাকি অংশ নিয়ে গঠিত জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি। কারণ এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো জেলার রাজনীতি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম বরাবরই এ আসন থেকে নির্বাচন করে থাকেন। বর্ষীয়ান এই নেতা শুধু যশোর নয়, খুলনা বিভাগে তাকে বিএনপির কাণ্ডারি মনে করে থাকেন দলের নেতাকর্মীরা। ফলে তরিকুল ইসলাম এবারো নির্বাচনে অংশ নেবেন।

ফলে এ আসন থেকে বিএনপির আর কেউ দলীয় টিকিট চাইবেন না। এ আসনে বিএনপির বেশ কয়েকজন যোগ্য ও উদীয়মান তরুণ নেতা রয়েছেন। তারা দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তরিকুল ইসলাম অসুস্থতাজনিত কারণে প্রার্থী না হলে তার স্ত্রী নার্গিস বেগম অথবা পুত্র বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। এছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাবেরুল হক সাবু এ আসনে বেশ আলোচিত নাম। ৯০ এর ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বর্তমান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুকেই আমাগীতে তরিকুল ইসলামের ভূমিকায় দেখতে চান এলাকাবাসী।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা এবং সদরের একাংশ)

সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন এবং বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের আসন ৮৮। এ আসনে প্রার্থী নিয়ে তেমন জটিলতা নেই। বিএনপির অংশ নেয়া সর্বশেষ নির্বাচনে এ আসন থেকে দলটির মনোনয়ন পেয়েছিলেন বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টিএস আইউব। এবারো যে তিনি মনোনয়ন পাবেন তা প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া এ আসন থেকে অভয়নগর থানা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফারাজীও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে।

যশোর-৫ (মনিরামপুর উপজেলা)

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা যশোরের মনিরামপুর। ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। এই উপজেলার পুরোটা নিয়ে যশোর-৫ আসন। এই আসনটিও বরাবরই বিএনপি শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেয়। এবারো শরিকদের জন্য ছাড়লে এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব সাবেক এমপি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তবে এবার এ আসন থেকে দলীয় টিকিট পেতে আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মরহুম আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু। এ আসন থেকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মুসা ও মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবালও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ আসনটিতে রয়েছে জামায়াতের শক্ত অবস্থান। জামায়াতের নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে।

যশোর-৬ (কেশবপুর উপজেলা)

কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৬ আসন। এখানে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন দু’জন। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তরুণ নেতা অমলেন্দু দাস অপু এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পাশাপাশি চালাচ্ছেন গণসংযোগও।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: