খালেদার মামলায় হাইকোর্টে আপীল গ্রহণ, এরপর কি হবে?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ঢাকার মাননীয় বিশেষ জজ আদালত-৫ মোঃ আখতারুজ্জামান দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় অপরাধের জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। বিগত ৩রা জুলাই ২০০৮ ইং তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সর্বমোট ৬ জনকে আসামি করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন।
রায়ের ১১ দিন পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রায়ের সার্টিফাইড কপি (নকল) পাওয়া যায় এবং ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পক্ষে বিশেষ জজ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২২শে ফেব্রুয়ারি) মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি শহিদুল করিম এর একটি ডিভিশন বেঞ্চ উভয়পক্ষের শুনানীতে আপিলটি গ্রহণ করেন এবং আগামী ২৫ শে ফেব্রুয়ারী (রবিবার) জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। মহামান্য হাইকোর্ট এই মামলায় অর্থদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ আরোপ করেন।
আপীল দায়েরের পরবর্তী ধাপসুমূহ:
যেকোনো আপীল দায়েরের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে আপীল গ্রহণযোগ্যতা শুনানী। মহামান্য আদালত আপীলে দুইপক্ষের যুক্তি শ্রবণপূর্বক আপীল গ্রহণ অথবা খারিজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সাধারণত আপীল গ্রহণের আবেদনের সাথে জামিনের দরখাস্ত একই সাথে আদালতে শুনানি হয় এবং নিন্ন আদালতের দণ্ডাদেশ ও জরিমানার উপরে স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করা হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের এবং ধারা ৪২৩ এ আপীল আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কে বলা আছে।
এক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন যে ৪১০ ধারায় যদিও বিশেষ জজ আদালতের কথা উল্লেখ নেই।কিন্তু সেশন কোর্টের ন্যায় বিশেষ জজ আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হয়। সেক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন (সংশোধনী) অ্যাক্ট, ১৯৫৮ এর ধারা ১০ বিশেষ জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল সম্পর্কে বিধান রয়েছে।
যেহেতু মহামান্য আদালত আপীলটি গ্রহণ করেছেন এখন আগামী ২৫ শে ফেব্রুয়ারী জামিনের দরখাস্তের উপর শুনানি হবে। শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর যেকোনো আদেশ দিতে পারেন।
মহামান্য হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করলে পরবর্তী ধাপ:
মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের যেকোনো আদেশে সংক্ষব্ধ পক্ষ সেই আদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে মহামান্য আপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালতে যেতে পারেন। সেক্ষত্রে যদি জামিন মঞ্জুর করা হয় তাহলে রাষ্ট্রপক্ষ/দুদক আর জামিন নামঞ্জুর হলে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সেই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আপীল করতে পারবেন। তবে মহামান্য আপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালত নিজে থেকেই শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাজ্ঞ বেঞ্চে প্রেরণ করতে পারেন।
চেম্বার জজ আদালতের আদেশের পরবর্তী ধাপ:
চেম্বার জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আপীল করতে হয়। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ জামিন আবেদন শ্রবণপূর্বক জামিন মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর করতে পারেন। যেহেতু মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুতরাং যদি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ জামিন মঞ্জুর করেন তবে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্ত হওয়ার আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে বলে রাখা ভালো যেকোনো পক্ষ চাইলে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের আদেশের বিরুদ্ধে ‘রিভিউ পিটিশন’ দায়ের করতে পারেন এবং সেক্ষত্রে সর্বোচ্চ আদালত পূর্ববর্তী আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।
উদ্ভুত অবস্থায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কিনা?
সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
যদিও বিচারিক আদালত বেগম খালেদা জিয়া কে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন কিন্তু যেকোনো মামলায় যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করেন সেই পর্যন্ত মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয় না। সুতরাং যদি বিচারিক আদালতের রায় আপিল আদালত (মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন) স্থগিত করে আপিলের জন্য গ্রহণ করে এবং আগামী নির্বাচনের আগে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সেই আপীল নিস্পত্তি হয়ে বেগম খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত না হয় অথবা আপিলটি আগামী নির্বাচনের আগে নিস্পত্তি না হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এই অনুচ্ছেদের আওতায় অযোগ্য হবেন না। সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।
লেখক: মোঃ এ. এইচ. ইমাম হাসান
ব্যারিস্টার -এট- ল্ (লিংকনস ইন, ইউকে),
এ্যাডভোকেট, সুপ্রিমকোর্ট অফ বাংলাদেশ,
লেকচারার, লন্ডন কলেজ অফ লিগাল স্টাডিজ (সাউথ)।
বিডি২৪লাইভ/এমআই
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: