ইন্টারনেটে ভিডিও ভাইরাল, চার দেয়ালে বন্দী জীবন
তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে ইন্টারনেটের প্রসারে মানুষ পুরো পৃথিবীকে তাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি মানুষের জীবনকে করে তুলেছে সহজ ও স্বস্তিদায়ক। মানুষ এখন ইচ্ছা করলেই ঘরে বসে অনেক কিছু করতে পারছেন।
তবে এ ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও এর শিকার হয়ে অনেক মানুষের জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে, ধ্বংস হচ্ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও এ যাবৎ বহু মানুষকে আত্মহত্যা পথ বেঁচে নিতে বাধ্য করেছে, কেউ কেউ এ ঘটনায় লোক লজ্জার কথা ভেবে নিজেই আত্মহত্যা করেছে, কেউ কেউ আবার এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় চার দেয়ালের মাঝে বন্দী জীবন যাপন করছেন।
এই তো কিছুদিন আগে নেট দুনিয়ায় এক তরুণীর একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। সেই ভিডিওটিতে প্রেমিকের সঙ্গে ওই তরুণীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য দেখেছে সকলেই। এই যুগল জুটির ৪ মাসের সম্পর্কের সময়টাতে কিছু মধুর সময় ছিল। প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় ওই তরুণীর ওপর ক্ষেপে গিয়ে নেট দুনিয়ায় ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয় তার প্রেমিক। যা মেয়েটির আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছে পৌঁছে যায় ক্ষণিক সময়ের মধ্যেই। এরপর লোকলজ্জায় দীর্ঘদিন চার দেয়ালের মাঝেই কেটেছে তার। পরিশেষে পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে লড়াই করে, চারিপাশের মানুষগুলোকে আর মুখ দেখাবে না বলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই তরুণী। এখানেই থেমে যায় বা নিঃশেষ হয়ে যায় একটি জীবন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসেও রিমি নামের এক তরুণীর ভিডিও প্রকাশ হয় ইন্টারনেটে। ভালোবেসে বিয়ে করবে এই ভেবে প্রেমিক সোহেলকে বিশ্বাস করে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। এখানেই থেমে থাকেন নি, প্রেমিক সোহেলের অনুরোধে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণেও আপত্তি করেন নি রিমি। কিন্তু ভন্ড প্রেমিক সম্পর্ক ভাঙার পাশাপাশি ওই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেয়। ওই সময়টাতে রিমির জীবনে নেমে আসে এক অন্ধকার অধ্যায়। এ ঘটনায় রিমি অবশ্য আত্মহত্যা করেনি। সে বারবার নিজেকে শেষ করে দিতে গিয়েও পারেনি। কিন্তু বেঁচে থাকলেও, সে নির্থর দেহের মতোই বেঁচে আছে। বলা যায়, চার দেয়ালের মাঝেই থেমে গেল রিমির জীবন।
সোহানার জীবনের গল্প উপরের দুটি ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। অন্য আর সকল মেয়ের মতো বিয়ে হয় সোহানার। বিয়ের ৪ বছর পর স্বামীকে না জানিয়ে সাবেক প্রেমিক নাহিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠে তার। এরপর হঠাৎ করেই সোহানার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। প্রথমদিকে মাসে এক-দুই দিন মেলামেশার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর থেকে তাদের মেলামেশা গড়ে উঠে সপ্তাহে দু’দিন করে। এরই ধারাবাহিতায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ায় সোহানা। এ সময় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণও করে তারা।
এদিকে স্বামীর প্রতিও অবহেলা দিনদিনকে বাড়তে থাকে সোহানার। এমন সময় সোহানা তার প্রেমিক নাহিদকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু প্রেমিক নাহিদ তাতে অস্বীকৃতি জানায়। এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তাদের মধ্যে। এখানেই শেষ নয়। সোহানার সঙ্গে কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সেই ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সে। নেট দুনিয়ায় এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার দু’দিনের মধ্যে সেটি পৌঁছে যায় সোহানার স্বামীর হাতে। এরপর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় সোহানার।
এ ঘটনার কয়েকদিন পরেই সোহানা জানতে পারে প্রেমিক নাহিদকে বিয়ে না করায় প্রতিশোধ নিতেই সে আবার প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আর সেসব ভিডিও প্রকাশ করে। এ ঘটনার পর থেকে সোহানা তার বাবার বাড়িতেই থাকে। বলা যায়, থেমে গেছে তার জীবন। না পারছে স্বামীর সংসার করতে, না পারছে কাউকে মুখ দেখাতে।এখন চার দেয়ালের মাঝে স্বেচ্ছায় একাকী জীবন কাটছে তার।
দেশে বর্তমানে এমন ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশে অনেক জীবন থেমে যাচ্ছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা ও লোকলজ্জার ভয়ে আইনের সহায়তা নিচ্ছেন না অনেকেই। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৯-এ বলা আছে, কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন কিংবা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। আর এ ধরনের অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডিত হবেন।
এ রকম ঘটনায় মানসম্মানের ভয়ে অনেকে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েও থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। ফলে অনেক ঘটনাই বিচারের আওতায় আসছে না আর যেগুলো আসছে, সেগুলোরও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায় না।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এক্ষেত্রে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: