ভয়াল স্মৃতি নিয়ে ফিরলেন ওরা

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৮, ১০:৫৪ এএম

পর্বতের দেশে ঘুরতে গিয়ে দুঃসহ ভয়াল স্মৃতি নিয়ে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে আহত তিনজনকে দেশে আনা হয়েছে। এ নিয়ে গুরুতর আহত চারজনকে দেশে আনা হলো। একই পরিবারের দু’স্বজনকে হারিয়ে এই তিন সদস্য দেশে ফিরলেন । গতকাল বিকাল সোয়া তিনটায় বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০৭২ নম্বর ফ্লাইটে তারা ঢাকায় আসেন। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাদের ওই হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকালে আসা শাহরিন আহমেদও একই হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন- গাজীপুরের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান মাসুম, তার স্ত্রী সৈয়দা কামরুন্নাহার স্বর্ণা ও মাসুমের ফুফাত ভাই প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানি।

সোমবার মামাতো-ফুফাতো ভাই ফারুক হাসান প্রিয়ক ও মাসুমের পরিবারের ৫ সদস্য নেপাল ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে ওই তিনজন আহত হয়ে দেশে ফিরলেও অ্যানির স্বামী প্রিয়ক ও তার শিশু সন্তান প্রিয়ন্ময়ী তামান্না না ফেরার দেশে চলে গেছে। তা এখনও জানানো হয়নি অ্যানিকে। তাকে জানানো হয় স্বামী সন্তানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। তাদের গ্রহণ করতে গতকাল বিকালে বিমানবন্দরের ৮নং গেটে ভিড় করেন স্বজনরা।

মেহেদী হাসানকে গ্রহণ করতে যান তার পিতা তোফাজ্জল হোসেন, অ্যানির পিতা সালাহ উদ্দিন মাহমুদ খসরু ও স্বর্ণার পিতা সৈয়দ হাজী আবুল হোসেনসহ আত্মীয়স্বজন দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেন। সেখানে ছুটে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী কেএম শাহজাহান কামাল।

গতকাল সকাল থেকে তাদের দেশে আনার প্রস্তুতি চলে নেপালে। হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেয়া হয় বিমানবন্দরে। সেখান থেকে দুপুরের পর বাংলাদেশ বিমানে তুলে দেয়া হয় তাদের। বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০৭২ ফ্লাইটের ১সি নম্বর সিটে স্বর্ণা, ১এ নম্বর সিটে হাসান ও ১ডি নম্বর সিটে বসানো হয় অ্যানিকে। বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমানটি। এরপর তাদের আবারও তোলা হয় অ্যাম্বুলেন্সে। বিকাল ৩টা ৫৭ মিনিটে তাদের বহন করা অ্যাম্বুলেন্স তিনটি বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়। এর আগেই তাদের কয়েক স্বজনকে ইউএস-বাংলার কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে যান। তারাও অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে আসেন। বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্স বের হওয়ার পর দু’মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও শাহজাহান কামাল তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর আহতদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অ্যাম্বুলেন্স তিনটি। সঙ্গে ছিলেন স্বজন ও ইউএস-বাংলার কর্মকর্তারা।

এরপর সেখানে উপস্থিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী কেএ শাহজাহান কামাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বজনরা বেদনার মধ্যে রয়েছেন। বেঁচে থাকা বিমান যাত্রীদের স্বজনরা তাদের সুচিকিৎসা চান। আর যারা মারা গেছে তাদের লাশ দ্রুত পেতে চান। আগে একজন এসেছেন। এখন তিন জন আসলেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদের দেশে ফিরয়ে আনা হবে। 
নেপালের সরকার প্রধান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। আর লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য দ্রুততার সঙ্গে ডিএনএ টেস্ট করা হবে। এ কাজে আমাদের একটি চিকিৎসক টিমও সেখানে রয়েছে। চিকিৎসা ও লাশ আনার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জীবনের তো কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। তবে নিহত যাত্রীরা বীমার ৫০ হাজার ডলার মতো নিয়ম অনুযায়ী পাবেন। আর চিকিৎসার ব্যয়ভার ইউএস-বাংলা বহন করার কথা দিয়েছে। তারা যদি তাতে সক্ষম না হন তাহলে সরকার ব্যয় বহন করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী কেএম শাহজাহান কামাল বলেন, এই দুর্ঘটনার পর আমি নেপাল যাই। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল দূরে। এখানে সেখানে ছোটাছুটি করেছি। আমাদের এখান থেকে বার্ন, অর্থোপেডিকস ও ফরেনসিক চিকিৎসক দল গেছে। তারা চিকিৎসা ও ময়নাতদন্তে সহায়তা দিচ্ছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান বলেছেন, আমরা যেভাবে চাই তারা সেভাবেই সহযোগিতা দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, যেসব মৃতদেহ দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না, সেগুলোর ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে। প্রোফাইলিংয়ের জন্য এসব মৃতদেহের দাঁত, চুল, নখ বা পোশাকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বলেন, নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনরা চান, সবার মৃতদেহ একসঙ্গে পাঠানো হোক। সেজন্য সবার লাশ একসঙ্গে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী রোববার ঢাকার সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে গিয়ে নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনদের যোগাযোগের জন্য অনুরোধও করা হয়। নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত সোমবার ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৫১ জনের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি।

দুই যাত্রীর স্বজনদের খুঁজছে নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাস: ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে মৃত উদ্ধার হওয়া দু’জনের কোনো স্বজন নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেনি। এ দু’যাত্রীর নাম বিলকিস আরা ও পিয়াস রায়। তাদের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময়কার ছবি সংগ্রহ করেছে দূতাবাস। দুর্ঘটনার পর থেকে ওই দুই যাত্রীর কোনো স্বজন তাদের খোঁজে যায়নি। বাংলাদেশি এই দুই যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও ছবি প্রকাশ করে তাদের স্বজনদের যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের হেড অব চ্যান্সেরি আল আলিমুল ইমাম।

তিনি নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বলেন, যাত্রীদের একজনের নাম বিলকিস আরা ও অপরজনের নাম পিয়াস রায়। দুজনের ব্যাপারে দূতাবাসে কেউ কোনো যোগাযোগ করেননি। তিনি এই যাত্রীর স্বজনদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। পিয়াসের বাড়ি বরিশালে বলে জানা গেছে। গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে শেষ বর্ষে পড়তেন। তবে বিলকিস আরার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সূত্র: মানবজমিন

বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: