‘যদি আমাকে ফেরত পাঠায়, কোন মুখে বাড়ি ফিরবো?’
দরিদ্র পরিবারের সন্তান, বিদেশে গিয়ে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন এমনটাই ছিল তার লক্ষ্য। পরিবারও আশায় বুক বেঁধে ছিল।
এতক্ষণ বলছিলাম গাজীপুর জেলায় জহিরুল ইসলামের কথা। ২৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কাজের সন্ধানে, কিন্তু তার খোঁজ মেলে চার বছর পর।
উন্নত জীবনের আশায় ২০১৩ সালে তিনি সমুদ্র পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানো হয়নি তার। সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া।
সবশেষে পাপুয়া নিউ গিনির এক ক্যাম্পে ঠাঁই হয় তার। সেখানে কেটে যায় জীবনের চারটি বছর। পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি এই চার বছরের বেশির ভাগ সময়।
জহিরুল ইসলাম বলেন, এপর্যন্ত তার ১০ লখেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। দেশে জমি-জমা বিক্রি করে, ঋণ করে তিনি সেই টাকা জোগাড় করেন। তিনি যে বেঁচে আছেন দীর্ঘদিন তা জানাতে পারেননি তার পরিবারকে। এই সময়ের মধ্যে আমার বাবা মারা যান। কিন্তু আমি সেই খবর পেয়েছি অনেক পরে। কারণ আমার পরিবার জানতো না যে আমি বেঁচে আছি কিনা।
তিনি জানান, দালালের মাধ্যমে তিনি কাগজপত্র করেছিলেন বিদেশে যাওয়ার। পদে পদে তাকে অর্থ দিতে হয়েছে কখনো গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য, আবার কখনো আবার কাজ পাইয়ে দেবার জন্য। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কিংবা কাজ কোনটাই হয়নি তার।
অস্ট্রেলিয়া পৌঁছানোর পর তিনি দেখতে পান তারই মত আরো অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন সেখানে, যারা কাজের খোঁজে যেয়ে আটকা পরেছেন।
এরপর অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ এই বাংলাদেশিদের প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ পাপুয়া নিউ গিনির একটি অভিবাসী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।
নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেসব আশ্রয়প্রার্থী অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করে তাদের পাপুয়া নিউ গিনিতে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে দু'দেশের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে।
এই অভিবাসী শিবিরে জহিরুল ইসলামের মতো আটক অভিবাসীদের বলা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অন্য কোন দেশে পাঠানো হবে।
কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও একরকম নজরবন্দীর মধ্যে জীবন পার করতে হচ্ছে তাকেসহ আরো অনেক বাংলাদেশিকে। আটক থাকার কারণে কোন কাজের সুযোগ ছিল না। হাতে তাই টাকাপয়সাও নেই।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র তাদের ক্যাম্পেই এই মুহূর্তে রয়েছেন ১২ জন বাংলাদেশি। অন্যান্য ক্যাম্পে আরো বাংলাদেশি আছেন। অতি সম্প্রতি দু'জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
হতাশা ঝড়ে পড়ছিল জহিরুল ইসলামের কণ্ঠে বলেন, টাকা-পয়সা ধার করে এখানে আসছি, একটা টাকাও ইনকাম করতে পারিনি। অমানবিক কষ্ট সহ্য করেছি। বাবা মারা গেছে, কিন্তু তাকে দেখা তো দূরের কথা, খবর পেয়েছি অনেক দিন পর। এখন যদি আমাকে ফেরত পাঠায়, তাহলে কোন মুখে বাড়ি ফিরবো?
কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের অনেকেই বলছেন, তাদের যদি অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে কিছু অর্থ তারা পরিবারের কাছে পাঠাতে পারবেন। এতে অন্তত ঋণের টাকাগুলো তারা শোধ করতে পারবেন। বিবিসি
বিডি২৪লাইভ/এএইচআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: