প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন ঘাঘড়া লস্কর খান জামে মসজিদ

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০১৮, ০৫:৩১ এএম

প্রায় সোয়া দু’শ বছরের পুরনো স্থাপত্য শেরপুরের ঘাঘড়া ‘লস্কর খানবাড়ী' জামে মসজিদটি আজো টিকে আছে কালের সাক্ষ্যি হয়ে। মসিজদটি অক্ষত অবস্থায় থাকলেও জাতীয় যাদুঘর প্রত্নতত্ত বিভাগের সঠিক পরিচর্যার অভাবে তা ভংগুর দশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবসী অভিযোগ করেন। 

এই মসজিদটি'র বাইরে থেকে বিশাল আকার দেখা গেলেও ভিতরে খুব বেশী বড় নয়। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি জানালা। মসজিদের ভিতর ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১২ জন করে মোট ৩৬ জন মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ বারান্দায় আরো প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

মসজিদের আকার বা পরিধি যাই হোক না কেন মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করার সময় নিজেকে মনে হয় দু’শ বছর পেছনে চলে গেছি। কেমন জানি এক অদ্ভুত অনুভূতি। নিজে উপস্থিত হয়ে নামাজ না পড়লে বিশ্বাস করানো বা বোঝানো সম্ভব নয়।

স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘খানবাড়ী’র মসজিদটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এ মসজিদের নাম ঘাগড়া লস্কর খান মসজিদ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। শেরপুর জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নির্দশন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারনা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। আজিমোল­াহ খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। 

মসজিদটির দরজার উপর মূল্যবান কষ্টি পাথরের উপর খোদাই করে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল উলে­খ করা হয়েছে হিজরি ১২২৮ বা ইংরেজী ১৮০৮ সাল। মসজিদটির গঠন পদ্ধতি  ও স্থাপত্য কৌশল শিল্প সমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য। এর ভিতরে রয়েছে দুটো সুদৃঢ় খিলান। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি বর্গাকার। যার দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট প্রস্থও ২৭ ফুট উভয়দিকই সমান। 

মসজিদের মাঝখানে বড় গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ছোট-বড় বারটি মিনার। এর মধ্যে চার কোণায় রয়েছে চারটি। মসজিদে দরজা রয়েছে মাত্র একটি। ভিতরে মেহরাব ও দেয়াল অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানী ও ফুল। মসজিদের দেয়ালের গাথুনী ৪ ফুট পাশ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাথা। তৎকালীন খান বাড়ীর লোকজনসহ গ্রামের অনেকে ৫৮ শতক জায়গার উপর মসজিদটি ওয়াকফ করে দেন। এরমধ্যে মসজিদটির মূলভবন ও বারান্দা রয়েছে ১৭ শতকের উপর এবং ৪১ শতকের উপর জমিতে রয়েছে কবরস্থান।

প্রায় দুই যুগ আগে মসজিদের সর্বশেষ ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি হলেও ওই কমিটি’র সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান অনেক আগেই মৃত্যু বরণ করেন। তার স্থলে কাউকে আজও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বা নতুন কোন কমিটি গঠন করা হয় নি। বর্তমানে কামরুজ্জামান খান এবং কোষাধক্ষ্য মামুন খান পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন। 

মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় কাজ বা কোন সিদ্ধান্ত তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। তবে জরুরী কোন বিষয়ে কোন কাজ স্থানীয় অন্য সদস্যরা করে থাকেন বলে ওই কমিটির সদস্য ও খান বংশের সদস্য খোরশেদ আলম খান জানান। স্থানীয় একাধিক গ্রামবাসী জানান, মাঝে মধ্যে ঢাকা জাতীয় যাদুঘর প্রত্নতত্ত বিভাগের লোকজন এসে মসজিদের ধোয়া মোছা এবং সংস্কার কাজ করে গেলেও তা দায়সারা ভাবে করা হয়।

গত প্রায় ১৫ বছর আগে জাতীয় যাদুঘর এর প্রত্নতত্ত বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব গ্রহন করেন। কিন্তু একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ, একটি সতর্কবাণী লাগানো ও দায়সারা ভাবে বছরে একবার রং করা ছাড়া আর কোন ভূমিকা পালন করেনি। 

মসজিদটির মেঝে দেবে যাচ্ছে, দেয়ালে ফাটল ধরছে। দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে কালের এ নীরব সাক্ষী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা আশংকা প্রকাশ করছেন।


বিডি২৪লাইভ/এমআরএম


 


 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: